বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

রূপগঞ্জে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা

স্টাফ রিপোর্টার, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৫ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

গরমের শুরুতে সারাদেশেই বাড়ে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। তবে এ বছর বেড়েছে আগের তুলনায় ৩ গুন বেশি। এর প্রভাব পড়েছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পর্যাপ্ত বেড না থাকায় রোগীরা সেবা নিতে এসে পড়েছেন বিপাকে। এদিকে জরুরি অবস্থা বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআর’বি চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে চালাচ্ছেন ডায়রিয়া বা কলেরার চিকিৎসা। তবে স্থানীয় চিকিৎসকদের দাবি, করোনাকালীন নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে জড়িয়ে যাওয়ার কারণে বেড়েছে কলেরা ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক রোগী দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা ইনচার্জ (নার্স) শাহিনা আক্তার জানান, গত এক মাসে এ হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ গুন। শুধুমাত্র গত এক সপ্তাহে ১৬২ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী এ হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন। তবে জনবলের অভাবে তাদের চিকিৎসা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। এসব ভর্তি রোগীর মাঝে শিশু ও বয়স্কের সংখ্যাই বেশি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মার্চ ও এপ্রিল মাসে যেখানে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি ও চিকিৎসা নেয়ার সংখ্যা ছিলো যথাক্রমে ৭৪ জন ও ৭৬ জন। সেখানে এপ্রিলে এ পর্যন্ত ওই সংখ্যা হয়ে যায় ১৭৪ জনে। অর্থাৎ এমন রোগী বাড়তে শুধুমাত্র এপ্রিলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ৩ গুনের অধিক। ইতোমধ্যে গত ১৪ দিনে ডায়রিয়া রোগী বেড়ে ভর্তি সংখ্যা এখন ২৬২ জনে। তবে ভর্তি রোগীর বেশির ভাগই ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে এই রোগ গবেষণার প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশে (আইসিডিডিআর’বি) বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়ায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরাও নিয়েছেন বিশেষ প্রশিক্ষণ। আর প্রশিক্ষণকে কাজে লাগিয়ে সংশ্লিষ্ট রোগীদের সেবা দেয়া হচ্ছে আধুনিক উপায়ে। ফলে আগের চেয়ে দ্রুত সুস্থ্যতার খবরও পাওয়া যাচ্ছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়োজিত আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাক্তার নাজমুল আহমেদ বলেন, প্রতিবছরই এই মৌসুমে ডায়রিয়া রোগী বাড়ে। গত বছর কোভিডের লকডাউনের কারণে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক ছিল। ‘বছরের দুই সময়ে এই আউটব্রেকটা বেড়ে যায়। বর্ষার আগে যেটাকে আমরা প্রি-মনসুন পিরিয়ড বলি আর শীতের আগে। শীতে শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। আর বর্ষার আগে প্রাপ্তবয়স্করা। চৈত্রের শুরু থেকেই দেশে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গরমের মধ্যে পানির চাহিদা যখন বাড়ে, তখন দূষিত পানি থেকে পানিবাহিত এই রোগের প্রকোপ দেখা যায়। এ রোগের বিস্তার বেড়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমার পর মানুষের মাঝে সচেতনতা কমেছে। হাত ধোয়ার অভ্যাসটা একদমই কমে গেছে। এটাই আমার মনে হয় একটি বড় কারণ। আবার রূপগঞ্জের নদী পাড়ের মানুষজন তাদের থানা বাসন ও গোসল সারছেন ঘোলা ও ব্যবহার করেও আক্রান্ত হচ্ছে। আবার জীবাণুর রোগতত্ত্বগত আচরণের কারণেও রোগী বাড়তে পারে, এমন ধারণাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তিনি।
এ সময় তিনি রূপগঞ্জের ডায়রিয়া পরিস্থিতি বিষয়ে আরো বলেন, যে সকল উপসর্গ নিয়ে ডায়রিয়া রোগীরা ভর্তি হচ্ছে এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাউকে পাওয়া যায়নি। রোগীদের মাঝে খাবার স্যালাইল, চালের স্যালাইন ও ডক্সিক্যাপ প্রয়োগ করার পর ২ থেকে ৩ দিনেই সুস্থ্য হয়ে তারা বাড়ি ফিরছেন। ফলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত বেশির রোগী শিশু ও বৃদ্ধ। যাদের অসচেতনতার জন্য জীবন ঝুঁকি রয়েছে। অন্যদিকে গর্ভবতি মায়েরাও রয়েছেন এ তালিকায়।
হাসপাতালটির দায়িত্বরত গাইনি চিকিৎসক ডাক্তার আখতার জাহান বলেন, গরমে ডায়রিয়া থেকে বাঁচতে বাইরের খোলা খাবার পরিহার করা, পর্যাপ্ত পানি পান করা ও হাত ধোয়ার বিকল্প নেই। বিশেষ করে গর্ভবতি মা ও সাধারণ শিশু ও বয়স্কদের ব্যাপারে বিশেষ নজরদারি করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে পানি ফুটিয়ে খেতে হবে। বাইরে গেলে সম্ভব হলে লেবুর পানি নিয়ে যেতে হবে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন