চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পড়ার সময়সীমা নির্ধারণ করেনি প্রশাসন। গাছে যখন আম পাকবে,তখনিই বাজারজাত করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন ধরে শৈত্য প্রবাহ আর আমের জন্য আবহাওয়া অনুকুলে না থাকায় আম পাকতে দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আম চাষিরা। একদিকে আমের ফলন কম আর নায্য দাম নিয়ে শঙ্কিত আম বাগানিরা। তবে প্রশাসন আম বাজারজাত করণের নির্ধারিত সময় বেধে না দেয়ায় খুশি আম বাগানিসহ ব্যবসায়ীরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সুত্রে জানা গেছে, এবার চাঁপাইনবাবগঞ্জে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৬২২ বিঘায় মোট ৩১ লাখ ৩৭ হাজার ৪০ টি আম গাছ চাষাবাদ হচ্ছে। এ মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৮ হাজার ৪৭০ দশমিক ৫ বিঘা, শিবগঞ্জে ১ লাখ ৫২ হাজার ১৪ দশমিক ৫ বিঘা, গোমস্তাপুরে ৩১ হাজার ৫২৩ দশমিক ৪ বিঘা, নাচেলের ২৮ হাজার ২৭৩ দশমিক ৯৫ বিঘা, ভোলাহাট উপজেলায় ২৭হাজার ৩৪০ দশমিক ২ বিঘা জমিতে আম গাছ চাষাবাদ হচ্ছে। গত বছরের চেয়ে এবার ৩০ হাজার ৯১১ বিঘা বেশি জমিতে আম চাষ হচ্ছে। এ বছরে আম উৎপাদনের লক্ষ মাত্রা ধরা হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার মেট্রিক টন।
আম চাষি আব্দুল খালেক জানান; এবার বাগানের বড় গাছে মুকুল কম হওয়ায় গাছ গুলোতে ফলন কম। তবে ছোট গাছের বাগান গুলোতে আম আছে। আমের বাগান গুলোতে গত বছরের চেয়ে অর্ধেক আম আছে। গুটি জাতের কয়েকটা গাছে আম পাকতে দেখা গেছে। পরিপূর্ণ ভাবে এখনও পাকেনি।বাণিজ্যিক প্রথম জাত গোপালভোগ আম পাকতে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে।
শামসুল নামের আরেক আম চাষি জানান; প্রথম দিক থেকে আবহওয়া আমের বিপরীত দিকে যাচ্ছে। মাঝে একদিন শিলাবৃষ্টি হওয়ায় আমের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তারপর থেকে কখনও রোদ আবার কখনও বৃষ্টি। আবহওয়া ঠান্ডা থাকায় আম পাকতে সময় লাগছে। যদি আবহওয়া অনুকুলে থাকতো তাহলে বাজারে আম নেমে যেতো।
আজিজুর রহমান নামের এক বাগানি জানান, গতবছর আমের অনেক ফলন হয়েছিল। কিন্তু দাম পাওয়া যায়নি।এবার আমের ফলন খুব কম। গত বছরের চেয়ে অর্ধেক আম আছে বাগানে। ক্ষতিগ্রস্ত আম চাষিদের কৃষি প্রণোদনা দিলে, কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যাবে।
আম বেচাকেনার সময় নির্ধারণ না করায় বাগান মালিকসহ আম ব্যবসায়িরা খুশি হয়েছেন। বাগান মালিক শামসুল আলম জানান, বিগত বছরগুলোতে আম বাজারজাত করতে সময় বেধে দিতো প্রশাসন। নির্ধারিত সময়ে বাজারে আম নামানোর আগেই অনেক আম গাছে পচে যেতো। এখন সময়সীমা না থাকায় যখনিই আম পাকবে তখনিই বাজার জাত করতে পারবো। আম ব্যবসায়ীরা আমাদের নায্য দাম দিলেই খুশি। গত বছররে ব্যবসায়ীরা এক মণ ওজনের আম কিনতে এসে নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ১০-১২ কেজি বেশি নিত। এমন চলতে থাকলে ক্ষতি হয়ে যাবে।
আম ব্যবসায়ী মুনিরুল ইসলাম জানান, প্রশাসন আম বেচাকেনার সময় নির্ধারণ না করায় বেশ খুশি হয়েছি। তবে বাইরের জেলার আম ব্যাপারীরা যেন যেন সঠিক সময়ে আম কিনতে আসে।এ বিষয়ে প্রশাসনের নজরদারি করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জানান; এবার মৌসুমে আম বাজারজাত করতে কোন সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। যখনিই বাগানের গাছে আম পাকবে, তখনিই বাজারজাত করতে পারবে আম ব্যবসায়ীরা।
তিনি আরও বলেন; চাষীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে অপরিপক্ক আম বাজারে তুললে ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন