শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

মহান স্বাধীনতা দিবস

ইসলামে স্বাধীনতা ও দেশপ্রেম

ড. মো. কামরুজ্জামান | প্রকাশের সময় : ২৬ মার্চ, ২০২২, ১২:০৫ এএম

২৬ মার্চ বাঙালি জাতির জীবনে এক ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭১ সালের এ দিনেই বীর বাঙালি সূচনা করেছিল রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের। তারা বাংলাদেশকে মুক্ত করার শপথ নিয়ে সশস্ত্র সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। দুঃসাহসী জাতি দীর্ঘ নয় মাস সশস্ত্র সংগ্রাম করেছিল। এ সংগ্রামের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঐতিহাসিক বিজয়ের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছিল। বিশ^মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছিল লাল-সবুজের পতাকা। নতুন সূর্যের ন্যায় পূর্ব এশিয়ায় উদয় হয়েছিল সদ্য স্বধীন ছোট্ট সোনার বাংলাদেশ। বিশে^র বুকে সম্মানের অধিকারী হয়েছিল অজেয় বীর মু্িক্তযোদ্ধাগণ। দেশ ও জাতির কাছে এ স্বাধীনতার গুরুত্ব যেমন অপরিসীম, তেমনি ইসলাম ধর্মেও স্বাধীনতার রয়েছে অনন্য সম্মান ও স্বীকৃতি। ইসলাম স্বাধীনতাকে অসামান্য সম্মানের দৃষ্টিতে গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। কারণ, ইসলাম পরাধীনতাকে পছন্দ করে না। আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি মানুষকে স্বাধীন করে সৃষ্টি করেছেন। প্রতিটি মানুষ তাই মাতৃগর্ভ থেকে স্বাধীন অবস্থায় জন্মগ্রহণ করে থাকে। আল্লাহ তা‘আলা কাউকে পরাধীন করেননি, পরাধীন করে সৃষ্টিও করেননি। তিনি সকল মানুষকে তাদের বিবেক ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন, ‘তোমার প্রতিপালক চাইলে দুনিয়ার সকল মানুষ একত্রে ঈমান গ্রহণ করতো। তুমি কি তাদেরকে মুমিন বানাতে বল প্রয়োগ করবে?’ (সূরা ইউনুস: ৯৯)। এ আয়াত দ্বারা স্পষ্টই বোঝা যায়, আল্লাহ তা’আলা চাইলে সকলকে মুমিন ও মুসলিম বানাতে পারেন। কিন্তু তিনি তা করেন না। কারণ এখানে মানবজাতিকে তিনি ঈমানদার হওয়ার স্বাধীনতা প্রদান করেছেন। তিনি চেয়েছেন মানবজাতি বুঝে-শুনে ঈমান গ্রহণ করুক। জন্মগতভাবে মানুষের মনোজগৎ স্বাধীন সত্তার অধিকারী। বস্তুজগতেও তাই সে স্বাধীনতা পছন্দ করে। ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ শুধুমাত্র আল্লাহর খলিফা। সে শুধু একমাত্র আল্লাহর কাছেই পরাধীন থাকবে। একান্তভাবে সে শুধু তাঁরই দাসত্ব করবে। সে অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার করবে না। ইসলামের দৃষ্টিতে এটাই মূলত মানুষের স্বাধীনতা। মহানবী (সা.) বিশ^ মানবতাকে মানবীয় প্রভুত্ব এবং দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছেন। তৎকালীন আরব থেকে তিনি দাসত্বের জিঞ্জিরে আবদ্ধ থাকা আরব জাতিকে মুক্ত করেছিলেন। দাসত্ব মুক্ত করেই তিনি ক্ষান্ত হননি, বরং তিনি দাসকে সন্তানের মর্যাদায় ভূষিত করেছেন; ভাইয়ের সমমর্যাদায় অভিষিক্ত করেছেন। দাসদের তিনি নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করেছেন। তাদের পরিপূর্ণ অধিকার দিয়েছেন। আধুনিক যুগে দক্ষিণ আফ্রিকার নেলসন ম্যান্ডেলাকে বর্ণবাদবিরোধী জাতীয় নেতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কারণ, তিনি সাদা-কালোর ব্যবধান দূর করতে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। বর্ণবাদের অবসান করতে দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে তিনি প্রায় ৩০ বছর জেল খেটেছেন। অথচ, ইসলাম আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে এ বর্ণবাদী প্রথাকে বিলোপ সাধন করেছে। নবীজি (সা.) হাবশি বিলালকে (রা.) দাসত্ব থেকে মুক্ত করে মসজিদে নববীর মুআজ্জিন নিযুক্ত করেছিলেন। বর্ণবাদী প্রথা অবসানের এমন উদাহরণ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আল্লাহর প্রতি ঈমান আনার প্রথম স্তর হচ্ছে তাকে অন্তরে ধারণ ও লালন করা। দ্বিতীয়ত মুখের স্বীকারোক্তির মাধ্যমে অন্তরে লালিত ইচ্ছা মানুষের সম্মুখে প্রকাশ করা; আর সেটা প্রকাশের মূলমন্ত্র হলো ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।’ ইসলামের এই কালিমাটি পরিপূর্ণ স্বতন্ত্র ও স্বাধীন একটি বাক্য। যেটা উচ্চারণের মাধ্যমে একজন মানুষ পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে থাকে। এ বাক্যের অর্থ হলো, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রভু নাই, আর মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ।’ প্রথমত এ বাক্য ঘোষণার মাধ্যমে মানুষ সকল মানুষের অধীনতা ও পরাধীনতা হতে মুক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত সে মহানবী (সা.)কে যুগসন্ধিক্ষণের একমাত্র আদর্শ নেতা হিসেবে গ্রহণ করে নেয়। উল্লেখিত ঘোষণার মাধ্যমে একজন মুসলিম মানবসৃষ্ট যাবতীয় আদর্শ ও পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্ত হয়ে পড়ে। ইসলামী নীতির সহজাত বৈশিষ্ট্য হলো, পার্থিব জীবনে ভালো কিংবা মন্দ-উভয়ই করতে মানুষ সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন। ইসলাম মানুষকে এই স্বাধীনতা সৃষ্টির শুরু থেকেই দিয়ে এসেছে। প্রাপ্ত এ স্বাধীনতা ও কর্মকাণ্ডের আলোকে মানুষ পরকালীন জীবনে আল্লাহর আদালতে বিচারের মুখোমুখি হবে। তার এ স্বাধীন কর্ম অনুযায়ী একটি ফলাফল নির্ধারিত হবে। এ ফলাফল অনুযায়ী সে জান্নাত কিংবা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তা’আলা মানুষকে পার্থিব দুনিয়ায় চিন্তা ও কর্মের স্বাধীনতা দিয়েছেন। তার ধর্ম-কর্ম পালনের ব্যাপারে কোনো বাধ্যবাধকতা দেয়া হয়নি। ধর্ম পালনের ব্যাপারে মানুষকে জবরদস্তিও করা হয়নি। আল্লাহ তা’আলা আল কোরআনে বলেন, ‘ইসলামে কোনো প্রকার জবরদস্তি নেই। সত্য এবং মিথ্যা স্পষ্টভাবেই পার্থক্য হয়ে গেছে। ভুল এবং ভ্রান্ত পথ থেকে সঠিক পথ ও মতকে স্পষ্ঠভাবে আলাদা করে দেয়া হয়েছে। সুতরাং এখন যে কোনো ব্যক্তি মিথ্যাকে অস্বীকার করলো এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনলো; সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরলো, যা কখনো ছিন্ন হবার নয়।’ (সূরা আল বাক্বারা: ২৫৬)। মানুষ আল্লাহর সৃষ্ট বান্দা হবার কারণে তার স্বাধীনতা সীমাহীন নয়। ইসলাম বল্গাহীন স্বাধীনতাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন দর্শন। এ জীবন দর্শনকে খেলনায় পরিণত করার স্বাধীনতা কাউকেই দেয়া হয়নি। সুতরাং, সকাল বেলা ইসলাম গ্রহণ করে বিকাল বেলা সেটা বর্জন করার স্বাধীনতা এ দর্শনে নেই। ইহুদীরা সকাল বেলা ইসলাম গ্রহণ করে বিকাল বেলা তা বর্জন করতো। (সূরা আলে ইমরান: ৭২)। এ জাতীয় স্বাধীনতা ইসলাম অনুমোদন করে না। নিজের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে গিয়ে অন্যকে কষ্ট দেয়ার স্বাধীনতাও ইসলাম স্বীকৃতি দেয় না।

মানুষ সামাজিক জীব। ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজের সকল মানুষ ভাই ভাই। সুতরাং, তাদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ কাম্য নয়। ইসলাম মানুষের মাঝে বর্ণ ও ভাষা বৈষম্যে বিশ্বাসী নয়। বিশ^ময় ভৌগোলিক এবং নৃতাত্ত্বিক বৈষম্য ইসলামে প্রভেদ সৃষ্টি করে না। এ ব্যাপারে হাদিসের স্পষ্ট বক্তব্য হলো, ‘কালোর উপর সাদার কোনো প্রাধান্য নেই। অনারবের উপর আরবেরও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই।’ (আহমাদ)। মহানবী (সা.)-এর এ মর্মবাণীতে আকৃষ্ট হয়ে তৎকালীন আরবের সকল মানুষ ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছিলো। আরব এবং অনারব, কালো এবং ধলো-সকলেই দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছিল। ইসলামের এ সাম্যের বাণী আরবের গণ্ডি ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছিল দেশ থেকে দেশান্তরে। এ আলোতে আলোকিত হয়েছিলো আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়া। ইসলামের এ স্বাধীনতার বাণী দ্রুতবেগে ছড়িয়ে পড়েছিল ভারতবর্ষে। এ সময় ভারতবর্ষে শ্রেণি বৈষম্য এবং বর্ণবৈষম্যের যাঁতাকলে নিষ্পেসিত হচ্ছিল অসংখ্য মানুষ।

তারা মুক্তিকামী একজন শাসকের আগমনের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করছিল। (সূরা নিসা: ৭৫)। তাদের আর্তচিৎকারে ভারি হয়ে উঠেছিল উপমহাদেশের আকাশ-বাতাস। তাদের এ কান্না যেন শুনতে পাচ্ছিলেন মদিনার উমাইয়া খলীফা ওয়ালিদ ইবনে আবদুল মালিক (র.)। নির্যাতিত ও পরাধীন মানবতাকে মুক্ত করতে তিনি ভারতবর্ষে প্রেরণ করেন মুহাম্মাদ বিন কাশিমকে। তারপরে আগমন করেন মোহাম্মদ ঘুরি, ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজীসহ আরো অনেক মুসলিম নেতা। তাদের আহ্বানে সাড়া দিলো নির্যাতিত জনতা। শ্রেণীবৈষম্যে জর্জরিত হাজারো মানুষ দীক্ষিত হলো ইসলামে। নিষ্পেসিত বিভিন্ন জাতি ও গোষ্ঠির মানুষ ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে মুক্তির স্বাদ গ্রহণ করলো। তারা শাসকের গোলামির পরিবর্তে আল্লাহর গোলামে পরিণত হলো।

পৃথিবীতে মানুষের সৃষ্টিই হয়েছে আল্লাহর গোলামির জন্য। আর এ গোলামি প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে যুগে যুগে আগমন ঘটেছে অসংখ্য নবী ও রাসুলের। তাদের লক্ষ্যই ছিল মানবতার স্বাধীকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব প্রদান। প্রত্যেক নবী ও রাসুলের (সা.) জীবনকে তাই সংগ্রামী জীবন বলা হয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রত্যেক নবীই জালিম শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ-সংগ্রামে ব্যস্ত থেকেছেন সর্বক্ষণ। প্রত্যেক নবী ও রাসুল দেশ, জাতি ও মানুষের স্বাধীনতার জন্য কাজ করেছেন। মানুষের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে তারা প্রত্যেকেই শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে নবীজি (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেছিলেন। পরবর্তীতে সংগঠিত জনতাকে সাথে নিয়ে সেই মক্কা নগরিকেই আবার স্বাধীন করেছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে মক্কার সকল জনগণ স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করেছিল। দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় যখনই নবীজি (সা.) সাহাবীদের (রা.) আহ্বান করেছেন, তাৎক্ষণিকভাবে সাহাবাগণ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছেন। সাহাবাগণ ইসলাম রক্ষায় যেমন ছিলেন নিবেদিত, তেমনি দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায়ও ছিলেন উজ্জীবিত। মহানবী (সা.) হিজরত করে মদীনায় যাওয়ার পর মদিনাকে নিজের মাতৃভূমি হিসেবে গ্রহণ করেন। অতঃপর মদিনার সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সব ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেন। মহানবী (সা.) রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সীমানা রক্ষার দায়িত্ব পালনকারীদের বিশেষ মর্যাদায় ভূষিত করেছেন। তিনি বলেছেন, মাতৃভূমি রক্ষায় এক রাত পাহারা দেয়া এক মাস নফল নামাজ ও এক মাস নফল রোজা রাখা থেকে উত্তম। (মুসলিম)। এ হাদীস স্বাধীনতাকে অনন্য উচ্চতায় স্থান দেয়ার বড় নির্দেশক। কেননা, নামাজ এবং রোজা ইসলামের মৌলিক ইবাদত। অথচ, মাতৃভূমি রক্ষাকে নামাজ-রোজার মর্যাদার অনুষঙ্গ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন এবং রক্ষায় যারা জীবন দান করেছেন তারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। এসব আত্মোৎসর্গকারী যোদ্ধারা জাতির গৌরব। হাদীসের পরিভাষায় তারা শহীদের মর্যাদায় অভিষিক্ত। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের অধিকার রক্ষা করতে গিয়ে মৃত্যুবরণ করে সে শহীদ।’ (নাসাঈ: ৭/১১৬)। মহানবী (সা.) মাতৃভূমিকে প্রচণ্ড ভালবাসতেন। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘খাইবার অভিযানে আমি রাসুলের খাদেম হিসেবে তাঁর সাথে ছিলাম। অভিযান শেষে তিনি মদিনা অভিমুখে ফিরছিলেন। এমন সময় ওহুদ পাহাড় তাঁর দৃষ্টিগোচর হলো। আমি দেখলাম, মহানবীর চোখে-মুখে আনন্দের আভা ফুটে উঠেছে। এ সময় তিনি বললেন, ওহুদ পাহাড় আমাকে ভালোবাসে। আর আমিও ওহুদ পাহাড়কে অনেক ভালবাসি। (বুখারী ও মুসলিম)। এটি মহানবী (সা.)-এর দেশপ্রেমের অনন্য নজির ছাড়া আর কিছুই নয়।

ইসলাম গতানুগতিক কোনো স্বাধীনতার স্লোগান নিয়ে আগমন করেনি। সমগ্র বিশ্ব মানবতার মুক্তি ও সাম্যের কর্মসূচি নিয়ে ইসলামের আগমন ঘটেছে। নবী আগমনের সময়কালকে অন্ধকার যুগ বলা হয়। এ অন্ধকার যুগেই ইসলাম তার স্বাধীনতার আলোকরশ্মি ছড়িয়ে দিয়েছিল। এসময় আরব বিশ্বে পরাশক্তির আগ্রাসন ছিল বর্বরতায় ভরা। তৎকালীন রোম ও পারস্যের পরাশক্তির ফটোকপি যেন আজকের আমেরিকা-ইউরোপের মতো রাজনৈতিক শক্তিগুলো। আজকের ন্যায় তখনও পরাশক্তির অধীনে ছিল মানুষ। তাদের কঠিন আইনের অধীনে মানুষের জীবন ছিল অতিষ্ঠ-ওষ্ঠাগত। মানুষের এ বহুরূপী দাসত্বের বিরুদ্ধে ইসলাম স্বাধীনতার বার্তা ছড়িয়ে দেয়। ইসলাম এ সময় মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতার সীমানা নির্দেশ করে। মানুষের চিন্তা, বিশ্বাস ও সমালোচনার সীমানা প্রাচীর নিরূপণ করে দেয় ইসলাম। স্বাধীনতার সঠিক পথ প্রাপ্তির জন্য ইসলাম মানবজাতিকে কোরআন নিয়ে গভীর পর্যবেক্ষণের নির্দেশ করেছে। (সূরা নিসা: ৮২)। বুদ্ধিবৃত্তিক চিন্তা, অগ্রসরতা ও মুক্তচিন্তাকে ইসলাম সাধুবাদ জানিয়েছে। চিন্তাশীল মানুষদের আল্লাহ ভালবাসেন। আর যারা চিন্তাশীল নয় তাদের আল্লাহ ধিক্কার দেন মর্মে কোরআন বর্ণনা করেছে। যুক্তি, বুদ্ধি ও সৎ বিবেচনাকে ইসলাম উৎসাহ যুগিয়েছে। (সূরা রুম: ২৮)। স্বাধীনতার নামে ইসলাম রক্তপাত, হানাহানি ও মারামারিকে অনুমোদন করে না। তবে অন্যায়, অত্যাচার ও অবিচার রোধে ইসলামের নির্দেশনা রয়েছে। সন্ত্রাস, খুন ও স্বাধীনতাহরণ প্রতিরোধেও ইসলামের রয়েছে যুদ্ধ করার নির্দেশনা। নিজ দেশকে পরাধীনতা মুক্ত করতেও ইসলামে রয়েছে সংগ্রামের ইতিহাস। জালিমের জুলুম থেকে দেশ এবং জনগণকে স্বাধীন করতে মুসলিমদের দেয়া হয়েছে যুদ্ধের আদেশ। (সূরা নিসা: ৭৫)। ইসলামে স্বাধীনতার মূল কথা হলো, ব্যক্তির ইচ্ছাকে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে সমর্পণ করা। অতঃপর আল্লাহর নির্দেশিত পথে দেশ ও জাতির সেবা করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী আপনি বলুন! আমার নামাজ, আমার সকল ইবাদত-আনুষ্ঠানিকতা, আমার জীবন, আমার মরণ-সবকিছুই আল্লাহর জন্য নিবেদিত।’ (সূরা আন’আম: ১৬২)। ইসলামে স্বাধীনতার অর্থ হলো, পার্থিব জীবনে সব ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে স্বাধীন থাকা। মানবতার দাসত্বমুক্ত হয়ে এক আল্লাহর দাসত্বের কাছে নিজেকে সমর্পণ করা। আর আল্লাহর এ দাসত্ব পালনের মাধ্যমে পরকালীন জীবনে সাফল্য লাভ করা।

লেখক: কলামিস্ট ও অধ্যাপক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
dr.knzaman@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
MD Mahmudul Hasan ২৭ মার্চ, ২০২২, ১০:০৫ এএম says : 0
এই কথাটা শুনে সত্যিই আমার হৃদয়কে টাচ করেছে যে- নেলসন ম্যান্ডেলা বর্ণবাদের অবসান করতে দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনে তিনি প্রায় ৩০ বছর জেল খেটেছেন। অথচ, ইসলাম আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে এ বর্ণবাদী প্রথাকে বিলোপ সাধন করেছে। নবীজি (সা.) হাবশি বিলালকে (রা.) দাসত্ব থেকে মুক্ত করে মসজিদে নববীর মুআজ্জিন নিযুক্ত করেছিলেন। বর্ণবাদী প্রথা অবসানের এমন উদাহরণ পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবে না।
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন