ফেনীর বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের হামলার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছে জেলা বিএনপি। গতকাল সকাল ১১টার দিকে শহরের ইসলামপুর রোডস্থ জেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকারি দলের সন্ত্রাসীদের ভয়ে বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে ঈদ করতে পারেনি। সন্ত্রাসীরা বিএনপির বিভিন্ন ইফতার মাহফিলে হামলা চালিয়ে ইফতার সামগ্রী লুটপাট এবং প্যান্ডেল ভাংচুর করে হামলা চালিয়েছে। এসব বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করা হলে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং পুলিশ ও সন্ত্রাসীরা একসাথে বসে চা খাচ্ছে।
গত ৪ মে ঈদের পরদিন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপির ফলেশ্বর বাড়িতে সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা অবরুদ্ধ করে রাখে। ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর নবী মেম্বার ও এই ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ড সভাপতি আইয়ুব আলী মিলন ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে গেলে মসজিদের সামনে তাদের লাঠি ও রড দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেছে ৬ নং ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ফারুক ও সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম। এসময় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক এম এ খালেক, এয়াকুব নবী ও আলা উদ্দিন গঠন, সদস্য সাইফুর রহমান রতন, জয়নাল আবেদীন বাবলু, পৌর বিএনপির আহবায়ক বাবুল, যুগ্ম আহবায়ক খুরশিদ আলম, থানা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বাবু তপন কর, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক খোকন, ফেনী সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক মানিক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
শেখ ফরিদ বাহার আরো বলেন, ১৮ এপ্রিল রামপুর ১৫নং ওয়ার্ডে বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী যুবদল নেতা মাঈন উদ্দিন মায়াকে যুবলীগ সন্ত্রাসীরা তার বাড়ির সামনে থেকে ধরে নিয়ে বেদড়ক মারধর করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। তার নামেও কোন মামলা নেই। ২৫ এপ্রিল আইনজীবী ভবনের নিচ থেকে ফেনী সরকারী কলেজ ছাত্রদলের আহবায়ক আবদুল হালিম মানিককে ছাত্রলীগ সন্ত্রসীরা তুলে নিয়ে কলেজ কম্পাউন্ডে আটক করে রাখে। পরে ফেনী মডেল থানার পুলিশ তাকে উদ্ধার করেছে। ২৭ রমজান ধলিয়া ইউনিয়ন বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠন স্থানীয় মমতাজ মিয়ার হাটে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। সেখানে ধলিয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও যুবলীগ সন্ত্রাসীরা ইফতার মাহফিলে হামলা চালিয়ে ইফতার সামগ্রী লুটপাট করে প্যান্ডেল ভাংচুর করেছে। ২৮ রমজান লেমুয়া ইউনিয়ন বিএনপি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করলে সেখানে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ নামধারী সন্ত্রাসীরা হাজির হয়ে ইফতার মাহফিল না করার জন্য নিষেধ করে। একইদিন মোটবী ইউনিয়ন বিএনপি ইফতার মাহফিলের আয়োজন করলে সেখানে বাধা দেয়া হলে ইফতারের বরাদ্দকৃত অর্থ স্থানীয় হতদরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হয়। ২৭ এপ্রিল সোনাগাজী উপজেলার মতিগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির ইফতার মাহফিলে আওয়ামীলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা করে ইফতার সামগ্রী লুট করে বিএনপি নেতাকর্মীদের মারধর করেছে।
তিনি আরো বলেন, ঈদের পরদিন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপির গুম হওয়া ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত নেতাকর্মীদের পরিবারের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করতে যায় জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। সেইদিন শর্শদীতে বিএনপি নেতাকর্মীরা ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করতে মিলিত হলে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ১০-১৫জন নেতাকর্মীকে মারাত্মক আহত করেছে। ফেনী সদর উপজেলা যুবদলের আহবায়ক নিজাম উদ্দিন পাটোয়ারী ও পৌর যুবদলের সদস্য সচিব নিজাম উদ্দিন সোহাগকে বেদড়ক মারধর করেছে। ঈদের পরদিন পুরাতন পুলিশ কোয়ার্টার বাসা থেকে পৌর যুবদলের আহবায়ক জাহিদ হোসেন বাবলুকে রাত ১১টার দিকে বিনা কারনে র্যাব তুলে নিয়ে যায়। এছাড়াও ফেনী পোষ্ট অফিস সংলগ্ন ফেনী সেন্টারে সন্ত্রাসীরা অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। মার্কেটে থাকা সিসি ক্যামেরা সন্ত্রাসীরা ভেঙ্গে নিয়ে যায় এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি সাইদুর রহমান জুয়েলের অফিসেও তালা ঝুলিয়ে দেয়। ৩০ রমজান ছনুয়া ইউনিয়ন ছাত্রদলের কর্মী মুজাহিদ ও হৃদয়ের উপর স্থানীয় যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে আহত করে পুলিশে সোপর্দ করে।
শেখ ফরিদ বাহার বলেন, এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা জানায় উপরের নির্দেশে তারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। উপরের নির্দেশ মানে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তারা জানায় নিজাম উদ্দিন হাজারীর নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপির কাউকে কোথাও একত্রিত হতে দেয়া হবে না। তারা যদি সংগঠিত হয় তাহলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সহজে পার পাবে না।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন