খুশকি আসলে কী?
খুশকি হচ্ছে মাথার ত্বকের শুকনো, মৃত কোষ। স্বাভাবিক নিয়মে কিছু মৃত কোষ সবার মাথাতেই থাকে, তা কিন্তু চোখে পড়ার আগেই ঝরে পড়ে যায়। সমস্যাটা যখন বাড়তে, তখনই তা বাইরে থেকে চোখে পড়ে। মাথার তালু চুলকায়, আবার চুলকোতে গেলেই ভুসভুসিয়ে উপরে উঠে আসে মৃত কোষ। চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে বা মাথা চুলকালে জামাকাপড় ভরে যায় খুশকিতে। চুলও ওঠে গোছা গোছা। সব মিলিয়ে বেশ বিরক্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
খুশকি হওয়ার কারণগুলি কী কী ?
খুশকির মূল কারণ হচ্ছে ফাঙ্গাল ইনফেকশন। অনেক সময় শ্যাম্পু করার পর চুল ভালো করে না ধুলে বা মাথার তালুতে কন্ডিশনার লাগিয়ে ফেললে এবং সেটা লাগাতার চালিয়ে গেলেও নাকি খুশকির সমস্যা হতে পারে। মৃত কোষে ফাঙ্গাস বা ছত্রাক বংশবৃদ্ধি করতে আরম্ভ করলে সমস্যাটা মাত্রা ছাড়ায়। খুশকি সমস্যা জনিত অনেকেই অভিযোগ করেন যে তাঁদের ত্বক অতি শুষ্ক বা অতি তৈলাক্ত হওয়ার কারণে সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সত্ত্বেও খুশকি পিছু ছাড়ে না। যাঁরা মাথার চুলে নিয়ম করে শ্যাম্পু ব্যবহার করেন না, তাঁদেরও খুশকির সমস্যা হতে পারে। সাধারণত অতি ব্যস্ততায় বা শীতকালে ঠান্ডার কারণে শ্যাম্পু করতে ইচ্ছে হয় না। শ্যাম্পু লাগালেও তা ভালো করে পানি ঢেলে ধোওয়া হয় না, ঝপ করে কোন রকমে গোসল শেষ করাতেই জোর দেন বেশিরভাগ। শ্যাম্পুর অবশিষ্টাংশ চুলের গোড়ায় জমলেই বিপদ!
যাঁরা গরম পানিতে গোসল করেন, তাঁদের খুশকির সমস্যা বেশি ভোগায়। চুল ধোওয়ার জন্য সব সময় ঘরের তাপমাত্রার পানি ব্যবহার করুন। গরম পানি মাথায় লাগালে পরিস্থিতি আরও সঙ্গীণ হয়ে উঠবে।
কিছু মানুষ স্ক্যাল্প সোরিয়াসিসে ভোগেন। সোরিয়াসিসের কারণেই তাঁদের মাথার ত্বকে অতিরিক্ত পরিমাণে কোষ তৈরি হয়, আঁশের মতো চামড়া উঠতে আরম্ভ করে। তার উপর ধুলো-ময়লা, স্ক্যাল্পে থাকা সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে নিঃসৃত তেল মিশে সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।
যারা নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খান, সারাদিনে প্রচুর পানীয় পান করেন, শরীরে আপাতদৃষ্টিতে কোনও সমস্যা নেই, তাঁদের সাধারণত খুশকির সমস্যা খুব বেশি ভোগায় না। তাই সুস্থ জীবনযাপনের উপর জোর দিন।
কীভাবে মুক্তি পাবেন খুশকির হাত থেকে?
যাঁরা স্ক্যাল্প সোরিয়াসিসে ভুগছেন, তাঁরা ডাক্তারের বাতলে দেওয়া বিধি মেনে চলুন। খুশকি নিরাময়ের চেষ্টা করার আগে সুনিশ্চিত করুন যেন তা আপনাকে বিব্রতই না করতে পারে। সে জন্য নিয়মিত মাথায় শ্যাম্পু করা প্রয়োজন। চুল অপরিষ্কার হলেই ধুয়ে ফেলুন, মাথার তালুতে যেন বাড়তি তেল ময়লা না জমতে পারে। শ্যাম্পুর ফেনা যেন চুলের ফাঁকে আটকে না থাকে, সেগুলি জমেও খুশকি হয় পরবর্তীকালে। শুস্ক আবহাওয়ায় বা শীতে কিন্তু আমাদের স্ক্যাল্পকে শুষ্কতার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য মাথার সেবাসিয়াস গ্লান্ডগুলি বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে, তাই চুলে বেশি তেলাভাব লক্ষ্য করতে পারেন। নিয়মিত শ্যাম্পু ছাড়া একেবারেই চলবে না এ সময়ে।
নারকেল তেল আর টি ট্রি অয়েল: নারকেল তেলেরও কিন্তু ফাঙ্গাস তাড়ানোর আর চুলকে খুশকিমুক্ত রাখার ক্ষমতা আছে! ৫ টেবিলচামচ নারকেল তেলের সঙ্গে ১০ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল মিশিয়ে নিন। তারপর মাথার তালুতে ভালো করে মাসাজ করে নিন এই মিশ্রণ। পরদিন সকালে মাইল্ড কোনও শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে নিতে পারেন। হাতে সময় না থাকলে অন্তত আধ ঘণ্টা এই মিশ্রণ মাথায় লাগিয়ে রাখুন। টি ট্রি অয়েল বজায় রাখবে চুলের প্রাকৃতিক ঝলমলেভাব।
মনে রাখবেন:
খুশকি একেবারে গোড়াতেই নিয়ন্ত্রণ করা খুব জরুরি। কারণ একবার বাড়তে আরম্ভ করলে তার নিরাময় কঠিন হয়ে পড়ে। কেন খুশকি হচ্ছে, সেটা জানার চেষ্টা করুন।
যদি খুশকি খুব বেড়ে যায়, তা হলে আপনার চুলের স্বাস্থ্যহানি হবে। মাথার তালু চুলকাবে বেশি, চুল পড়তেও পারে। তবে একবার খুশকি সেরে গেলে এবং মাথার তালু ফাঙ্গাসমুক্ত হলে ফের চুল গজাবে। স্কাল্প সোরিয়াসিস হলেও চুল পড়ে। এক্ষেত্রে কিন্তু ডাক্তারের পরামর্শমতো প্রডাক্ট ব্যবহার করা একান্ত আবশ্যক। বেশি রকম খুশকি সারাতে হলে সবচেয়ে কার্যকর হতে পারে মেডিকেটেড অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু। বাজারচলতি শ্যাম্পু ব্যবহার বন্ধ রাখুন কিছুদিনের জন্য।
নারকেল তেল, খাঁটি অলিভ অয়েল, টি ট্রি অয়েল খুশকি সারাতে কার্যকর বলে মনে করা হয়। প্রতিটির মধ্যেই অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টি ফাঙ্গাল গুণাগুণ বর্তমান। সেই সঙ্গে তেল চুলের ময়েশ্চরাইজারের জোগান দেয়। ফলে চুল থাকে নরম-কোমল। মনে রাখবেন খুশকি মুক্ত চুল অধিকতর সুরক্ষিত চুল। তাই এক নিয়ন্ত্রন করতে পারলে আপনার চুল থাকবে প্রানবন্ত ।
ডাঃ এস. এম বখতিয়ার কামাল
সহকারি অধ্যাপক (এক্স),
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
কামাল হেয়ার এন্ড স্কিন সেন্টার
বিটিআই সেন্টারা গ্রান্ড, ২য় তলা, ১৪৪, গ্রিণরোড ,ঢাকা ।
প্রয়োজনে-০১৭১১৪৪০৫৫৮।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন