মাদকের ভয়ঙ্কর থাবা রাজধানীজুড়ে। প্রভাবশালী মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসার স্পট হিসেবে বেছে নিয়েছে রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকা। শুধু মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি স্পটে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা, হেরোইন, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক। বেড়িবাঁধ, টাউনহল, বাঁশপট্টি ও জেনেভা ক্যাম্পে চলছে লাখ লাখ টাকার কারবার। গত কয়েকদিন ধরে জেনেভা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জেনেভা ক্যাম্পের বাসিন্দাদের মতে, মাদক ব্যবসায়ীদের কথামতো না চললে তাদেরকে নানাভাবে অত্যাচার নির্যাতনের শিকার হতে হয়। লাখ লাখ টাকার ব্যবসা নিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা প্রায়ই নিজেদের মধ্যে কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। চলে অস্ত্রবাজি। বাধে সংঘর্ষ। গত এক মাসে শুধু জেনেভা ক্যাম্পেই একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করে সব সময়। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনের কাছে মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মেলে না। গডফাদাররা থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র মতে, মোহম্মদপুরের মাদক ব্যবসার গডফাদারের নাম মাছুয়া সাঈদ। চুয়া সেলিম, ইশতিয়াক ও পঁচিশসহ কয়েকজন ডিলার সেখানের স্থানীয় ইয়াবা ডিলার। মূলত এরাই সেখানের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। বৃহৎ এলাকা এবং ঘিঞ্জি পরিবেশ হওয়ায় ইচ্ছে করলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনির অল্প সংখ্যক সদস্য নিয়ে সেখানে অভিযান চালাতে পারে না। আর বড় ধরনের অভিযানের খবর আগেই টের পেয়ে যায় মাদক ব্যবসায়ী সন্ত্রাসীরা। আর তখনই তারা আশ্রয় নেয় ক্যাম্পেরই কোনো ঘুপড়ি ঘরে। তাদের শেল্টার না দিলে চরম নির্যাতনের শিকার হতে হয় সেখানের বাসিন্দাদের। সন্ত্রাসীদের অত্যাচার ও মাদক ব্যবসা বন্ধের দাবিতে, সম্প্রতি তেজগাঁও জোনের ডিসির অফিসের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এর পরদিন সেখানে অভিযান চালায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর । এ সময় তাদের ওপর হামলা করে মাদক সন্ত্রাসীরা। পরে অধিক সংখ্যক পুলিশ নিয়ে সেখানে অভিযানে ৪ মাদক ব্যবাসায়ী গ্রেফতার হয়। কিন্তু গডফাদার ও ডিলাররা থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে।
স্থানীয়রা জানান, আজকের ইয়াবা গডফাদার সাঈদ এক সময়ে বাজারের ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী ছিলেন। সাবেক ৪৫ নং ওয়ার্ড কমিশনারের হাত ধরে বিএনপিতে যোগ দেয় সে। বিভিন্ন তদবিরে সীমা নামে এক সুন্দরীকে ব্যবহার করে দু’জনেই অঢেল সম্পদের মালিক হন। এক সময়ে টাকার ভাগাভাগি নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এরপর সীমা নিজে ক্যাম্পে সুদের ব্যবসা শুরু করে। আর সাঈদ সেখানের মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেয়। দু’জনেই গড়ে তোলেন সন্ত্রাসী বাহিনী। বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমানের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে সাঈদ। স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর মিজানের নাম ব্যবহার করে, সাঈদ মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা নেয়। এসব অবৈধ টাকায় বছিলা ও ওয়ারিতে ফ্ল্যাট, সিলিকন হাউজিংয়ে প্লটসহ নামে বেনামে বিপুল পরিমাণ সম্পদ গড়েছে। তার নামে অন্ততঃ ডজনখানেক মামলা রয়েছে। অথচ স্থানীয় থানা পুলিশের সাথে তার রয়েছে সখ্যতা।
স্থানীয়রা জানায়, সু-চতুর সাঈদ নিজে আড়ালে থেকে ইয়াবা ডিলার নিয়োগ করেছে। তার নিয়োজিত ডিলারদের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা স¤্রাট ইশতিয়াক, চুয়া সেলিম, সাহাবুদ্দিন, আলমগীর, মোল্লা আরশাদ, ইল্টা সালাম, ঢাকাইয়া নাদিম, জুম্মন, কুদ্দুস ও কালা রাজু। তাদের নিয়োজিত সেলসম্যান রয়েছে অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ।
জানতে চাইলে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান বলেন, ক্যাম্পটির দক্ষিণপাশে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ ছাড়া চারপাশে রয়েছে বেশ কিছু নামী-দামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। স্কুল পড়–য়া সন্তানদের আনা-নেয়ার জন্য দিনের পুরোটা সময়ই সেখানে এলিট শ্রেণিদের যাতায়াত করতে হয়। এরকম একজন সন্মানিত ব্যক্তিকে দেখেই স্ত্রী সন্তানদের সামনে যদি কেউ এগিয়ে এসে বলে, এই লাগবে নাকি (ইয়াবা, গাঁজা) তা খুবই বেদনাদায়ক। একজন সচেতন নাগরিক এবং আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে তা আমাকে খুবই কষ্ট দেয়। যে কারণে প্রশাসনকে সাথে নিয়ে এলাকার মাদক নির্মূলে চেষ্টা করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, ওখানে অভিযান চালাতে পুলিশের অনেক বেগ পেতে হয়। অনেক ঝুঁকি ও কষ্ট করেই পুলিশ একজন মাদক ব্যবসায়ীকে ধরে। কিন্তু জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবারো একই কাজে জড়িয়ে পড়ে। মাদক ব্যবসায়ীদের শেল্টারদাতা হিসেবে আমার সন্তানের নাম থাকলেও আমি তার পক্ষে তদবির করবনা।
উল্লেখ্য, গত ১৫ নভেম্বর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা, গণ্যমান্য ব্যক্তি, জেনেভা ক্যাম্পের লাইনম্যানদের নিয়ে তেজগাঁও জোনের ডিসির সাথে দীর্ঘ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
গ্রামীণফোন-বিএনসিসি চুক্তি স্বাক্ষর
গ্রামীণফোন সম্প্রতি তার বিজনেস সলিউশনস প্যাকেজের অধীনে পরিপূর্ণ যোগযোগ সুবিধা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি)-এর সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। বিএনসিসির মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফেরদৌস, এনডিসি, পিএসসি এবং গ্রামীণফোনের হেড অব ডিরেক্ট সেলস সাজ্জাদ আলম নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। গ্রামীণফোনের হেড অব ডিস্ট্রিবিউশন অ্যান্ড রিটেইল সেলস আওলাদ হোসেন, হেড অব বিজনেস সেলস মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, বিএনসিসির জিএসও-২ মেজর সালেহ উদ্দিন আহমেদ এবং উভয় প্রতিষ্ঠানের অন্য কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন Ñইনকিলাব
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন