ইসলামের অলঙ্ঘনীয় বিধান যাকাত।মহানবী সা. ও খোলাফায়ে রাশেদার যুগে সার্বিকভাবে যাকাত আদায় ও বিতরণ করে দারিদ্র বিমোচনের ব্যবস্থা নেয়া হতো। আবার প্রকৃত অর্থে ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি ছিল যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা। বাংলাদেশ মুসলিমপ্রধান দেশ হলেও দেশে যেহেতু ইসলামী শাসনব্যবস্থা নেই, সেহেতু রাষ্ট্রীয়ভাবে যাকাত আদায় ও বন্টনের কিছু স্কিম চালু থাকলেও পুরোপুরি যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা চালু নেই। সেজন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে গ্রামভিত্তিক বা পাড়া-মহল্লা ভিত্তিক যাকাত আদায় এবং দারিদ্র বিমোচনের দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে তা বন্টন করার রেওয়াজ আছে।তেমন-ই একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার জগতপুর গ্রামের দক্ষিণ পূর্বাংশের একটি পাড়া।
এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা-৫ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট আবুল হাসেম খান ইনকিলাবের এই প্রতিবেদককে বলেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি মহতী উদ্যোগ। দারিদ্র বিমোচন ও কর্মসংস্থানের লক্ষে যাকাতের টাকা পরিকল্পিতভাবে বন্টন করার এমন উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। আমি মনে করি, দরিদ্র পরিবারগুলো এমন উদ্যোগের কারণে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। দেশের সর্বত্র এমন উদ্যোগ খুব দরকার বলে আমি মনে করি।
জানা যায়, তারা বিগত কয়েক বছর ধরে মহান আল্লাহর হুকুম পালনার্থে কাজটি সামাজিকভাবে করে যাচ্ছেন। উদ্যোগটির নাম দিয়েছেন যাকাত ও ছাদাকাত ফাউন্ডেশন।রবিবার দুপুরে ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. জাবেদ আহমেদ ইনকিলাবকে জানান, বুড়িচং উপজেলা সদর ইউনিয়নের জগতপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ প্রাঙ্গণে যাকাত ও ছাদাকাত ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৬ লক্ষ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে এলাকার সিলেক্টেড অসহায় মানুষকে তাদের দারিদ্র বিমোচনের লক্ষে বিভিন্নকিছু দেয়া হয়।
তিনি জানান, এর মধ্যে ৫টি গরু, ১টি বড় অটোরিকশা, ১টি অটো ভ্যান, ১টি অটো রিক্সা, ১টি সিএনজি ও ১টি মিশুক ক্রয়ে সহায়তা, ১জনকে দোকান প্রকল্প, ১জনকে বিদেশ গমনে আর্থিক সহয়তা, ১৫ জন অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসার জন্য সহয়তা, ৭৫জনকে স্বল্প মেয়াদী সহায়তা, ১টি সেলাই মেশিন, ১টি ছাগল রয়েছে। অন্যদের অনুপ্রাণিত করার জন্য পাড়ার বাইরের লোকজনকেও প্রকল্পের আওতায় আনা হয়।
জানা যায়, অনুষ্ঠানে বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. কবির হোসেনের সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক ডা. জাবেদ আহমেদ। অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জগতপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মো. কামাল হোসেন, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির বাবুল, সদর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, ইসলামী ব্যাংকের গৌরীপুর শাখার সিনিয়র প্রিন্সিপাল মোঃ আব্দুল হান্নান।
ফাউন্ডেশনের সেচ্ছাসেবী মো. ইমন হোসেনের সঞ্চালনায় সার্চ কমিনিটির পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স অব ফার্মেসির ছাত্র সাব্বির আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ পারভেজ, ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা হাজী শাহাজাহান, ডা. শাহ আলম, আলী আক্কাস, সোহেল খোকন, মাহফুজুল ইসলাম ও আমিনুর রহমান বাবুসহ এলাকার মান্যগণ্য ব্যক্তিবর্গ।
জানা যায়, যারা উদ্যোক্তা, তারাই প্রথম তাদের নিজেদের যাকাতের টাকাটা একত্রিত করে। ওই পাড়ার যারা ঢাকায় বা দেশের বাইরে থাকেন, তাদেরকে পরবর্তীতে যাকাত প্রদানের জন্য আহ্বান জানায়। আর এভাবেই একটি পাড়া থেকে প্রায় সোয়া ৬ লক্ষ টাকা সংগ্রহ হয়।দারিদ্র থেকে মুক্তির লক্ষে এসব প্রকল্পের অধীনে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়ে উপকারভোগীরাও আনন্দিত।
উদ্যোক্তারা ইনকিলাবের এই প্রতিবেদককে জানান, আমরা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এবং আমাদের নিজেদের অর্থসম্পদকে পবিত্র করতে এই যাকাত আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছি।এমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। জগতপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মো. কামাল হোসেন ইনকিলাবকে জানান, পূর্বের বছরগুলোতে নেয়া উদ্যোগ ৯০ শতাংশ সফল।তারপরও আমরা শতভাগ ফিডব্যাক পাওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। কেউ কেউ বলছেন, এমন উদ্যোগ হতে পারে সারা দেশের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন