শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মহানগর

ময়লার কন্টেইনার এবার ভূগর্ভে স্থাপনের উদ্যোগ ডিএসসিসির

প্রকাশের সময় : ১৬ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

সায়ীদ আবদুল মালিক : ময়লার কন্টেইনার এবার মাটির নিচে স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এ জন্য পাইলট প্রকল্প হিসেবে মিরপুর সড়কের রাসেল স্কয়ারের কাছে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। গতকাল থেকে প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানা যায়। পথে পথে বর্জ্যরে কন্টেইনার এবং ওয়াস্টবিন স্থাপন করেও সুব্যবস্থাপনা না আসায় অবশেষে মাটির নিচেই বর্জ্য পাঠাতে চাইছে সিটি কর্পোরেশন। গতকাল এ খবর দিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এম কে বখতিয়ার। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাস্তায় থাকা দুর্গন্ধযুক্ত ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে একটি স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকার বিভিন্ন রাস্তায় বর্তমানে ৩৯০টি ডাস্টবিন (কনটেইনার) রয়েছে। এর সাথে শিগগিরই আরো ৫০ থেকে ৬০টি কন্টেইনার যোগ করা হবে। এতে মোট কন্টেইনারের সংখ্যা দাঁড়াবে সাড়ে চার শতাধিক। সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন কর্মী ও বিভিন্ন এলাকার স্থানীয় সোসাইটির উদ্যোগে রাজধানীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ করা হয়। এসব ময়লা ভ্যানে করে নিয়ে বিভিন্ন রাস্তার ওপর রাখা খোলা কন্টেইনারে রাখা হয়। পরে এসব কন্টেইনার রাস্তা থেকে সংগ্রহ করে ময়লাবাহী ট্রাকে করে নিয়ে যাওয়া হয় মাতুয়াইল ও আমিন বাজার ল্যান্ডফিলে। কন্টেইনার থেকে ময়লা ফেলার পর এসব কন্টেইনার আবার রাস্তার ওপর রাখা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন মূল সড়ক ছাড়াও এলাকার অলিগলির সড়কগুলোতে এসব কন্টেইনার রাখা হয়। কোথাও একটি আবার কোথাও তিন-চারটি কন্টেইনার রাখার কারণে ময়লা ওঠানামার কাজ চলতে থাকে প্রায় রাত-দিন। এতে ওই সব সড়ক দিয়ে পথচারীদের চলাচলে সমস্যা হয়। দুর্গন্ধের কারণে সাচ্ছন্দ্যে সড়ক দিয়ে চলাচল করা যায় না। আবার এসব কন্টেইনার রাখার স্থানে স¤প্রতি সিটি কর্পোরেশন বেশ কিছু এলাকা নিয়ে স্টিলের বেড়া দিয়ে ঘিরে দিয়েছে। এতে অনেক রাস্তা সরু হয়ে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকায় বর্তমানে দৈনিক প্রায় আড়াই হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য উৎপাদিত হয়। বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করে বর্জ্য এনে রাখা হয় সিটি কর্পোরেশনের নির্ধারিত স্থান, ডাস্টবিন ও সড়কের ওপর রাখা কন্টেইনারে। প্রধান সড়ক ও পাড়া-মহল্লার রাস্তাগুলোয় বর্জ্যরে কন্টেইনার রয়েছে ৩৯০টি। সিটি কর্পোরেশনের ট্রাক দিয়ে এগুলো মাতুয়াইল ডাম্পিং স্টেশনে নেয়া হয়।
জানা গেছে, বর্তমানে উৎপাদিত আড়াই হাজার টনের মধ্যে প্রায় ২ হাজার ২০০ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়। বাকিটা রাস্তা ও অলিগলিতে পড়ে থাকে। ঠিকমতো বর্জ্য ফেলা হয় না বলে ডাস্টবিন ও কন্টেইনারের আশপাশে সৃষ্টি হচ্ছে নোংরা ও দুর্গন্ধময় পরিবেশ। কন্টেইনার সংশ্লিষ্ট সড়কে যানজটও হচ্ছে নিয়মিত।
অন্যদিকে জায়গার অভাবে পরিকল্পনা করেও সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করতে পারছে না ডিএসসিসি। এমনকি স¤প্রতি ফুটপাথে সাড়ে পাঁচ হাজার ওয়াস্টবিন স্থাপন করেও সফলতার মুখ দেখা যায়নি। এ অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দিতে সিটি কর্পোরেশন বর্জ্যরে কন্টেইনার ভূতলে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে।
ডিএসসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এম কে বখতিয়ার ইনকিলাবকে বলেন, সড়কের ওপর কন্টেইনার রেখে বর্জ্য সংগ্রহ করায় অনেক সমস্যা হচ্ছে। যেখানে কন্টেইনার আছে, সেখান দিয়ে যান চলাচলে ব্যাঘাত ঘটছে। পরিবেশও ভালো থাকছে না। তাই এবার আমরা কন্টেইনার মাটির নিচে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছি। এর নাম হবে আন্ডারগ্রাউন্ড কন্টেইনার। ধারণাটি আমাদের দেশে একেবারেই নতুন। তাই প্রাথমিকভাবে কলাবাগানে মিরপুর রোডে (রাসেল স্কয়ারের দক্ষিণ পাশে) একটি আন্ডারগ্রাউন্ড কন্টেইনার স্থাপনের কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। গত সোমবার থেকে এর কাজ শুরু হওয়ার।
তিনি বলেন, রাস্তা ও ফুটপাথের মাটির নিচে পানির রিজার্ভারের মতো জায়গা করা হবে। এর সাইজ হবে লম্বায় ১৫ ফুট ও প্রস্থে ১০ ফুট এবং গভীরতা ৭ ফুট। এখানে কন্টেইনার রেখে স্টিলের (চেকার প্লেট) ঢাকনা দিয়ে গর্তটি ঢেকে দেয়া হবে। তখন পথচারী ও যানবাহন খুব সহজে ওই চেকার প্লেটের ওপর দিয়ে চলাচল করতে পারবে। আর ফুটপাথের ধারে চিমনির মতো জায়গা রাখা হবে। বাড়িঘর থেকে সংগ্রহ করা বর্জ্য এই চিমনির মাধ্যমে কন্টেইনারে ফেলা হবে। চিমনির মুখে থাকবে স্প্রিং লোডেড দরজা। ধাক্কা দিলে এ দরজা খুলবে এবং বর্জ্য ফেলার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে লেগে যাবে। বর্জ্যভর্তি কন্টেইনার বের করে সঙ্গে সঙ্গে ওই গর্তে খালি কন্টেইনার স্থাপন করা হবে। এরপর স্টিলের ঢাকনা নামিয়ে দেয়া হবে।
কমোডর এম কে বখতিয়ার বলেন, পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে পাঁচ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের পর পরিচালনা শুরু হলে এর ভালো-মন্দ দিকগুলো ধরা পড়বে। ভালো ফলাফল পেলে আরো প্রকল্প হাতে নেয়া হবে। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে এ ব্যবস্থা চালু আছে। ওই সব দেশ এ জন্য আলাদা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করছে। তবে আমরা আপাতত দেশীয় পদ্ধতি ব্যবহার করব।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন