সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৭ মে, ২০২২, ১২:০২ এএম

প্রায় আড়াই মাস ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারির রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার মধ্য দিয়ে এ যুদ্ধের সূচনা হয়। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও তাদের মিত্রদেশগুলো এর তীব্র বিরোধিতা করে এবং রাশিয়ার ওপর একের পর এক অর্থনৈতিকসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। আপাত দৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ পদক্ষেপকে মনে হতে পারে, তারা এ যুদ্ধের বিপক্ষে এবং অপর পরাশক্তির একটি স্বাধীন দেশ দখলের জন্য এ যুদ্ধ বাঁধিয়েছে। তবে বিশ্বের রাজনীতিবিদ ও বিশ্লেষক থেকে শুরু করে যুদ্ধবিশারদদের অনেকের মতে, এ যুদ্ধের নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর ইন্ধন রয়েছে। মুখে মুখে যুদ্ধবিরোধী কথা বললেও যুদ্ধ বন্ধের কোনো বাস্তবসম্মত উদ্যোগ তারা নিচ্ছে না। রাশিয়াকে হুমকিÑধমকি এবং কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলছে। সংকটের মূলোৎপাটনে মনোযোগ দিচ্ছে না। এতে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলো যুদ্ধ বন্ধ হোক, তা চায় না। বরং যুদ্ধকে প্রলম্বিত করার এক ধরনের অপকৌশল অবলম্বন করছে। শ্বেতাঙ্গ বিশ্ব একজোট হয়ে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। এর সামগ্রিক নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া এখন বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে।

বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যুদ্ধ লাগলে তার নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষ করে পরাশক্তি ও ক্ষমতাধর দেশগুলো যুদ্ধে লিপ্ত কিংবা যুদ্ধ বাঁধালে তা বিশ্বশান্তি বিনষ্ট করে দেয়। এতে অনুন্নয়নশীল ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে সারাবিশ্বে পড়তে শুরু করেছে। খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের সাপ্লাই চেইনে বিঘ্ন ঘটায় করে হু হু করে সবকিছুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতেও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি শংকাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমন পরিস্থিতিতেও যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশ তথা শ্বেতাঙ্গ দেশগুলো যুদ্ধ বন্ধের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। জাতিসংঘও এক্ষেত্রে অনেকটা নীরব ভূমিকা পালন করছে। যুদ্ধকে প্রলম্বিত করার এই অভিসন্ধির কারণ কি? এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষকরা যুদ্ধের শুরুতেই বিভিন্নভাবে দিয়েছেন। তারা মনে করছেন, এর নেপথ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর অস্ত্র বাণিজ্যের স্বার্থ রয়েছে। তাদের উৎপাদিত অস্ত্রের বাজার চাঙ্গা করতে যুদ্ধের প্রয়োজন। সেটা মধ্যপ্রাচ্য থেকে শুরু করে সর্বশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পর্যন্ত বিস্তৃত। এতে দেশগুলোর কতিপয় মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট এবং ক্ষমতাকেন্দ্রিক ব্যক্তি লাভবান হলেও সেসব দেশের সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিচ্ছে না। এটা এক ভয়াবহ স্বার্থান্বেষী মনোভাব। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ না নিয়ে তা দীর্ঘায়িত করার দিকে ঠেলে দেয়ার মধ্যে এই অস্ত্র বাণিজ্য মুখ্য ভূমিকা রাখছে। তা নাহলে, যুদ্ধ বন্ধে তারা ত্বরিৎ পদক্ষেপ ও আলাপ-আলোচনার উদ্যোগ কিংবা মধ্যস্থতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হতো। তা না করে রশিয়ার ওপর বিভিন্ন ধরনের নিষেধাজ্ঞা দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও অবনতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, রাশিয়ার ওপর আরোপিত এই নিষেধাজ্ঞায় যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শ্বেতাঙ্গ বিশ্ব ছাড়া অন্য কোনো দেশ শামিল হয়নি। চীন, জাপান, ব্রাজিল, আফ্রিকা ও ল্যাটিন আমেরিকাসহ মুসলিম বিশ্ব নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করেনি। প্রত্যেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এ থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের অবস্থানের বিপরীতে বাকি বিশ্ব রয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, যুদ্ধ প্রলম্বিত হওয়ায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মানবিক বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণের আমদানি-রফতানি বা প্রাপ্তি কঠিন হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন দেশ রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষমতার পরিবর্তন কিংবা চরম অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যে পড়ছে। শ্রীলঙ্কার মতো দেশ দেউলিয়ার পথে। পাকিস্তানে ইমরান খান সরকারকে পছন্দ না হওয়ায় ক্ষমতার পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের নেপথ্য ভূমিকা রয়েছে বলে ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে। আফ্রিকার দরিদ্র দেশগুলোর প্রায় দুইশ’ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ভোজ্য তেলের দামবৃদ্ধিসহ পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, এ যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না থাকায় বিশ্বের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে।

করোনা মহামারিতে পুরো বিশ্ব স্থবির হয়ে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়ার পর অনেকটা নিউ নরমাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যখন যাচ্ছিল, তখনই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ তাতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। এক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে না উঠতে আরেক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়ে বিশ্ব এক নতুন শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। এই পরিস্থিতির উদ্গাতা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোকে বিশ্লেষকরা ইতোমধ্যে দায়ী করেছেন। এ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন শ্বেতাঙ্গ বিশ্ব একদিকে, পুরো বিশ্ব তার বিপরীত অবস্থানে রয়েছে। তাদের মনে রাখা উচিৎ, এতে কিছু সময়ের জন্য লাভবান হলেও এর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থেকে তারাও মুক্ত থাকতে পারবে না। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর প্রভাব তাদের ওপরও পড়বে। এ প্রেক্ষিতে, যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদেশগুলোর উচিৎ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে কার্যকর ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। দ্রুত আলোচনার উদ্যোগ নিয়ে যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ এবং আলোচনার টেবিলে সংকট নিরসেনের ব্যবস্থা নেয়া। জাতিসংঘকে এ ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (7)
Omar Faroque Chowdhury ৭ মে, ২০২২, ৮:৪৩ এএম says : 0
আমার ধারণা রাশিয়া ডলারের বিকল্প রুবেলকে বিশ্বে শক্তিধর করার জন্য চিন সহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্র একজোট হয়েছে। ফলে ডলালের ব্যাবস্হা নষ্ট ,নেটোকে ভেঙ্গে দেয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নে ভাঙ্গন ধরা পর্যন্ত এই যুদ্ধ চালিয়ে যাবে রাশিয়া।
Total Reply(0)
Syed Mohiuddin ৭ মে, ২০২২, ৮:৪৪ এএম says : 0
রাশিয়া এরমধ্যে যেসকল অঞ্চলকে স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছে পূর্ণাঙ্গ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন স্থানীয়দের মধ্যে দিয়ে পরবর্তীতে ইউক্রেনের রাজধানী কিউবেক নিয়ন্ত্রণ নিবে এবং পুতুল সরকার বসিয়ে ফিরে আসবে পরবর্তীতে গর্বাচেভ এর আমলে যেসকল অঞ্চল রাশিয়া থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল যেমন লিথুনিয়া লাটভিয়া জর্জিয়া এমন অঞ্চল গুলিকে পুতুল সরকার রাশিয়া ন ফেডারেশনের নিয়ন্ত্রণে পর্যাক্রমে আনবে কেননা রাশিয়া বুঝতে পেরেছে ন্যাটো অধিভুক্ত রাশিয়ার সীমান্ত অঞ্চলের দেশ গুলি সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি স্বরূপ তাই ন্যাটো ছাড়ো আগের মত রাশিয়ান ফেডারেল ইউনিয়নের অধীনে আস
Total Reply(0)
Babul Khan ৭ মে, ২০২২, ৮:৪৪ এএম says : 0
আমার মনে হয় অনেক গভীরতা রয়েছে এই যুদ্ধে, এবং একাদিক সূত্রে রয়েছে। যদি অতিথীতে যাই তবে ইরাকের প্রতি অন্যয়, ফিলিস্তিনি ইজরাইল সহ ন্যায় অন্যয়ের বিষাদগার প্রশ্নবিদ্ধ, অনেক গুরুত্ব পূর্ন বিশ্ব রাজনিতীর নেত্রীতের অংশ বিশেষ এ যুদ্ধে বহমান।
Total Reply(0)
Md. Mahbubul Islam Khan ৭ মে, ২০২২, ৮:৪৫ এএম says : 0
সাম্রাজ্যবাদ, মুসলিম হত্যাকান্ড ও নিধনের অপশক্তির বিরুদ্দ্বে একমাত্র রাশিয়ার মহাবিজয়ই মুসলমানদের শ্বস্তি-শান্তি ফিরে আসতে পারে এবং সাম্রাজ্যবাদী,আধিপত্যবাদী, বিশ্বমোড়লগিরী শক্তির লাগাম টেনে ধরা যেতে পারে। আল্লাহ আমাদের সহায়। অভিনন্দন রাশিয়া।
Total Reply(0)
Md Iqbal ৭ মে, ২০২২, ৮:৪৭ এএম says : 0
সব মিলিয়ে আমি মনে করি সমস্ত দোষ উইক্রেনের কৌতুক প্রেসিডন্ট জেলেনেক্সির । আমেরিকা - নেটোর যত দোষ , তার চেয়ে শত গুন বেশি দোষ , এই নব্য হিটলার রূপি জেলেনেক্সির । সে স্বেচ্ছায় দেশটারে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে শুধু তাই নয় বিশ্বটাকে ধীরে ধীরে বিশ্ব যুদ্ধর দিকে নিয়ে যাচ্ছে । আবেগ দিয়ে রাজনীতি করা যায় কিন্তু আবেগ দিয়ে যুদ্ধ করা বা যুদ্ধ জয় করা যায় না । সে প্রতি এমুহূর্ত দেশের সাধারণ মানুষদের যুদ্ধের দিকে অনুপ্রাণিত করে চলছে । অন্য দিকে সারাক্ষণ বিশ্ব দরবারে আবেদন করে যাচ্ছে উইক্রেনকে বাচানোর জন্য । কিন্তু দিন দিন উইক্রেন ধ্বংস স্তুপে পরিনত হতে চলছে । রাশিয়া একটি সুপার পাওয়ার এইটা সে অনুধাবন করতে পারে না অথচ আমেরিকা বা নেটো তাকে রক্ষা করবে এইটা সে মনে মনে পোষণ করে চলছে-- মূর্খ কোথাকার । আমেরিকা বা নেটো ও তো কত গুলি বধা এবং বাধ্য বাদকতা আছে । তারাও তো সেই বাধ্য বাধকতা অতিক্রম করতে পারে না । উইক্রন একটা সুন্দর দেশ , আর জন গন ছিলো আরো ভালো এবং শান্তি প্রিয় কিন্তু অত্যান্ত দূর্ভাগ্যের বিষয় এই কৌতুক অভিনেতা জেলেনেক্সির মত একটা হিটলার প্রেসিডেন্ট তার দেশে সওয়ার হয়েছে । এর চেয়ে অনেক অনেক গুন কম দোষপূর্ন মুসলিম দেশের প্রসিডেন্টদের সমূলে হত্যা করে চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দিয়েছে এই আমেরিকা ও নেটো । এখন ইন্টারনেট মোবাইলের যুগে মূর্খ থেকে শিক্ষিত সবাই তা দেখেছে ।
Total Reply(0)
Imtius Hossain ৭ মে, ২০২২, ৮:৪৮ এএম says : 0
ইউক্রেনকে যদি সারাজীবন ও অস্ত্র দে তবুও রাশিয়াকে ঠেকাতে পারবে না,,, রাশিয়া যদি চাইতো তাহলে আরো বেশি করে হামলা চালাতো কারন,, রাশিয়া চাইনা নিরীহ জনগন মিত্যুবরন করুক
Total Reply(0)
Sikandar Ali ৭ মে, ২০২২, ৮:৪৮ এএম says : 0
এই যুদ্ধ অনেক আগেই শেষ হয়ে জেত কিন্তু আমেরিকা তার দেশের অস্ত্র বাজার চাঙা করার জন্য আর রাশিয়া কে একটা উছিলায় কম জুরি কারার জন্য এই যুদ্ধ বন্ধ হচ্ছে না
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন