রাষ্ট্রীয় জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানের সীমাহীন উদাসীনতা অবহেলা ও অজ্ঞতায় রাজধানীসহ চাঁদপুর হয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথে নিরাপদ যাত্রী পরিবহন ক্রমাগত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে। সাধারণ যাত্রীগণ জিম্মী বেসরকারি নৌযান ব্যবসায়ীদের কাছে। অভ্যন্তরীণ জাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি’র হাতে নতুন পুরনো ৭টি যাত্রীবাহী নৌযান থাকার পরেও ঢাকার সাথে চাঁদপুর-বরিশাল হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের দৈনিক রকেট স্টিমার এখন চলছে সপ্তাহে মাত্র দুদিন। আর ব্যয়বহুল দুটি নৌযান পরিচালনে প্রতি ট্র্রিপে লোকসান হচ্ছে প্রায় ৩ লাখ টাকা।
অথচ সংস্থার হাতে ৪টি ব্যয় সাশ্রয়ী ও যাত্রী বান্ধব প্যাডেল জাহাজ থাকলেও ‘পিএস অস্ট্রিচ’ বিনা দরপত্রে ইজারা দেয়ার পরে অবশিষ্ট ৩টি দীর্ঘদিন বসিয়ে রেখে এখন ইজারা প্রদানে দরপ্রস্তাব আহ্বান করেছে সংস্থাটি। রেলওয়ে থেকে নামমাত্র মূল্যে সংগ্রহ করা স্ক্রু-হুইল যাত্রীবাহী নৌযান ‘এমভি সোনার গাঁ’র পেছনে আরো ১০ কোটি টাকা ব্যয়ের পরে একইভাবে বিনা দরপত্রে আরেকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ইজারা দেয়া হয়েছে। ইজারাদার নৌযানটি আবার সরকারি অপর একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে ভাড়া দিয়ে মধ্যসত্ত ভোগীর ভূমিকায় রয়েছেন।
কিন্তু নিরাপদ যাত্রী সেবা প্রদানের লক্ষ্যে গঠিত রাষ্ট্রয়ত্ব বিআইডব্লিউটিসি এখন তার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে কতিপয় ইজারাদারের সেবায় ব্যস্ত বলেও অভিযোগ যাত্রী সাধারণের। ফলে বেসরকারি খাতের খামখেয়ালী ও নৈরাজ্যের কাছেই ক্রমাগত জিম্মী হয়ে পড়ছে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীগণ। এমনকি অতি সম্প্রতির ঈদুল ফিতরের আগে ও পড়ে সংস্থাটি রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলের নিরাপদ যাত্রী পরিবহনে কোনো বিশেষ সার্ভিস দুরের কথা নিয়মিত সার্ভিসও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় আগ্রহ দেখায়নি। শুধুমাত্র ঈদের আগে ও পড়ের তিন দিন করে ব্যয়বহুল ‘এমভি বাঙালী’ ও ‘এমভি মধুমতি’র সাহায্যে যাত্রী পরিবহন করেই সব দায়িত্ব শেষ করেছে সংস্থাটি।
ফলে ঈদে ঘরে ফেরা ও পরবর্তী সময়ে কর্মস্থলমুখী যাত্রীরা অঘোষিতভাবেই বেসরকারি নৌযান মালিকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ে। প্রতিটি বেসরকারি নৌযান ধারন ক্ষমতার তিনগুনেরও বেশি যাত্রী পরিবহন করলেও ভাড়াও আদায় করেছে বেশি। অথচ বিঅইডব্লিউটিসি’র জাহাজে যাত্রী ছিলনা সঠিক পরিচালন সময়সূচি প্রনয়নে ব্যর্থতার কারণে।
রাষ্ট্রয়ত্ব সংস্থাটির বিদ্যমান ৪টি প্যাডেল জাহাজ তৈরি হয় ১৯৩৮ থেকে ১৯৪৮ সালের মধ্যে। বাস্পীয় প্যাডেল হুইল এসব নৌযানে ১৯৮০ থেকে ৮২’ সালে হাইড্রালিক গীয়ারসহ মেরিন ডিজেল ইঞ্জিন সংযোজন করে পরিপূর্ণ পুনর্বাসন করা হয়। কিন্তু গীয়ারে ত্রুটির কারণে মাত্র ৩ হাজার ঘণ্টা চলার পরেই নৌযানগুলো বিকল হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে ১৯৯৫Ñ৯৬ সালে মেকানিক্যাল গীয়ার সংযোজনসহ আরেক দফা পুর্নবাসন করে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথে চালু করা হয়। ‘পিএস টার্ণ’ জাহাজটিতে নতুন ইঞ্জিন সংযোজন সহ পুনর্বাসন করা হয় ২০০২ সালে। দীর্ঘদিন ‘পিএস অস্ট্রিচ, পিএস মাহসুদ, পিএস লেপচা ও পিএস টার্ণ’ জাহাজগুলো অত্যন্ত নির্ভরতার সাথে যাত্রী পরিবহন করছিল।
কিন্তু বছর চারেক আগে আকষ্মিকভাবেই কোন ধরনের দরপত্র আহ্বান ছাড়াই মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পিএস অষ্ট্রিচ জাহাজাটি দীর্ঘমেয়াদী ইজারা প্রদান কর হয়। অপরদিকে পিএস লেপচা ও পিএস টার্ণ জাহাজ দুটিও নানা অজুহাতে বসিয়ে রেখে ইজারার লক্ষ্যে প্রথম দফার দরপত্র আহ্বানের পরে দ্বিতীয় দফার প্রস্তুতি চলছে। পিএস মাহসুদ জাহাজটিও ৩ বছর বসিয়ে রেখে প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে মেরামত শেষে গত মার্চে যাত্রী পরিবহনে ফিরলেও মাস খানেকর মাথায়ই তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে গতকাল বুধবার বিআইডব্লিউটসি’র চেয়ারম্যান, পরিচালক-কারিগড়ি ও পরিচালক-বাণিজ্য’র সাথে সেলফোনে যোগোযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন