বাংলাদেশে সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই অস্ট্রেলিয়া থেকে ছুটে এসেছে দুঃসংবাদ। গতকাল মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়ান তারকা অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় আগের রাতে কুইন্সল্যান্ডের টাউন্সভিল শহরের অদূরে দুর্ঘটনায় পড়ে সাইমন্ডসের গাড়ি। রাস্তা থেকে ছিটকে গিয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান ৪৬ বছর বয়েসি অজি তারকা। তার এমন অকাল মৃত্যুতে দ্রুতই শোক জানায় বিসিবি। চট্টগ্রাম টেস্ট শুরু আগে পালন করা হয় এক মিনিটের নীরবতা। গতকাল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট শুরুর আগে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দু’দলের খেলোয়াড়, ম্যাচ অফিসিয়াল ও সংশ্লিষ্ট সকলে এক মিনিট নিরবে দাঁড়িয়ে শ্রদ্ধা জানান এই ক্রিকেটারকে। এই সময়ে জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠে সাইমন্ডসের ছবি।
সাইমন্ডসের এমন মৃত্যু অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটের জন্য প্রচণ্ড ধাক্কা। দুইমাস আগেই আগেই তারা হারিয়েছিলেন কিংবদন্তি শেন ওয়ার্ন ও রডনি মার্শকে। এবার তার মৃত্যুর সংবাদে শোকে মুহ্যমান ক্রিকেট বিশ্ব। সাবেক সতীর্থ হতে শুরু করে তার শত্রু শিবিরও মানতে পারছেন না এ দুর্ঘটনা। সামাজিকমাধ্যমে এ কিংবদন্তিকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সাবেক-বর্তমান ক্রিকেটাররা। চট্টগ্রাম টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান লঙ্কান তারকা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ লিখেছেন, ‘বেদনাদায়ক সংবাদের মধ্য দিয়ে দিনটা শুরু হলো। শান্তিতে থাকবেন, কিংবদন্তি!’ অ্যাডাম গিলক্রিস্ট টুইট করেছেন, ‘এটা সত্যি অনেক কষ্টদায়ক’। অন্য আরও একটি টুইটে লিখেছেন, ‘আপনার সবচেয়ে বিশ্বস্ত, মজার, প্রেমময় বন্ধুর কথা ভাবুন যে আপনার জন্য সবকিছু করতে পারে। তিনি হলেন রয়।’ হৃদয় ভেঙে গেছে আরেক সতীর্থ মাইকেল বেভানের, ‘হৃদয় ভেঙে দেওয়ার মতো। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট আরও একজন নায়ককে হারাল। ২০০৩ বিশ্বকাপের সতীর্থ। দুর্দান্ত এক প্রতিভা। শান্তিতে থেকো, সিমো!’ সাইমন্ডসের আরেক সতীর্থ জেসন গিলেস্পিও বিধ্বস্ত, ‘ঘুম থেকে উঠেই জঘন্য সংবাদ। বিধ্বস্ত হয়ে গিয়েছি। আমরা সবাই তোমাকে অনেক মিস করব বন্ধু।’
বিশ্বাসই করতে পারছেন না সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন, ‘সিমো, বাস্তব বলে মনে হচ্ছে না!’ শোকস্তব্ধ গ্রায়েম সোয়ানও, ‘শান্তিতে থেকো, রয়!’ পাকিস্তানি সাবেক ক্রিকেটার মোহাম্মদ হাফিজ লিখেছেন, ‘গাড়ি দুর্ঘটনায় অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের মৃত্যুর খবর শুনে ব্যথিত। মাঠের বাইরে এবং মাঠের বাইরে কিছু ভালো স্মৃতি রয়েছে। তার পরিবার ও বন্ধুদের প্রতি সমবেদনা।’ দেশটির সাবেক কিংবদন্তি পেসার শোয়েব আখতার টুইট করে লিখেছেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের মৃত্যুর কথা শুনে স্তম্ভিত। মাঠে এবং বাইরে আমাদের একটি দুর্দান্ত সম্পর্ক রয়েছে। তার পরিবারের জন্য প্রার্থনা।’
ভারতের সাবেক অধিনায়ক বিরাট কোহলিও ব্যথিত, ‘অ্যান্ড্রু সাইমন্ডের মৃত্যুর কথা শুনে মর্মাহত। তার আত্মা শান্তিতে থাকুক। ঈশ্বর এই কঠিন মুহূর্তে তার পরিবারকে শক্তি দিন।’ যুজবেদ্র চাহাল যেন নিজের পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন, ‘আজ আমি আমার অনেক কাছে একজন মানুষকে হারালাম। তুমি শুধু আমার সতীর্থই ছিলে না। আমার পরিবার। আমার সাইমন্ডস চাচা। আমি তোমাকে অনেক মিস করব। শান্তিতে থাকো।’ মানতে পারছেন না ভারতের সাবেক ব্যাটার ভিভিএস লক্ষ্মণও, ‘ভারতে ঘুম থেকে উঠেই একটা বাজে সংবাদ শুনলাম। শান্তিতে থাকো আমার প্রিয় বন্ধু। খুবই দুঃখজনক একটা সংবাদ।’
ওয়ানডে অভিষেকের ৬ বছর পর ২০০৪ সালে টেস্ট অভিষেক সাইমন্ডসের। টেস্ট ক্যারিয়ার ২৬ টেস্টে থেমে গেলেও সেখানে ইংল্যান্ড ও ভারতের মতো দলের বিপক্ষে আছে রাজকীয় ইনিংস। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়ার সব সময়ের সেরা তারকাদের একজন সাইমন্ডস। ১৯৯৮ সালে সাইমন্ডসের ওয়ানডে অভিষেক হয়। ৩৯ দশমিক ৭৫ গড় আর ৯২ দশমিক ৪৪ স্ট্রাইকরেটে ৫ হাজার ৮৮ রান করেছেন তিনি। ওয়ানডেতে তার আছে ১০৩টি ছক্কা। ২০০৩ ও ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ জয়ে রেখেছেন অবদান। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য বিশ্ব ক্রিকেটের বড় নাম ছিলেন তিনি।
ব্যাটিংয়ে নাম কুড়ানো এই তারকার ওয়ানডেতে বল হাতেও আছে ১৩৩ উইকেট। বল করতে পারতেন অফ স্পিন ও মিডিয়াম পেস দুই ধরনেই। সাইমন্ডস বিখ্যাত ছিলেন তার চোখ ধাঁধানো ফিল্ডিংয়ের জন্যও। অবিশ্বাস্য সব ক্যাচ, দুর্দান্ত রানআউটে নিজেকে আলোয় এনেছেন বহুবার। সেই সময়ে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে সব মিলিয়ে সাইমন্ডস ছিলেন পূর্ণাঙ্গ অলরাউন্ডার।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন