গ্রীষ্মকালীন নানা দেশীয় ফলের মধ্যে বাঙ্গি অন্যতম ফল। এ ফলটিকে ফুটিও বলা হয়। চৈত্র, বৈশাখ মাসে দেশের সর্বত্রই প্রচুর পরিমাণে বাঙ্গি পাওয়া যায়। দামেও এটা বেশ সস্তা। বাঙ্গি খাদ্য উপাদানে ভরপুর। এর পুষ্টি উপাদান মানব দেহকে নানা রোগের আক্রমণ থেকে বাচিঁয়ে রাখে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ বি, সি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন এবং ওমেগা ৩ ও ৬ পাওয়া যায়। মৌসুমী এ ফলটি খেয়ে দেহের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করতে পারি।
উদ্ভিদ পরিচিতিঃ বাঙ্গি গাছ এক ধরনের লতানো উদ্ভিদ। ফুল হলুদ, ঘন্টাকৃতির। ফল গোলাকার, মসৃণ বা লম্বা আকৃতির, অথবা মিস্টি কুমড়ার মতো ভাজঁযুক্ত। ফল কাচাঁ অবস্থায় সবুজ, পাবালে হলুদ হয় এবং ফেটে যায়।
ফলটির ভিতরের অংশ ফাঁপা এবং বীজ থাকে।
রাসায়নিক উপাদানঃ উদ্ভিদ বিদদের মতে ফলের বৃন্তে থাকে কিউকার বিটাসিন বি এবং ই, স্টেরল ও কিউকার বিটিন। ফলে থাকে ফেরুলিক ক্যাফিক এবং ক্লোরোজেনিক এসিড।
পুষ্টি উপাদানঃ পুষ্টি বিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম তরতাজা বাঙ্গিতে পুষ্টি উপাদান হলো নি¤œ রুপ। তবে জাত ও মাটির গুণে উপাদান কম বেশি হতে পারে। খাদ্য শক্তি ১০ কিলো ক্যালোরি, জলীয় অংশ ৭৩.২ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেড ১২ গ্রাম, ভিটামিন সি ৫৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ৮৫ মিলিগ্রাম, ০.৯ গ্রাম আঁশ, ২.৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন কে ২১ মাইক্রোগ্রাম ফলেট, আমিষ ২.৯ গ্রাম, শর্করা ২৩.৮ গ্রাম, ভিটামিন বি-১ ৭.০২ মিলিগ্রাম, বি-২ ১১.০৫ মিলিগ্রাম, পটাসিয়াম ৪১৭ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ২৩ মিলিগ্রাম, ফলিক এসিড ৩৩ মাইক্রোগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ ০.০৪১ মিলিগ্রাম তাছাড়া এ আরো থাকে লিউটিন, জিয়াজ্যান্থিন, ফসফরাস ইত্যাদি পাওয়া যায়।
আমাদের শরীরের পুষ্টি উপাদান পূরণ করতে বাঙ্গির জুড়ি নেই। প্রচন্ড গরমে মানুষের দেহ থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়। এতে শক্তির অপচয় হয় এবং দেহ অবসাদ ও নিজতেজ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় আমাদের সুস্থ জীবনযাপনের জন্য প্রচুর পানি পান করতে হয়। এ ক্ষেত্রে বাঙ্গি দিয়ে তৈরী করা শরবত পান করলে শরীর ঠান্ডা হয় প্রচুর শক্তি ফিরে আসে। তাছাড়া বাঙ্গি আমাদের নানা রোগ প্রতিরোধ কাজ করে-
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে আশঁ থাকে যা আমাদের দেহের শক্ত পায়খানাকে নরম করে দেহ থেকে বের করে দেয়। হজম পক্রিয়া স্বাভাবিক রাখে পেটে গ্যাস জমতে দেয় না। এসিডিটি দূর করে।
উচ্চরক্ত চাপ কমায়ঃ বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকে। যা রক্ত চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং উচ্চ রক্ত চাপকে কমিয়ে দেয় এবং দেহের ও মাথার ¯œায়ুগুলোকে শীতিল রাখে। শিরা ও ধ্বনির ভিতরে কোষগুলো কে শীতল রাখে। অনেকেই বাঙ্গি চিনি বা লবণ মিশিয়ে খান চিনিকে বলা হয় সাদা বিষ, আর লবণ রক্তচাপ ও শরীর মোটা হওয়ার প্রবনতা বাড়ায়। তাই এসব দিয়ে খাবেন না।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করেঃ বাঙ্গিতে চিনির পরিমাণ নেই বললেই চলে। বাঙ্গিতে অন্যান্য গুরুত্বপূণ্য উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে। বাঙ্গির অন্যান্য গুরুত্বপূণ্য উপাদান ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ রাখে।
শরীরে চর্বি জমতে দেয় নাঃ বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে উপকারী কার্বো হাইড্রেড রয়েছে। এটি সহজে ভেঙ্গে শরীরের সাথে মিশে যায়। আর পটাশিয়ামের উচ্চ মাত্রা পেটের অনাকাঙ্খিত চর্বিগ্রলোকে গলিয়ে বের করে দেয়। বাঙ্গিতে কোনো কোলেস্টেরল নেই। তাই খাদ্যে দেহের ওজন বেড়ে যাওয়ার ভয় থাকে না তাই নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন।
চোখ সুস্থ সবল রাখেঃ বাঙ্গিতে অধিক হারে ভিটামিন এ ও বিটা ক্যারোটিন যা চোখের নানা রোগ প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টি শক্তি প্রখর করে। বাঙ্গির জ্যাস্থিন নামের ফ্লাভিনয়েড বয়স্কদের চোখের নানা রোগ নিরাময় করে। চোখের ছানি পড়া প্রতিরোধ করে।
বাধ্যর্ক রোধ করেঃ বাঙ্গিতে বিভিন্ন খনিজ উপাদান সহ প্রচুর পরিমাণে বিটা- খ্যারোটিন, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম ভিটামিন সি দেহের চামড়াকে সতেজ ও সবল রাখে, সূর্যের ক্ষতিকর আলট্রা রশ্মির হাত থেকে চামড়াকে বাচিঁয়ে রাখে। ব্রণ ও একজিমা সহ চর্ম রোগ প্রতিরোধ করে। চামড়াকে ভাঁজ পড়তে দেয় না ফলে বার্ধক্য রোধ করে। তারুণ্য ধরে রাখে।
কিডনি সুস্থ রাখেঃ মানব দেহের বর্জ পদার্থ বের করে দেওয়ার গুরুত্বপূর্ন অঙ্গ হলো কিডনি। বাঙ্গিতে অক্্িরকাইন নামে একটি উপাদান থাকে যা কিডনির কার্যকারিতা সবল রাখে এবং কিডনির সম্যস্যায় বেশ উপকারি। এ উপাদান টি কিডনিতে পাথর হতে দেয় না এবং ছাঁকনিগুলো পরিষ্কার রাখে।
চুল পড়া রোধ করেঃ বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ, বি, সি এবং গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ইন্সনিটোল আমাদের মাথায় চুল সবল রাখে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে ও চুল পড়া প্রতিরোধ করে। তাই চুলের সুস্থতার জন্য প্রতিদিন এক গøাস বাঙ্গির শরবত খান, উপকার পাবেন।
সর্দি কাশি দূর করেঃ বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভিটামিন সি ও বিটা ক্যারোটিন থাকে। যা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ফলে সহজে সর্দি, কাশি হয় না এবং সহজে ঠান্ডা লাগে না। এসব উপাদান দেহের কাটা ছিঁড়া, ঘাঁ বা ক্ষত সারতে সাহায্য করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
হাঁড় মজবুত করে: বাঙ্গিতে থাকা খনিজ উপাদান জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, সালফার উচ্চ মাত্রায় থাকে। এগুলো দেহের হাড় ঘঠন সবল করে এবং ভঙ্গুরতা রোধ করে। হাড়ের নানা সমস্যা দূর করে হাড় মজবুত করে। বৃদ্ধ বয়সে হাড়ের রোগ অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করে।
রক্ত শূন্যতা দূর করে:- বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমানে ফলিক এসিড থাকে যা দেহের রক্ত তৈরি করে হিমোগেøাবিনের মান বজায় রাখে। বাঙ্গিতে থাকা লৌহ দেহের রক্ত শূন্যতা দূর করে। এ খাবারটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য খুবই উপকারি। এটি মা ও শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরন করে সবল শিশু গড়ে তুলে।
পেট ঠান্ডা রাখে:- অতিরিক্ত গরমে সবচেয়ে উপকারি পানীয় হলো বাঙ্গির শরবত। বাঙ্গির রস পেটকে ঠান্ডা রাখে এবং শরীরের পুষ্টির চাহিদা পূরন করে দেহের ক্লান্তি দূর করে। পেটে গ্যাস জমতে দেয় না। দেহে পানির সমতা বজায় রাখে। এসিডিটি, আলসার, ক্ষুধামান্দা রোধ করে মুখের রুচি বৃদ্ধি করে।
সর্তকতা:- পুষ্টিগুন বেশি দেখে কোন ফলই বেশি খাবেন না। ডায়াবেটিস রোগিরা অতিরিক্ত খাবেন না, রক্তে সুগার বেড়ে যেতে পারে। যাদের কিডনির সমস্যা আছে তাদের এফল না খাওয়াই ভালো। বাঙ্গিতে সরবিটল ও আশঁ থাকে। যা অতিরিক্ত খেলে ডায়রিয়া ও গ্যাসের সমস্যা হতে পারে।
শিক্ষক স্বাস্থ্য বিষয়ক কলাম লেখক
ফুলসাইন্দ দ্বি-পাক্ষিক উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ,
গোলাপগঞ্জ, সিলেট।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন