বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিন মাছ ধরা নিষেধ

৩ লাখ জেলে পরিবারের জন্য খাদ্য সহায়তা

নাছিম উল আলম : | প্রকাশের সময় : ১৯ মে, ২০২২, ১২:০০ এএম

সামুদ্রিক এলাকায় বিপন্ন মাছের অস্তিত্ব রক্ষাসহ মৎস্য সম্পদ সমৃদ্ধ করণে বঙ্গোপসাগরের ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে কার্যকর হচ্ছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের সাতক্ষীরা থেকে দক্ষিণের কুয়াকাটা হয়ে পূর্ব-দক্ষিণের টেকনাফ পর্যন্ত ৭১০ কিলোমিটার উপকূলীয় তটরেখা এবং সমুদ্র অভ্যন্তরের ২শ’ নটিক্যল মাইল পর্যন্ত ‘একান্ত অর্থনৈতিক এলাকার ১ লাখ ৪০ হাজার ৮৬০ বর্গ কিলোমিটারে ছোট-বড় নানা প্রকারের ৪৭৫ প্রজাতির মৎস্য সম্পদ আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সমুদ্র এলাকায় ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৫ প্রজাতির লবস্টার, ১৫ প্রজাতির কাঁকড়া, ৫ প্রজাতির কচ্ছপ ও ১৩ প্রজাতির প্রবালসহ বিভিন্ন জলজ সম্পদ আমাদের সমুদ্র সম্পদকে সমৃদ্ধ করেছে।

সমুদ্র এলাকায় ৬৫ দিন মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে নৌ বাহিনী, কোস্ট গার্ড ও র‌্যাব ছাড়াও নৌ পুলিশকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে বলেছে সরকার। এলক্ষ্যে ঢাকা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনাতে ইতোমধ্যে সব বাহিনীর পাশাপাশি জেলে, মৎস্যজীবী ও গণমাধ্যম কর্মীদের নিয়ে সভা-সেমিনারে সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে মৎস্য অধিদফতর।

দেশের মৎস্য সম্পদে সামুদ্রিক মাছের অবদান প্রায় ১৫%। সমুদ্র এলাকায় প্রায় ৫.১৬ লাখ জেলে ২৫৫টি বাণিজ্যিক ট্রলার ছাড়াও প্রায় ৩৩ হাজার ইঞ্জিন চালিত ও ৩৫ হাজার ইঞ্জিনবিহীন নৌকায় নানা সরঞ্জামের সাহায্যে মৎস্য আহরণ করে থাকেন। মৎস্য অধিদফতরের মতে, দেশে বছরে উৎপাদিত প্রায় ৪৫ লাখ টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছের মধ্যে এককভাবে সামুদ্রিক মাছের পরিমান প্রায় ৭ লাখ টন। সরকার চিংড়ির প্রজনন প্রক্রিয়া নিরাপদ ও নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য মাছের বিচরণ, প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আহরণ প্রবৃদ্ধি টেকসই করতে, ২০১৫ সালে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক ট্রলারের ক্ষেত্রে এবং ২০১৯ সাল থেকে সব ধরনের নৌযানের জন্য বঙ্গোপসাগরে নিজস্ব অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন মৎস্য আহরন নিষিদ্ধ করে। গত কয়েক বছরে মৎস্য সম্পদে প্রায় দেড় লাখ টন মাছ যোগ হয়েছে।
বঙ্গোপসাগরে ৬৫ দিনের এ আহরণ নিষিদ্ধের বিষয়টিকে উপকূলের জেলে ও মৎস্যজীবীদের অনেকেই ভালভাবে না নিলেও নিষিদ্ধকালীন এ সময়ে প্রথম দফায় ১ লাখ ৪৬ হাজার ৫৪৩ জন জেলেকে ৫৬ কেজি করে ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৮৩ জন জেলেকে ৩০ কেজি করে সর্বমোট প্রায় ১২ হাজার ৬১৯ টন চাল বিতরণ করবে সরকার।

এমনকি সাগরে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত মাছাধরা নিষিদ্ধের সময়কালের অধিকাংশই ঝড়Ñঝঞ্ঝা সহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় অতিবাহিত হবে। তবে, উপকূলের বিশাল জেলে ও মৎস্যজীবীদের অভিযোগ, বাংলদেশের সমুদ্র এলাকায় মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও এসময়ে ভারতে নিষিদ্ধ না থাকায় সে দেশের জেলেরা অবাধে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় প্রবেশ করে মাছ লুটে নেয়। তবে মৎস্য বিজ্ঞানীগণ এক্ষেত্রে প্রতিবেশি দেশের সাথে সমতা রেখে সাগরে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ ঘোষণার সময় পুণঃবিবেচনার বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেছেন।
এসব বিষয়ে মৎস্য অধিদফতরের পরিচালক (সামুদ্রিক) ড. মো. শরিফ জানান, ৬৫ দিন মাছধরা বন্ধ রাখায় সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের কার্যকরি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সুফল পাচ্ছে দেশ। চীনসহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে এ পদ্ধতিতেই সাগরের মৎস্য সম্পদের সংরক্ষণ ও সম্প্রসারণ বাস্তবায়ন হচ্ছে। ভবিষ্যতে প্রতিবেশি দেশের সাথে সমন্বিতভাবে সাগরে আহরণ নিষেধাজ্ঞার সময় নির্ধারনের বিষয়ে সরকারের মাধ্যমে পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন