শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

মেঘনার তীর রক্ষা বাঁধ প্রকল্পের ৩ হাজার ৮৯ কোটি টাকার কাজ বন্ধ

রামগতি (লক্ষ্মীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৭ মে, ২০২২, ১০:৪৭ এএম

  • একের পর এক বসতবাড়ি গিলছে মেঘনা
  • বিলীন হচ্ছে রামগতির বিস্তীর্ণ জনপদ

লক্ষ্মীপুরের রামগতি ও কমলনগর মেঘনানদীর ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।মেঘনার ভাঙনে এই দুই উপজেলা ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। মেঘনার তান্ডবলীলা-জলাবদ্ধতা ও অস্বাভাবিক জোয়ারে বিপর্যস্ত রামগতি ও কমলনগর উপজেলার লাখো মানুষ। দীর্ঘ চার দশক ধরে এমন অবস্থা চলছে নদী পাড়ে বসবাসকারী মানুষগুলোর। ভাঙনের ভয়াবহতা এখানকার মানুষের দুঃখ-কষ্টের শেষ নেই। সারা বছর ধরে মেঘনা ভাঙছে। বর্ষা মৌসুমে ভাঙন আরও তীব্র হয়। অন্যদিকে মেঘনার অস্বাভাবিক জোয়ারের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত এ জনপদ। জলাবদ্ধতা সমস্যা এখানকার আরেক যন্ত্রণার নাম।এসব সমস্যার সাথে লড়াই করে জিবন কাটছে রামগতি ও কমলনগরের মানুষের। এবারের বর্ষা আসার শুরুতে ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে কয়েকগুণ। সেইসঙ্গে অস্বাভাবিক জোয়ারে ডুবেছে লোকালয়। তীব্র ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে ঘর-বাড়ি, হাট-বাজার,ফসলি জমিসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। ভয়াবহ ভাঙন পরিস্থিতিতে বাড়ি-ঘর সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। মানুষ সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে। পাঁচ-সাতবার ভাঙনের শিকার হয়ে এখন অনেকেই পথের ভিখারি। ভাঙনে আতঙ্কিত নদী পাড়ের লাখো মানুষ। মেঘনা উপকূল ঘুরে দেখা গেছে,
রামগতি-কমলনগরে পর্যাপ্ত বেড়িবাঁধ না থাকায় এখন অরক্ষিত। বর্ষা এলেই এখানে আতঙ্ক দেখা দেয়। নদীর জোয়ার আর বৃষ্টির পানিতে ডুবে যায় গ্রামের পর গ্রাম। জোয়ারের সময় ফসলি জমি-মাঠ পেরিয়ে পানি ঢুকে পড়ে বসত ঘরে। এতে মারাত্মক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়ে হাজার হাজার পরিবার। ইতিমধ্যে উপজেলার দাসপাড়া,রঘুনাথপুর,আসলপাড়া,
বাংলাবাজার,সেবাগ্রাম ও পশ্চিম বালুরচর সহ অসংখ্য গ্রাম ও সরকারি বেসরকারি বহু স্থাপনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

লক্ষ্মীপুর পাউবো সূত্রে জানা গেছে,গত বছরের জুন মাসে লক্ষ্মীপুরের রামগতি-কমলনগর উপজেলার বড়খেরী-লুধুয়াবাজার এবং কাদিরপন্ডিতেরহাট এলাকা ভাঙন হতে রক্ষাকল্পে মেঘনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে ৩১ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা। ওই বছরের আগস্ট মাসে প্রকল্পের টেন্ডার হয়। দ্রুত বাস্তবায়নে পুরো কাজ ৯৯ প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে। চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এসে করেন উদ্বোধন। তিন মাস অতিবাহিত হলেও এখনো কাজ শুরু হয়নি। বালু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে মেঘনার তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে আছে। উদ্বোধনের তিন মাস অতিবাহিত হলেও কোন কাজ হয়নি। থেমে আছে বিশাল এই প্রকল্পের কাজটি। ঘটনাস্থলে নেই সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের শ্রমিক ও নির্মাণ সামগ্রী। চোখে পড়েনি কোনো কর্মযজ্ঞ। এদিকে ভাঙনের তীব্রতা প্রকট আকার ধারন করছে। মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে তছনছ হচ্ছে মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলী জমি। বর্ষার আগে বাঁধ নির্মাণের কাংখিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না হলে বিস্তীর্ণ জনপদ বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভাঙন রোধে দ্রুত নদীর তীর সংরক্ষণে বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন সহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন মেঘনার তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। প্রয়োজনে হরতাল সহ বড় ধরনের কর্মসূচি দেওয়ার হুশিয়ারি দেন তারা।

জানা গেছে, কাজ পাওয়া ঠিকাদার স্থানীয় কিছু দালালের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করে। পরে তাদের মধ্যে দরদাম ও কমিশন বাণিজ্য নিয়ে ঝামেলা দেখা দেয়। যে কারণে কাজ বন্ধ রয়েছে। এদিকে জিও ব্যাগ ডাম্পিংসহ নদীর তীর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ কাজ বন্ধ থাকায় নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। সব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। মেঘনা পাড়ের লোকজন বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে বলেন, বসতভিটা রক্ষায় বর্ষার আগে বাঁধ নির্মাণ কাজ করতে হবে। বিলম্ব না করে যথাসময়ে মজবুত এবং ঠেকসই বাঁধ নির্মাণ চান তারা। নচেৎ তারা বৃহত্তর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।

সাহেবেরহাট এলাকার মাওলানা মাসুম বিল্লাহ ও কালকিনি এলাকার বাসিন্দা ও স্থানীয় সংবাদকর্মী শাহরিয়ার কামাল বলেন,তাদের বাড়ী নদী ভাঙনে বিলীন হয়ে গেলে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে বসবাস করেন। নদীর ভাঙন অব্যাহত থাকায় তাদের বাড়ি এখন আবারো হুমকির মুখে। নদীর তীর রক্ষা বাঁধ না হলে আবারো বাড়িঘর বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার কৃষকরা জানান,নদী ভাঙনের কারণে দিন দিন কমে যাচ্ছে ফসলি জমি। এছাড়া বেড়িবাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে। তারা কাঙ্ক্ষিত ফসল না পাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন তারা।

চরআব্দুল্লার ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দীন মন্জু ও চরকালকিনি ইউপি চেয়ারম্যান মাস্টার সাইফুল্লাহ বলেন,নদী ভাঙনে তাদের ইউনিয়নের অর্ধেকেরও বেশি জনপদ বিলীন হয়ে গেছে। এখন জোয়ার এলেই ডুবে যায় পুরো এলাকা।

লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, কাজ পাওয়া ঠিকাদাররা চাঁদপুর থেকে বালু এনে জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ করতো। কিন্তু সেখানে বালু সংকটের অজুহাত দেখিয়ে তারা সাময়িক কাজ বন্ধ রেখেছে। আমরা ঠিকাদারকে চিঠি দিয়েছি, তারা যেন কাজ শুরু করেন। আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যে তারা কাজ শুরু করবে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ)আবদুল মানান বলেন,বালু সংকটের অজুহাত সৃষ্টি করে এই প্রকল্পের কাজ বন্ধ রাখতে পারবেনা। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কথা বলছি। খুব দ্রুত মেঘনার তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু করা হবে। কমিশন বাণিজ্য ও ভাগবাটোয়ারা করে এই প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করার চক্রান্ত বরদাস্ত করা হবেনা হবেনা বলে জানান।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন