বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহান স্বাধীনতা দিবস

একগুচ্ছ পদাবলি

| প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

জাহানারা আরজু

এ আমার স্বদেশ

আমার স্বদেশ আমার বুকের গভীর দিনরাত
কথা বলে, আমার স্বপ্নে-সুপ্তিতে, জাগরণে কর্মকোলাহলে
দুঃখের দাবানলে, কখনো খুশির পুষ্পিত পরাগে
আমার স্বদেশ কথা বলে।
আমার স্বদেশÑ
বর্ষার বাদলে, চৈত্রের খা-খা রৌদ্দুরে শীতের তুহিনে
কখনো ব্যথা-নীল ঢল, কখনো অগ্নিগিরি দাবাগ্নি দহনে-দহন,
কখনো দুঃসহ ব্যথা-জমাট বরফ-সাগরÑ
তবু কথা বলে, অহরহ আমার বুকের তন্ত্রীতে সহস্র
রাগ মূর্ছনায় বেজে ওঠে ধ্বনিময়Ñ আমার স্বদেশ!
আমার পূর্বপুরুষ আর উত্তম পুরুষের মিলিত স্রোতধারায়
এ মাটি আমারÑ
এখানে আমার পবিত্র জন্মলগ্ন মাতৃ-নাড়ী ছিন্ন হয়ে
সূর্যের পৃথিবীকে প্রথম দেখেÑ
আমার কুসুমিত শৈশব একে একে দৃঢ়তায় পদক্ষেপ রাখে,
আমার বন্ধনহারা দামাল কৈশোর বোশেখের ঝড়ে আম কুড়ায়,
এবং পদ্মা মেঘনায় নির্ভীক আনন্দে সাঁতার কাটে,
এখানোই আমার যৌবন প্রথম প্রেমের স্পন্দিত ‘গুচ্ছ গুচ্ছ
পুষ্পাঞ্জলি ছিটোয়--
এখানেই আমার বার্ধক্য তার সম্ভার তরণী বয়ে বয়ে
পরিশ্রান্ত পণ্যের বোঝা নামায়Ñ এ আমার স্বদেশ।
এখানে কানুপা-চÐীদাস-বিদ্যাপতি-আলাওল-সৈয়দ-হামজা-
রবীন্দ্রনাথ-নজরুল স্থির নিশানায় নিয়ত আমাকে
পথ দেখায়, আমার দু’চোখের বিন্দুতে সে আলো জ্বেলে
আমি এখানেই ফিরে আসিÑ ভালোবাসি, ভালোবাসা
পেতে চাইÑ এ আমার স্বদেশ!

জাহাঙ্গীর হাবীবউল্লাহ
পতাকায় পেল সুখ

যুদ্ধের ছবি তোলপাড় করে বাংলায় সংকট
মানুষ নিজেরা দুশমন হয় সব কিছু উদ্ভট,
বিশ্বাসী নয় কারো প্রতি কেউ আস্থা রাখে না আর
ওই পরিবেশ প্রতিরোধে চাই হাতে হাতে হাতিয়ার।

ভাই হয়ে যায় নির্মম এক ভাইকে হননকারী
সত্যের বাণী মানেনি তখন হয়েছে অস্ত্রধারী,
গোলাগুলি করা লক্ষ্য কেবল মুক্তিযুদ্ধ তাই
বৈরী রোখার প্রয়াস নিয়েই গেরিলা সকল ভাই।

বাঙালি ছিল বিবাদ বিহীন শুধু যে শান্তিকামী
নিয়েছে তারাই রাইফেল হাতে লড়াই বিদসযামী,
স্বাধীন হবার অনড় ইচ্ছে মুজিবের আহŸানে
দেশের জনতা যুদ্ধে নেমেছে ‘জয় বাংলা’র গানে।

আাহŸান ধ্বনি আকাশে বাতাসে অন্তরে এলো ভেসে
মার্চের ডাক মহান নেতার মুক্তিযুদ্ধ দেশে,
বীরযোদ্ধারা ন’মান যুদ্ধে পতাকায় পেল সুখ
স্বাধীন হয়েছি বিজয়ের ফলে দেখি সূর্যের মুখ।

আব্দুস সালাম
আত্মত্যাগ

রাতের আঁধারে নিশাচর পাকসেনা ও তার দোসররা
নারীগন্ধের সন্ধানে দাবড়িয়ে বেড়াতো
গ্রাম-শহর অলি-গলি ;
প্রজন্মকে পাল্টে দিতেই যেন মত্ত ছিল ওদের নারকীয় নৃত্য।
পিচাশ নরপশু হায়েনাদের মনুষত্বের ঘুম ভাঙাতে ব্যর্থ হয়
নববধূর সিঁথির সিঁদুর, পুতুল খেলায় মগ্ন শিশুর চঞ্চল দৃষ্টি,
মমতাময়ী মায়ের করুণ আতর্নাদ।
বুকের ধনকে বুকে আগলে রেখে পিতার বুকের বসন
ভেজে নয়ন বারিতে
হৃদয়ের গহীনে আতঙ্কের ঘুণ পোকাটা
নড়ে চড়ে ওঠে ক্ষণে ক্ষণে।
হায়েনাদের হিংস্রতার কাছে পরাজিত বাবার বুক হতে
ছিঁড়ে নিত কলিজার ধনকে ;
হিং¯্র পশুগুলো নির্মমভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে
বুকের পাঁজরগুলো বিধ্বস্ত করে ফেলে রাখে মাঠে ময়দানে।
বিকৃত বীভৎস মৃতদেহগুলো পুকুর ডোবা নদ-নদী,
খাল-বিলে ভেসে থাকতো।
কাক-পক্ষী, কুকুর শিয়াল ক্ষুধার্ত শকুনগুলো
একত্রে নির্ভয়ে ক্ষুধা নিবৃত্ত করতো আপন মনে।
লক্ষ শহিদের রক্তস্নান আর মা-বোনের সম্ভ্রমে প্রাপ্ত
এ মুক্ত স্বদেশ ভূমির লাল সবুজের পতাকায়
মহান আত্মত্যাগ চিরভাস্বর হয়ে জ্যোতি ছড়াবে
হাজার বছর।

ফাহিম ফিরোজ
রাঁধুনী আমার, রাঁধুনী

ভাবীছাপ, আপনার হাত কাটে, ক্যান?
সাধের উঁচালা গৃহে
অ্যাত সুখের ভেতর
কন... কন, হাত কাটে ক্যান
যুববায়ু ঘরান্তর
উড়ে উড়ে নড়ে নড়ে
ঘরগুলো হয়ে যায় মাৎস্য বাজার
সাঁইজীর দৈন্য গান বধূর ভেতরে গুনগুন
সকাল-বৈকাল
আহারে আহারে
মোর ভাবীজির
আড়ালে আড়ালে
নীল পত্র পাঠ
ছাতি ফেটে যায়

ননদী রৈদ তো চাইরদিক কতই Ñঅথৈ
তবু ধুয়ো গৃহে
ক্যান ক্যান হাত কাটে, ক’ন?
হুনেন.... হুনেন ভাইছাপ, চিতাও সুন্দর, কি শোভন ডোরাকাটা
প্রকৃত রূপ তো ফুঁসে ওঠে তার
কর্মের ভেতর!


শাহীন রেজা
ভালোবাসা এবং ঋণ

ভালোবাসায় ঋণ বলে কিছু নেই
শুধু যা আছে তা না পালন করার মতো কিছু
যেমন কোন কাজ যদি বলো কিছু কর্তব্য; ঠিক তেমন

ভালোবাসায় প্রাপ্তি থাকে অপ্রাপ্তির ঘ্রাণ
মাঝে মাঝে হাস্নাহেনা হয়ে ছুঁয়ে যায়

শ্রাবণ শর্বরী হয়ে দুলে থাকা দোলনচাঁপায়
যা থাকে তা মাতাল করে না
শুধু স্মৃতির কুয়াশা হয়ে মাঝে মধ্যে অলিন্দ ভিজায়

ভালোবাসায় ঋণ নেই থাকেনা কখনো

শুধু প্রজাপতি রোদ কি কেমন শরীর মাতায়।

২৬.০৯.২০১৭
ঢাকা

কামরুল আলম কিরণ
সবিতা

চোখের দেখার চেয়ে মনের দেখা
বলেছিলে সেটা নাকি অনেক বড়,
তাই কিগো সবিতা, লজ্জায় সারাক্ষণ
থাকতে তুমি হয়ে জড়োসড়ো
ছেড়ে গেছো পৃথিবীকে
হারিয়েছো বছর দশ আগে,
চলে গেছো অভিমানে আকাশের তারা হয়ে
খুঁজে ফিরি আজও তা গভীর অনুরাগে।
বলেছিলে হেসে হেসে তোমার এ ভালোবাসা
থেমে যাবে দুন্দন্ড পরে,
সব নাকি ছেলেখেলা
দিনটা রাত্রি হলে
আমি নাকি চলে যাবো সরে
আমি আছি, ঠিকই আছি
তুমি নেই, নেই সে ছবি,
কোথায় সবিতা তুমি? ফিরে এসে দেখে যাও
কাঁদছে তোমার প্রিয় কবি
হায় প্রেম! ভালোবাসা!
খুঁজে ফিরি আজও ঐনক্ষত্রের মাঝে,
ফিরে এসো সবিতা, আমাদের চেনা পথে
নুপুরের নিক্কন যেথা বাজে।

সাকিব জামাল
আঁধার

আঁধার নিয়ে কবিতা হয়না - ঘৃণা জন্মায়
হঠাৎ আঁধারে ঢেকে গেলো সব
রাজপথে হুক্কা হুয়া রব
বৈষম্যের আঁধার, নির্যাতনের আঁধার
ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ-তারার আঁধার!
অস্ত্রের ঝংকারে-
স্বাধীনতাকামী বাঙালির উপর চাপিয়ে দেয়া নির্মম অন্ধকার
পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর আধার-
নিরস্ত্র বাঙালি হত্যায় মেতে উলঙ্গ নৃত্য করার আধার
ভন্ডের রঙ্গমঞ্চে-
ইয়াহিয়া খানের আলোচনা অভিনয়-অন্ধকার রূপায়ন
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো নেভানোর ষড়যন্ত্র
শিক্ষক-ছাত্রদের কাপুরুষের মত হত্যার অন্ধকার মঞ্চায়ণ
প্রতিবাদী নেতাদের গ্রেফতার করার আঁধার
আলোরপথের যাত্রীদের কন্ঠস্বর দমানোর উৎপাত!

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন