শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

প্রকল্প বাস্তবায়ন বিলম্বে পিডির শাস্তি দেয়া উচিত

দক্ষিণ কোরিয়া-বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৩ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

সরকারি প্রকল্পের কাজ যথা সময়ে করতে না পারলে প্রকল্প পরিচালকের (পিডি) জেল জরিমানা এবং পদোবনতি এবং নির্ধারিথ সময়ে কাজ করতে পারলে পুরস্কার প্রমোশন দেয়া উচিত এমন দাবি করলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন। দক্ষিন কোরিয়ায় এই নিয়ম চালু রয়েছে; তিনি এ ব্যাপারে দেশটির কাছে সহায়তাও চান।

গতকাল বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে দেশটির রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউনের উপস্থিতিতে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি দেশের সরকারি প্রকল্পে ধীর গতি ঠেকাতে কোরীয় পদ্ধতি চান। তিনি বিলম্ব এবং বাড়তি খরচ এড়াতে প্রকল্প বাস্তবায়নে বিশ্বে প্রথম অবস্থানে থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে এ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া আদান-প্রদানের আহŸান জানিয়েছেন। প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে পরিচালক পরিবর্তন না করার পাশাপাশি দেশটিতে ঠিক সময়ে প্রকল্প শেষ হলে কর্মকর্তাদের পদোন্নতি এবং বিলম্বের জন্য জেল দেওয়া হয় বলে জানান।

ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশে আমরা যখন কোনো প্রকল্প শুরু করি, এটা সাধারণত ঠিক সময়ে শেষ হয় না। আমার কাছে অনেক উদাহরণ আছে, প্রকল্প তিন বছরে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও লেগেছে ১০ বছর। আমাদের সব প্রকল্পে বিলম্ব আর বিলম্ব এবং ব্যয় সমন্বয়ের কারণে সরকারি অর্থ অতিরিক্ত খরচ হয়। জেনারেল পার্ক চুং-হি ক্ষমতায় আসার আগে দক্ষিণ কোরিয়াতেও এমন অবস্থা ছিল বলে জানান তিনি। ১৯৬১ সাল থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন পার্ক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এরপরে দক্ষিন কোরিয়া কিছু নিয়ম চালু করেছে। তার মধ্যে রয়েছে প্রকল্প শেষ হওয়ার আগে প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হবেন না। দ্বিতীয়ত, প্রকল্প ঠিক সময়ে বা সময়ের আগে শেষ হলে ওই কর্মকর্তা বেশ পদোন্নতি ও প্রণোদনা পাবেন। সবশেষে, প্রকল্প যদি ঠিক সময়ে শেষ না হয়ে বিলম্ব হয়, যেই কর্মকর্তা ওই প্রকল্প শেষের কাজে নিয়োজিত, তিনি শাস্তি পাবেন; তার পদাবনতি হবে, এমনকি জেলও খাটতে হয়।

জেনারেল পার্কের আমলের এই নিয়ম দেশটিতে যথাসময়ে প্রকল্প শেষ হওয়ার ক্ষেত্রে ভ‚মিকা রেখেছে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষিণ কোরিয়া বর্তমানে বিশ্বে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে। আমি আমাদের দক্ষিণ কোরীয় বন্ধুদের অনুরোধ জানাই, আমাদের সাথে ওই পন্থা ও প্রক্রিয়া আদান-প্রদান করুন, যাতে প্রকল্পগুলো ও ঠিকাদারি কাজ ঠিক সময়ে শেষ হতে পারে।

বাংলাদেশে অধিকাংশ সরকারি প্রকল্পের কাজ ঠিক সময়ে শেষ না করে কয়েক দফা সংশোধনের মাধ্যমে ব্যয় বাড়ানোর রীতিই চলে আসছে। ছোট থেকে বড় সব ধরনের প্রকল্পে এমন চর্চাই চলে আসছে। এভাবে প্রকল্প ব্যয় বাড়তে থাকায় বিভিন্ন সময়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির কারণ খোঁজার নির্দেশও বিভিন্ন সময়ে দিয়েছেন তিনি।

গরীব দেশ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তিনি বলেন, ৬০ বছর আগে দক্ষিণ কোরিয়া গরীব দেশ ছিল, প্রধানত কৃষিনির্ভর। বান কি মুনের আত্মজীবনী পড়ে জেনেছি, যুদ্ধের সময়ে দক্ষিণ কোরীয়দের দুই বেলা খাবার জোটাতে কষ্ট হত। খনিজ সম্পদে অতোটা সমৃদ্ধ না হলেও সেই দেশ পাল্টে গেছে। কিছু চমৎকার কাজ তারা করেছে; সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা ও প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তারা বিশ্বের বহু দেশ থেকে এগিয়ে গেছে। জাদুকরী উন্নতির দেশ হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী ব্যবসায় সহজ হওয়ার সূচকে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম সারিতে থাকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ব্যবসায় সহজ হওয়ার সূচকে তারা বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। যুক্তরাষ্ট্রের চেয়েও অনেক এগিয়ে।
মিয়ানমারের সঙ্গে ‘নিবিড় সম্পর্ক’ থাকা দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়েও সহযোগিতা চান তিনি। এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, মিয়ানমারের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার বেশ ভালো সম্পর্ক রয়েছে। গত কয়েক বছরে মিয়ানমারে তাদের বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। নিবিড় সম্পর্ক বিবেচনায় নিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি বাড়তি পদক্ষেপ ও সক্রিয় কার্যক্রম নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী তাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে।

‘কোরিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা উপস্থাপন’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকায় দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন। দু’দেশের সহযোগিতার সম্পর্ককে আরও বিস্তৃত করার আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বৈশ্বিক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আমাদেরকে আঞ্চলিক ও দ্বিপাক্ষিক বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করেছে। তবে এই চ্যালেঞ্জগুলোকে আমরা নিবিড়ভাবে গ্রহণ করে আমরা এটাকে নতুন নতুন সুযোগে পরিণত করতে পারি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকায় কোরীয় দূতাবাস ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইস্ট এশিয়া স্টাডি সেন্টার যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আলোচনা অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত দেলওয়ার হোসেন, ইস্ট এশিয়া সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বক্তৃতা করেন। ##

 

 

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন