আসন্ন বাজেটে তিস্তা মহাপরিকল্পনার অর্থ বরাদ্দ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুশিয়ারি দিয়েছেন ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’-এর নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নসহ ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নেও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
তিস্তা কনভেনশন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার দুপুরে রংপুর মহানগরীতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী এ হুশিয়ারি দেন। এসময় তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সাফিয়ার রহমান, স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ড. তুহিন ওয়াদুদসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
তিস্তা সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেয়ার দাবি জানিয়ে প্রিন্সিপাল নজরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা শুনে আসছি। আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। অর্থ বরাদ্দ হয়নি। আর কদিন পরই ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপিত হবে। মাত্র সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার জন্য তিস্তা মহাপরিকল্পনা আলোর মুখ দেখবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। আমরা চীন ভারত বুঝি না। নিজস্ব অর্থায়নে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই আসন্ন বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। যদি এটি করা না হয় তাহলে অচিরেই বৃহত্তর আন্দোলন ও সংগ্রামের কর্মসূচি দেয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠী রংপুর অঞ্চলে। তারপরও বিশেষ কোন বরাদ্দ ও ব্যবস্থা নেই এ অঞ্চলের জন্য। বরং রংপুরকে পিছিয়ে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে বরাবরই। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসসূচিতে মোট বরাদ্দের ১ শতাংশের চেয়েও কম বরাদ্দ রংপুর বিভাগের জন্য দেওয়া হয়। দেশে চলমান তিন লাখ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প চললেও রংপুর বিভাগের জন্য কোন মেগাপ্রকল্প নেই। তিস্তা সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। অথচ তিস্তা নদীর ভাঙ্গনে-বন্যায় প্রতিবছর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ নিঃসন্দেহে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার চেয়ে বহুগুণ বেশি।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, এই মূহুর্তে সরকারের উচিত হবে, বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তার পরিচর্যা নিশ্চিত করা। এটি হলে প্রতিবছর ভাঙন ও বন্যা থেকে রক্ষা পাবে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। রংপুরের সাথে সারাদেশের বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্যেও তিস্তা সুরক্ষার কোন বিকল্প নেই। তিস্তাপাড়ের মানুষ এক অবর্ণনীয় কষ্টের ভেতর দিয়ে দিনাতিপাত করছে। ভাঙনে, বন্যায় তাদের জীবন আজ বিপর্যস্ত। ইদানিং যুক্ত হয়েছে অসময়ের বন্যা। তিস্তাপাড়ের পাঁচ জেলায় কোটি মানুষের জীবনে তিস্তা অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এক সময়ের আশীর্বাদরূপী তিস্তা আজ সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে। এর প্রধানতম কারণ- এ নদীর কোনরূপ পরিচর্যা না করা। তিস্তার ভাঙনে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষ বসত-বাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। তিস্তার বুকে বাদাম, কুমড়া, আলু, মরিচ, পেঁয়াজ, রসুন, ভুট্টা, ডাল, ধানসহ অনেক ধরনের ফসল চাষ হয়। কিন্তু সেই ফসল যে কৃষক ঘরে তুলতে পারবে এর কোন নিশ্চয়তা নেই। অথচ তিস্তাকে ঘিরেই এই অঞ্চলের কোটি মানুষের জীবন-জীবকা চলে। সেই তিস্তা মরে গেছে। তিস্তা যদি আরও মরে যায় তাহলে কোটি মানুষের জীবনও বিপন্ন হয়ে উঠবে। এই অঞ্চলে ৫ জন মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তিস্তা নিয়ে সংসদে জোড়তাল আওয়াজ না ওঠায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন নেতৃবৃন্দ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন