জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে বসতভিটার জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে হামলায় আহত ও ক্ষতিগ্রস্থ ভিক্ষুক পরিবারকে উল্টো মামলায় জড়ানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গুরুতর আহতরা চিকিৎসাধীন থাকলেও তাদের আসামী করায় পুলিশ তাদের পিটিয়ে ও টেনেহিঁচড়ে হাসপাতাল থেকে হাজতে পাঠিয়েছে। আর এ ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার (১০ মে) দুপুরে সরিষাবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশের এমন ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্র জানায়, সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসি বাজার এলাকার মৃত মহির উদ্দিনের ছেলে ভিক্ষুক আব্দুল জলিল (৬৪) ২০ শতক জমিতে বসতভিটা বানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন। প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান স¤প্রতি ওই জমি তাদের দাবি করায় দুইপক্ষের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এ নিয়ে মামলা হলে আদালত আব্দুল জলিলের পক্ষে রায় দেয়। আদালতের আদেশ অমান্য করে সোমবার সকালে প্রতিপক্ষ মুজিবুর রহমান দলবল নিয়ে আব্দুল জলিলের পরিবারের ওপর হামলা চালায়। এসময় রামদা, লোহার রড় ও লাঠিসোঁটার আঘাতে আব্দুল জলিলসহ পরিবারের সবাই আহত হন। গুরুতর আহত আহত আব্দুল জলিল (৬৪), তার স্ত্রী লাইলী বেগম (৫০), বড়ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক (৩০), মেজো ছেলে ওয়াজকরোনি (২৫), ছোটছেলে হামদাদুল হককে (১৬) উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরিবারের অন্য সদস্য জসিম মিয়াকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এদিকে ঘটনার পর উল্টো মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে চিকিৎসাধীন ৪ জনসহ ১৫ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার পর মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এজাহারভূক্ত ৪ আসামীদের আটক করে। হাসপাতালের শয্যা থেকে পুলিশ তাদের চ্যাংদোলা করে নামিয়ে হাত-মুখ চেপে ধরে পিটায় এবং টেনেহিঁচড়ে দ্বিতীয়তলা থেকে নিচতলায় নেওয়া হয়। এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। প্রায় ঘণ্টাখানেক তাদের থানাহাজতে রাখার পর বিকেলে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
আব্দুল জলিলের জামাতা চান মিয়া, মেয়ে জুলেখা বেগম ও ভাতিজা রানা মিয়া অভিযোগ করেন, তারা মামলা করতে গেলেও পুলিশ তাদের মামলা নেয়নি। উল্টো আব্দুল জলিলকে থানায় আটকে রাখা হয়। পরে তার শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি হন। রাতে উল্টো অভিযুক্তদের মামলা নিয়ে হাসপাতাল থেকে আটক করা হয়।
সরিষাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মীর রকিবুল হক বলেন, মুজিবুর রহমান বাদী হয়ে সোমবার রাতে আব্দুল জলিলসহ অন্যদের আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন। এরপর হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে আসামীদের আটক করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় টেনেহিঁচড়ে আটকের বিষয়ে তিনি বলেন, হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়ায় তাদের আটক করা হয়েছে৷ নইলে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হতো। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ রাজবংশী জানান, আহতদের চিকিৎসা চলাকালীনই পুলিশ হাসপাতাল থেকে রোগীদের ছাড়পত্র নিয়েছে। চিকিৎসাধীন আসামীদের যেভাবে আটক করা হয়েছে, তা অমানবিক বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এদিকে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ রুপ ধারনা করতে পারে এই ভেবে সুচতুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর রকিবুল হক রাতেই এসআই আলতাফ হোসেন, এসএই সাইফুল ইসলাম, এসআই ওয়াজেদ ও এসএই মমতাজকে থানা থেকে ক্লোজ করে নেয়। কিন্তু ভিক্ষুক পরিবারের দাবী এসআইদের নয় সরিষাবাড়ী থানার ওসিকেই থানা থেকে ক্লোজ করা উচিৎ। কারন টাকা ছাড়া সে কিছুই বুঝেনা। টাকা দিতে পারলে আমাদের মামলাটা তিনি আগে নিতেন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন