বিগত কয়েকমাস ধরে সারা দেশেই শিশু এবং বয়স্কদের ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। যদিও আমাদের দেশে বাচ্চাদের পায়খানার সমস্যা কম বেশি বছরজুড়েই দেখা দেয়। দূষিত পানি, অপরিস্কার ও অনিরাপদ খাদ্য, অপ্রতুল বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আর খাওয়া দাওয়ায় ভুল অভ্যাস বাচ্চাদের ডায়রিয়া বাড়িয়ে তোলে। উদ্বিগ্ন অভিভাবকের মনে প্রশ্ন দেখা দেয় এই অসুখের সময় বাবুকে কী খাওয়াতে হবে। এই লেখাতে তাদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি।
১। যেসব খাবার বেশি করে দিবেনঃ বুকের দুধঃ জন্মের প্রথম ছয় মাস শুধুমাত্র বুকের দুধ এবং দুই বছর বয়স পর্যন্ত পারিবারিক খাবারের সাথে বুকের দুধ নিশ্চিত করুন। ডায়রিয়া চলাকালীন বুকের দুধ পানিশূন্যতা পূরণ, পুষ্টি সরবরাহ এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
পারিবারিক খাবারঃ ছয় মাস পরবর্তী বাচ্চাদের ভাত, ভাতের মাড়, চিড়ার পানি, ঘরে তৈরি বিশুদ্ধ পানি সহ বানানো ফলের রস দিতে পারেন। কলা (কাঁচা এবং পাকা) দিবেন। এটি ডায়রিয়া সারানোর পাশাপাশি পটাসিয়াম লবণের যোগান দেয়। এই পটাসিয়ামের অভাবে ঘাড় ফেলে দেওয়া, পেট ফেঁপে যাওয়া থেকে শুরু করে হৃৎপিন্ডের সমস্যা পর্যন্ত হতে পারে। ডাবের পানিতেও প্রচুর পটাসিয়াম থাকে।
বারবার ঘরে তৈরি টক দৈ দিন। এটি অন্ত্রের ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
২। যেসব খাবার দিবেন নাঃ যেকোনো বাইরের দুধ (গরু, ছাগল, কৌটা), সুজি, সেরেলাক, হরলিকস্, কম্পøান জাতীয় কৌটা, দোকানের খাবার/ জুস দিবেন না। এগুলোতে বিদ্যমান কোন উপাদানের ইনটলারেন্সের কারনে পাতলা পায়খানা আরও বেড়ে যেতে পারে।
৩। খাওয়ার স্যালাইন/ রাইস স্যালাইনঃ স্যালাইনও এক প্রকার ওষুধ। এর কাজ পায়খানা কমানো নয়, পানি ও লবণ শূণ্যতা পূরণ করা। এটিও প্রয়োজেনের চেয়ে কম বা অনেক বেশী পরিমানে দেয়া যাবে না। এর পরিমাণ চিকিৎসক ঠিক করে দিবেন। অতিরিক্ত কিংবা ভুল নিয়মে (মগে বা গ্লাসে আন্দাজ মত পানি নিলে যা হয়) বানানো স্যালাইন শিশুর মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
৪। অ্যান্টিবায়োটিকঃ অধিকাংশ পানির মত পাতলা পায়খানায় অ্যান্টিবায়োটিকের ভূমিকা নেই। অধৈর্য্য হয়ে একটার পর একটা অ্যান্টিবায়েটিক দিবেন না। এতে ভালোর চেয়ে খারাপের সম্ভবনাই বেশী। তবে জিংক দিলে কিছুটা উপকার হতে পারে।
৫। শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করা লাগতে পারে যদি, নিস্তেজ/ ঘাড় ফেলে দিলে, পানিশূন্যতার লক্ষণ দেখা দিলে (চোখ বসে যাওয়া, অশ্রু শুকিয়ে যাওয়া, জিহ্বা শুষ্ক হওয়া, পেটের চামড়া ঢিলা হওয়া), প্রস্রাব কমে কিংবা বন্ধ হলে (৬-৮ ঘন্টা প্রস্রাব করেনি, কিংবা ১২ ঘন্টায় মাত্র ১-২ বার), একটানা বমি করলে (ঘন্টায় ৩ বারের বেশি), রক্ত পায়খানা কিংবা খিঁচুনি হলে।
ডায়রিয়া প্রতিরোধে হাত ধোয়ার অভ্যাস, পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, বিশুদ্ধ পানি পান, রাস্তার খোলা খাবার পরিহার ও খাবার ঠিক ভাবে সংরক্ষণ করার অভ্যাস করুন। এসব নিয়ম পরিচিত লোকদেরও জানান। ডায়রিয়া প্রতিরোধে সচেতন হোন।
ডা. আহাদ আদনান
শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ,
আইসিএমএইচ, মাতুয়াইল, ঢাকা।
মোবাইল: ০১৯১২২৪২১৬৮।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন