শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহান স্বাধীনতা দিবস

ধনী-গরিবের আয়বৈষম্য সর্বোচ্চ

মোবায়েদুর রহমান | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২২, ১২:০৮ এএম

সরকার ফলাও করে প্রচার করছে, তার সঠিক নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ফলে জিডিপি তথা অর্থনীতির আকার বিশালভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামাল দাবি করেছেন, বাংলাদেশে জিডিপির আকার অর্ধ ট্রিলিয়ন, অর্থাৎ ৫০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আরো দাবি করেছেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে মাথাপিছু আয়ও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থ বছরে মাথাপিছু আয় ৩০৮৯ মার্কিন ডলারে উন্নীত হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।
অর্থমন্ত্রীর দাবি মোতাবেক, প্রতি ডলার মূল্য ৮৬ টাকা ধরলে মাসিক মাথাপিছু আয় দাঁড়ায় ২২ হাজার ১৩৭ টাকা। বাৎসরিক দাঁড়ায় ২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৫৬৫ টাকা। বাংলাদেশের কতজন মানুষ মাসে ২২ হাজার টাকা রোজগার করেন? ৫ সদস্যের একটি পরিবারের মাসিক ন্যূনতম খরচ কত? মানুষের ন্যূনতম চাহিদা হলো ৫টি। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। কত জনের নিজস্ব বাসস্থান অর্থাৎ বসত ভিটা রয়েছে? জনগোষ্ঠির কত শতাংশ ভূমিহীন? কত শতাংশ গৃহহীন? এখন বাংলাদেশের এক কোটিরও বেশি মানুষ প্রবাসী হিসাবে বিদেশে কর্মরত আছেন। বিদেশে, বিশেষ করে পশ্চিমাদের স্বাস্থ্য সেবা তারা প্রতিনিয়তই চোখে দেখছেন। যারা বিদেশে নাগরিকত্ব পেয়েছেন অথবা স্থায়ী বাসিন্দার কার্ড পেয়েছেন (গ্রিন কার্ড বা পিআর কার্ড) তারাও ঐসব দেশে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে স্বাস্থ্য সেবা পাচ্ছেন। তার ছিটে ফোটাও কি বাংলাদেশে আছে? সেই পূঁজিবাদী পদ্ধতির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) বৃদ্ধি এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির (পারক্যাপিটা ইনকাম) সনাতনী ফর্মুলা দিয়ে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় নির্ণয় করা হয়। এই ফর্মুলা একটি প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই ফর্মুলা হচ্ছে, মোট জিডিপিকে মোট জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করা।

এই ফর্মুলায় হয়তো মাথাপিছু আয় বার্ষিক ৩ হাজার ডলার হতেও পারে। কিন্তু এই ফর্মুলায় শুধু বিরাট শুভঙ্করের ফাঁকই নাই, আছে জলজ্যান্ত প্রতারণা। এই ফর্মুলা অনুযায়ী ১৭ কোটি মানুষের প্রত্যেকের আয় যদি ৩ হাজার ডলার হয় তাহলে জিডিপি অর্ধ ট্রিলিয়ন হয়। কিন্তু বাস্তবে কি তাই? যে দেশে লক্ষাধিক লোক কোটিপতি, যে দেশে কয়েক শত লোক শত কোটি থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, তাদের পারক্যাপিটা কি ৩ হাজার ডলার? নাকি তার শত শত গুণ বা হাজার হাজার গুণ বেশি?

ইন্টারনেটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের ১০ জন শ্রেষ্ঠ ধনকুবের মধ্যে এক নম্বরে আছেন মুসা বিন শমসের। তার নীট সম্পদের পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলার। এক বিলিয়ন ডলার সমান ৮ হাজার ৬ শত কোটি টাকা। ১০ জনের মধ্যে অপরজন হলেন শিল্পপতি ও পলিটিশিয়ান সালমান এফ রহমান। মন্ত্রীর পদমর্যাদায় তিনি প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা। তার সম্পদের পরিমাণ ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। এই তালিকায় অপর ব্যক্তি হলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। শেখ হাসিনার দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি একজন মন্ত্রী ছিলেন। তার সম্পদের পরিমাণ এক বিলিয়ন ডলার। তালিকার অপর ব্যক্তি হলেন আহমেদ আব্দুস সোবহান। তিনি শাহ্ আলম নামেও পরিচিত। বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্স, সিমেন্ট, কাগজ নির্মাণসহ একাধিক শিল্পের মালিক তিনি। দুইটি বাংলা দৈনিক পত্রিকা, একটি ইংরেজি দৈনিক এবং একটি টেলিভিশন চ্যানেলেরও তিনি মালিক। যদিও ইন্টারনেটে তার সম্পদের পরিমাণ দেখানো হয়েছে ৫০০ মিলিয়ন কিন্তু বাস্তবে তাঁর সম্পদ এর চেয়েও অনেক বেশি বলে ওয়াকেবহাল মহল মনে করেন।

ইন্টারনেট ঘাঁটলে বাংলাদেশের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আরও তালিকা পাওয়া যায়। এসব তালিকায় রয়েছে ২০ জন শীর্ষ ধনাঢ্য, ৫০ জন মধ্য শীর্ষ ধনাঢ্য, ১০০ জন ধনাঢ্য ব্যক্তি ইত্যাদি। ‘গ্লোবাল ওয়েলথ রিপোর্ট’, ২০২১ এ বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে ২১ হাজার ৩ শত ৯৯ জন মিলিওনিয়ার রয়েছেন। তারা প্রত্যেকে কম করে হলেও দেড় মিলিয়ন ডলারের মালিক। ১ মিলিয়ন ডলার সমান সাড়ে ৮ কোটি টাকা। এই ২১ হাজার ৪ শত ব্যক্তি, যারা প্রত্যেকে অন্তত ১২ কোটি টাকার মালিক, তাদেরকেও ৩ হাজার ডলার মাথাপিছু আয়ের ব্রাকেটবন্দী করা হয়েছে। সেজন্যই বলছিলাম যে, মাথাপিছু আয়ের সরকারি হিসাবে রয়েছে বিরাট শুভঙ্করের ফাঁক অথবা বিরাট প্রবঞ্চনা।

বাংলাদেশে পিওন-কেরানী অর্থাৎ সাবেক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বেতন সর্বোচ্চ ১৪ হাজার টাকা। এন্ট্রি লেভেলে তাদের বেতন ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। প্রাইভেট সেক্টরে এন্ট্রি লেভেলে ১০ হাজার টাকা নয়। ঢাকাতে কয়েক লক্ষ বহুতল ভবন নির্মিত হয়েছে। প্রতিটি ভবনেই ৩ থেকে ৪ জন নিরাপত্তা প্রহরী রয়েছেন। এদের কারোরই বেতন ১০ হাজার টাকার ওপর নয়। তবে যারা পুরাতন তারা ইনক্রিমেন্ট পেয়ে ১৪, ১৫ বা ১৬ হাজার টাকায় পৌঁছেছেন। এসব ভবনের কেয়ারটেকার বা ম্যানেজারের বেতনও ২০ হাজার টাকার বেশি নয়।

যাদের বেতন মাসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা, তাদের দিন গুজরান কীভাবে হচ্ছে? ঢাকার একটি বাংলা দৈনিক এদের এক জনের দৈনন্দিন জীবন যাপনের চিত্র দিয়েছেন এইভাবে: দিন যত যাচ্ছে ততই জিনিসপত্রের দাম বাড়তে বাড়তে আকাশ ছুঁতে যাচ্ছে। দ্রব্যমূল্য যত দ্রুত গতিতে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে সাধারণ মানুষের আয় রোজগারের গতি তত নিম্নমুখী হচ্ছে। এক বছরের মূল্য সূচক নিলে দেখা যায় যে এক বছরের মধ্যে অনেক পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। একজন কর্মচারী বলেন, তিনি যে বেতন পান সেটা দিয়ে তার ২০ দিনও চলে না। মাছ মাংস তো কেনাই হয় না। আগে বলা হতো, শাক সবজিতে ভিটামিনও বেশি, দামও সস্তা। কিন্তু এখন সেই শাক সবজির বাজারেও আগুন লেগেছে। আগে বলা হতো, কিছুই যদি না জোটে তাহলে ডাল আর আলু ভর্তা খাও। এখন ডালের দাম ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। তেলের দামও ডাবল। রাবেয়া বেগম একজন নারী শ্রমিক। তিনি বলেন, ‘গরুর মাংস তো দূরের কথা, গত দুই তিন মাস ধরে পোলাপানরে কোনো মাংসই খাওয়াতে পারি না।’

ঢাকার একটি বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিকের ১৩ ফেব্রুয়ারি সংখ্যার প্রধান সংবাদের শিরোনাম, ‘সীমিত আয়ের পরিবার/ দুর্ভাগ্যের সাগরে গলা পর্যন্ত ডুবে গেছে।’ প্রাইভেট কোম্পানির একজন জুনিয়র অফিসার। ২০২০ সালের প্যান্ডেমিকের পর তার চাকরি যায়। অনেক কষ্টে আরেকটি চাকরি যোগাড় করেন। সেখানে বেতন কম। বাড়ি ভাড়া, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া, পরিবারের চিকিৎসাÑ এসব ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতি মাসেই তাকে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা ধার কর্জ করতে হয়। পরের মাসের বেতন পেয়ে সেই ধার কর্জ শোধ করেন। এভাবেই চলছে তার দুইটি বছর। সামনে কোনো আশার আলো নাই।

বাংলাদেশ গর্ব করে তার বিশাল রিজার্ভের জন্য। এই রিজার্ভের প্রধান সূত্র দুইটি। এরমধ্যে একটি হলো গার্মেন্টস বা তৈরি পোশাক শিল্প। লক্ষ লক্ষ মহিলা এবং বেশ কিছু সংখ্যক পুরুষ গার্মেন্টস কর্মী হিসেবে কাজ করেন।

ঢাকা বা চট্টগ্রামে কেনো গার্মেন্টস কর্মীই তো স্ত্রী পুত্র পরিবার পরিজন নিয়ে একসাথে বসবাস করতে পারেন না। তারা যে বেতন পান সেই বেতন দিয়ে বাড়ি ভাড়া জোটাবেন কোত্থেকে? বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা ব্যয়, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ- এইগুলি মহানগরীতে থেকে সম্ভব নয়। আজকাল মহিলা কর্মীরাও ৮ থেকে ১০ জন একত্র হয়ে মেস ভাড়া করে থাকেন। বিবাহিতরা তাদের পরিবারকে গ্রামের বাড়িতে রেখে দেন। এধরনের যাপিত জীবন বাংলাদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের। এদের জীবন উন্নয়নের ছোঁয়া কোথায়?

২০২১ সালের এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বাংলাদেশের ১ শতাংশ ধনাঢ্য মানুষের হাতে দেশের ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ সম্পদ কেন্দ্রীভূত রয়েছে। আর দেশের ৫০ শতাংশ মানুষ অর্থাৎ অর্ধেক মানুষের হাতে রয়েছে ১৭ দশমিক ১ শতাংশ সম্পদ। এই পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন যদি হয়েও থাকে তাহলে এক প্রবল ধনবৈষম্য বাংলাদেশের সমাজ দেহকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছে। অথচ, ৮০ দশকে আয়বৈষম্য এত প্রকট ছিল না। তখন ১ শতাংশ ধনাঢ্য ব্যক্তির হাতে কেন্দ্রীভূত ছিল ১১ দশমিক ৮ শতাংশ সম্পদ। আর ৫০ শতাংশের হাতে ছিল ২০ শতাংশ সম্পদ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর সালেহ উদ্দিন প্রবল ধনবৈষম্য বর্ণনা করতে গিয়ে একটি অর্থনৈতিক পরিভাষা ব্যবহার করেছেন। পরিভাষাটির নাম হলো, গিনি কো এফিসিয়েন্ট (এরহর পড় বভভরপরবহঃ)। গিনি কো এফিসিয়েন্ট বলতে বোঝায় একটি সংখ্যা বা পরিসংখ্যান যেটা একটি দেশ বা জাতির ধনবৈষম্য বা আয়বৈষম্যের পরিমাপ করে। সংখ্যাটি ০ (শূন্য) থেকে ১ (এক)। সংখ্যাটি যখন হয় শূন্য, তখন বোঝানো হয় দেশটিতে আয় বা ধন বণ্টনের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য নাই। অর্থাৎ সুষম বণ্টন হয়েছে। আর সংখ্যাটি যদি হয় ১ তাহলে বোঝানো হবে যে ধন বা আয়বণ্টনে চরম বৈষম্য রয়েছে। এক কথায় বলা যায় যে অসম বণ্টন বিরাজমান।

গত ডিসেম্বর মাসে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের একটি গবেষণায় জানা যায়, ২০১৬ সালে সমাজের সবচেয়ে নিম্ন আয়ের ৫ শতাংশ যা আয় করতেন, উচ্চ আয়ের ৫ শতাংশ তার চেয়ে ১২১ গুণ বেশি আয় করেছেন। এটি হলো আয়ের ক্ষেত্রে ধনবৈষম্যের তথ্য। জাতীয় সম্পদের ক্ষেত্রেও চিত্রে তেমন কোনো তফাৎ নাই।

বাংলাদেশের একটি ইংরেজি দৈনিকের নাম ‘ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস’। মূলত ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অর্থনীতির সংবাদ এবং পর্যালোচনা থাকে এই দৈনিকটিতে। গত বছরের ৪ অগাস্ট সংখ্যায় প্রথম পৃষ্ঠায় প্রকাশিত প্রধান সংবাদে বলা হয়েছে যে, ২০২১ সালে বাংলাদেশের আয় এবং ধনবণ্টনে যে সর্বগ্রাসী বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, ১৯৭২ সালের পর থেকে ২০১৯ সাল- এই ৪৮ বছরেও এত বড় বৈষম্য সৃষ্টি হয় নাই।

আয় এবং ধনবণ্টনে এই বিরাট বৈষম্যের অনেক কারণের মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ হলো অশ্রুতপূর্ব দুর্নীতি এবং বিদেশে অর্থ পাচার। প্রায় এক দশক হলো হলমার্ক কেলেঙ্কারী থেকে শুরু করে হাল আমলের পিকে হালদার পর্যন্ত যে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির কাহিনী এবং ৬ থেকে ৮ লক্ষ কোটি টাকার অর্থ পাচারের কাহিনী গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে তার কোনোটির সুষ্ঠু বিচার হয়নি এবং কাউকেই গুরুদণ্ড দেওয়া হয়নি। এভাবে দুর্নীতি এবং অর্থ পাচার বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অঙ্গে পরিণত হয়েছে। এর অনুসঙ্গ হিসেবে আয় ও ধনবৈষম্য আরো প্রকট হয়েছে।

পাকিস্তানের ডিক্টেটর জেনারেল আইয়ুব খান গণতন্ত্রকে পেছনের আসনে বসিয়ে উন্নয়নকে সামনের আসনে নিয়ে এসেছিলেন। কিন্তু তাতে তিনি পার পান নাই। ধনীক গোষ্ঠি তার পতন ঠেকাতে পারেনি। সেই একই অর্থনৈতিক থিওরির কথা বিগত এক দশক ধরে বলা হচ্ছে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি উন্নতির কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না, বরং প্রান্তিক জনগোষ্ঠির মধ্যে অসন্তোষ এবং অস্থিরতার পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

Email: journalist15@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন