শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদ সংখ্যা

একগুচ্ছ পদাবলি

প্রকাশের সময় : ৩১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:০০ এএম, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আল মাহমুদ

একেলা

একটি কবিতা এনেছে আমায় ঘরের বাইরে
চেয়ে দেখি আমি দিকবিদিকে কিছুই নাইরে
নাইয়ের মধ্যে যদি আমি থাকি পাবনা কিছুই
সাহস আমাকে দিচ্ছে সাহস, হাতটি বাড়াও
ছোও তাকে ছোও

ছুতে গিয়ে দেখি তুমি কেহ নও
নও তুমি কেউ, চারদিকে বয় ইথারের খেলা
কেউ যদি হও আমাকেই লও, মেলা ভাঙার ঠেলা
খেয়ে চলে যাবো সুদূরে কোথাও
আমাকে ভাসাও
আমাকে উঠাও আমাকে নামাও
ভালোবাসার ধরাছোঁয়া খেলা

এইতো সকলই দুই পায়ে দলি, এসেছি এখানে
জীবনের গান গেয়ে চলে যাবো
তড়িৎ প্রবাহ তরঙ্গের ঢেউ
জীবনের খেলা, ঠেলা খেয়ে বেলা
নামছে অস্ত গমনের বেলা
আমিতো একেলা।

 


জামালউদ্দিন বারী
মন্ময়ী

আমার অস্তিত্বের অন্দরে
রূপকথার স্বচ্ছজল পদ্মপুকুর
তার অতল গভীরে এক দুর্ভেদ্য সিন্দুক
তার ভেতর ছিঁপিবদ্ধ কৌটায়
এক অলীক ভ্রমরের গুঞ্জরণের মত
টের পাই তোমার অবিনাশী অস্তিত্ব।

আমার ভেতরে তুমি আছ
আমার নাগালহীন অধরা চিরদিন,
তুমি অবিরাম ছটফট
সুতীব্র পাখনার গান শোনাও-
আর আমি তোমার বন্দীত্বের বোবা আর্তনাদ
যান্ত্রিক গীটারের মতন
বিভঙ্গে কম্পনে কম্পনে ভাসিয়ে দেই ইথারে ইথারে।

ফজল শাহাবুদ্দীন
নিমগ্ন একজন

তোমারি ক্লান্তির মধ্যে আবর্তিত চেনো কি আমাকে
সমুদ্রের ব্যাপ্তি আমি অরণ্যের চির আন্দোলন
আমার অস্থির গানে উচ্ছ¡সিত তোমার কঙ্কন-
ধ্বনিত তোমার রক্ত বারংবার আমারি বৈশাখে।
গোপন আর্তির মতো তুমি এক নিঃসঙ্গ কিঙ্কিনী
তোমার সৌরভে নিত্য মগ্ন আমি অন্ধ ও মাতাল
ধর্ম কর্ম স্বর্গ মর্ত মৃত্যুঞ্জয়ী তুমি মহাকাল
তবুও আশ্চর্য শোনো সেইদিন তোমারে চিনিনি।

সমাজ সংসার জানি মিছে সব শুধু তুমি একা
আনন্দে নৈরাশ্যে এসে ইন্দ্রিয়ের খোলো শত দ্বার
অযুত শিখায় জ্বালো অন্তহীন প্রদীপ আমারÑ
আমার অস্তিত্বে তুমি বাসনার দীপ্ত প্রহেলিকা।
আমার চৈতন্যে এসো আলিঙ্গনে ছিন্ন ভিন্ন পথে
সয়ম্ভূ ইচ্ছার ক্লান্তি দীপ্ত হোক হৃদয় সৈকতে।

জাহানারা আরজু
এই বরষায়

এই আষাঢ়ে, এই শ্রাবণে, এই সঘন বরষায় খুঁজে ফিরি কোথায় সে কবি কালিদাস,
কোথায় সে মেঘমালা, কোথায় সে নীল গিরি
পর্বত শিখর, কোথায় সে মেঘদূত, কেতকীর বনÑ
এলোকুন্তলা যক্ষ বিরহিনী প্রিয়া, কোথায় সে
বিশীর্ণা রেবা নদীÑ
এবং কোথায় সে কাজরী উৎসব, হরষিত পুর নারী সব,
কোথায় সেই নজরুল ‘মেঘের ডুমুরু’ বাজে যার বজ্রের
বিষাণে। ‘এমন ঘনঘোর বরিষায়’Ñ হৃদয়ের কপাট খুলে
দু’জনে মুখোমুখি বসে থাকার কোথায় সে দুর্লভ
শুভক্ষণ? কোথায় সে সম্রাট কবি রবীন্দ্রনাথ?
আজ এ ঘন নীল পর্দার আচ্ছাদনে ঢেকে আছে
শ্যামল বাংলাদেশÑ বর্ষণে বর্ষণে ক্ষ’য়ে ক্ষ’য়ে গেছে চারদিক,
শঙ্কিত প্রহর গুনছে নক্ষত্র জলসার রূপোলি রাত,
ঝক ঝকে সোনার থালার মত দিনের মলিন মুখ,
সারা দেশটা থমকে দাঁড়িয়ে আছে ভয়াল বন্যার
অশুভ শঙ্কায়Ñ কখন যে ভেসে যাবে বাগান- বাথান,
ভেসে যাবে বাস্তুভিটার ওই ঠিকানাটুকু, কৃষাণীবধূর
মেহেদী রাঙা স্বপ্ন সাধ সবটাই।
পত্রলতা, ফুল ফল, পোয়াতী জমিন নিয়ে কতবার
সন্ত্রাসে কাঁপবে এ দুঃখিনী বাংলাদেশ?
অঝোর বর্ষণে ছেয়ে আছে আষাঢ়ের সঘন আকাশ,
ভেজা কাঁঠে জ্বলে না আগুনÑ
ফুটো চাল চূয়ানো বৃষ্টি ধারায় সখিনার শিকা
হাঁড়ি কুরি ভিজে সপ সপে,
মাচানের ওপর চোখ বুঁজে ভিজে কাথায়
পড়ে থাকে কোলের ছেলেটাÑ ঘরের মেঝেতে বর্ষার পানি খলবল!
আর কোন কবি জয়দেব, কালিদাস, রবীন্দ্র-নজরুল,
বর্ষার কোন কাব্য গাঁথা লিখবে এবার?
সহস্র প্রশ্নের বৃত্তাকার ঘুরে ঘুরে এসে বাংলার
এক কবিকে নিয়ে যায় আজ, কম্পিত শঙ্কিত
শুধু এক ভয়াল বর্ষার দেশে!

তারেক মাহমুদ
বানভাসী

ভাতের মাড় উথলে উঠছে গোশতের সুঘ্রানে
শিশুতোষ মন খেলা ফেলে
চেয়ে আছে মাড় শুকানোর দিকে
উচ্চস্বরে শ্রমিক পিতার ক্ষুধার্ত পেট জ¦লে
তরুনী মাতার হৃদয় শুকায় পলিথিন গৃহতলে
সে এক সুখের দিন ছিলো আহা তখন সে কিষাণ বধু
কিষান স্বামী গঞ্জে যেতো তরুনীর চোখ
পথপানে চেয়ে থাকতো শুধু গঞ্জ ফেরত কিষান স্বামী
সওদা আনতো কতো যতোখানি লাগে সংসারে তার
তারও চেয়ে ঢের শত আহারে সব ভেসে গেলো সব্বনাশী বানে
কোথা গেলো সেই সাজানো সুর সেই স্বপ্নময় গানে
এতিম পেট খালি পরে রয় ক্ষুধা মেটেনা তাতে
পলিথিন গৃহে সংসার পাতে নাগরিক ফুটপাতে

শাহীন রেজা
ময়ূর সকাল

মগ্নতায় ছুঁয়েছি কপাট
বিষণœ দুপুর জানালার কাঁচে এসে খুঁজছে স্মৃতির ভ্রমর
আর একগুচ্ছ বেগুনী রোদ হামাগুড়ি দিতে দিতে নেমে এসে
বোগেনভিলিয়ার পাপড়ি থেকে অতঃপর
শিকড়ের কাছাকাছি হয়েছে উদোম

একদল পিঁপড়া- বালক অকাতরে স্মৃতি নিয়ে খেলছে খেলা
যেন ফুটবল অথবা টেনিস কিংবা ক্রিকেট
এক্কা-দোক্কার ছলে ছুঁয়ে যাচ্ছে শূন্যলতা বাতাস ক্রিয়ায়

তবুও কি ভুলে গেছি সেইসব সোনাগলা দিন
ইউক্যালিপটাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে এখনও আমার হাত আকাশমুখী
আমি ধরতে চাই সেই নীলাভ সাম্পান: যার হাল ধরে
বসে আছে শ্রাবণ-বোয়াল, আর আমার ময়ূর সকাল।

ফাহিম ফিরোজ
লাভঘাট/ ২

লিয়ন কেন পড়ে আছে পূর্ব দীঘির ঘাটে
দেও-পরীরা বাতাস দেয় ফুলের পাখা দিয়ে
কয়না সোনা, কয়না কথা কিসের অভিমান
জ¦লছে জ্বলছে হাতের ঘড়ি তারার আলোতে
কালো রঙের ফুলহাতা শার্ট ঢেউয়ে ভিজে যায়
তবু তরুণ কয়না কথা কিসের বেদনায়
এক হাতে আজ ফুল আছেরে, অর্ঘ্য দেবে জ্বলে
কিন্তু জান্নাত আছিলোকি, আছিলোকি লগে?
অর্ধেক ফুল হাতে আছে, বাদবাকিটা জলে
কয়না সোনা কয়না কথা কিসের অনুযোগ?
তাই তো লিয়ন মরেরে, তাইতো লিয়ন মরে
মানে গেছে অভিমানে চারচারটি দশক
উভয় তবে একই ছিলো গভীরটানে প্রকট
আজকে কেন এমন হলো, কথা ছিলো কতেক
মরণবধি থাকবে হাতে অন্য হাতের উপর
তবে কি সে হারিয়ে গেছে প্রযুক্তিরই মোহে?
লিয়ন কেন একলা একা; ওকি ভেলকিভাজ!
ঘুরতে থাকে দীঘির জল তীব্র মেঘভার

এক জনের ব্যধি হলে ছুটে অন্যজন
স্বপ্নে দেয় দুটো লেবু, বাঁচেরে লিয়ন
জান্নাতের বিপদ হলে একদিন ঠিক আগে
বলতো প্রেম, কালকে কিন্তু তোমার অমঙ্গল
সেটাই কিন্তু ফলে যেত দারুণ বিস্ময়
ফেরেস্তারা জানাযায়, সঙ্গে কতপাখি
সবার মুখ থম্ থম্ থম্ আঁধার দাপাদাপি
মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে খোয়াজ খিজির তাই
দু’হাত দিয়ে নেন কোলে নেন ফর্সা ছেলেটার
পাপ ছিলো না এই দেহেতে, ছিলো প্রসুণ ধারা
গভীর জলে শুয়ে দেন অতল পানির রাজা।
৩০/০৮/২০১৭

ইদ্রিস সরকার
অমৃতসুধা

নীরবে নিগূঢ়ে খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে যাও পথিক
শন্তিময় মহাসড়ক, ধরে সামনে
যেতে যেতে চলে যাও সংযুক্ত চারটি সড়কে
সেখানে মিলিত হয়েছে দেখো মহাসাগরে সংযুক্ত
একই মোহনায় সৃষ্টিশীলতায় দিব্যজ্ঞানে অন্বেষণ করো
অবশ্যই পথিক দেখতে পাবে অন্তর গভীরে
অলৌকিক দীপ্তিময় সেসব আলোক উজ্জ্বল প্রবাহ
বিরাজমান ওই সপ্তর্ষিমÐলেও পঞ্চম বৃক্ষের
শেখড় ধরেই সামনের চারটি সড়ক মিশেছে মহাসাগরে
একই মোহনায় যেখানে রয়েছে
সত্য সুন্দর শান্তির অকাট্য প্রমাণ অমৃতসুধা ও অমরত্ব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন