ভারতের সমস্ত মুসলিম ধর্মস্থানে হিন্দু অনুসঙ্গ খুঁজতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে দেশটির হিন্দুত্ববাদী দলগুলো। জ্ঞানবাপী মসজিদের ওজুখানায় শিবলিঙ্গ খুঁজে পাওয়ার দাবি কেন্দ্র করে উত্তাল ভারত। যদিও মুসলিম পক্ষের দাবি, শিবলিঙ্গ নয়, আসলে ফোয়ারারই একটি অংশ সেটি। এ নিয়ে বিতর্কের শেষ নেই। জ্ঞানবাপীর পরে সন্দেহজনক মসজিদের তালিকায় রয়েছে উত্তরপ্রদেশের ঈদগাহ মসজিদ। এমনকি ওই তালিকা থেকে বাদ যায়নি তাজমহলও। তাজমহলের তালাবন্দি ২২টি ঘরে কী আছে, তা জানতে আদালতে দায়ের হয় জনস্বার্থ মামলাও। যদিও সেই আরজি পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়েছে আদালত। ইতিমধ্যেই নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয়েছে জ্ঞানবাপী মসজিদ চত্বর। অশান্তির আশঙ্কা আঁচ করে আঁটঘাট বেঁধেছে স্থানীয় প্রশাসন। বাড়ানো হয়েছে ঈদগাহ মসজিদের নিরাপত্তাও।
দিন কয়েক ধরেই সাম্প্রদায়িক অশান্তির জেরে ব্যতিব্যস্ত ভারত। দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রায়শই ধর্মীয় হানাহানি, হিংসার খবর কানে এসেছে। ধর্মস্থানে, বিশেষত মসজিদে লাউড স্পিকার ব্যবহার বন্ধের দাবি করে কার্যত সেই হিন্দুত্ববাদী বিতর্কেই ঘি ঢেলেছেন মহারাষ্ট্রের এমএনসি-নেতা রাজ ঠাকরে। তা নিয়ে অশান্তি তৈরি হয়েছিল দিল্লি-সহ ভারতের একাধিক জায়গায়। কর্নাটকেও সেই তাপ ছড়াতে দেরি হয়নি।
জ্ঞানবাপী মসজিদ ঘটনার পর থেকেই বিভিন্ন মসজিদের ভিতরে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি রয়েছে বলে দাবি করেছিল বিভিন্ন হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। এবার সেই আঁচ পৌঁছল কর্নাটকেও। মান্ডিয়া জেলার একটি মসজিদে হনুমান পুজো করার দাবিও জানাল সেখানকার একটি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন।
মসজিদ-এ-আলা নামে এই মসজিদটি নাকি গড়ে উঠেছিল ‘মুদালা বাগিলপ আনজানেয়া স্বামী’ মন্দির ভেঙে। ১৮ শতকের দিকে মহিশূরের রাজা টিপু সুলতান ওই মন্দিরটি নষ্ট করে দেন। তার জায়গায় ওখানে গড়ে ওঠে মসজিদ–এ-আলা তৈরি করান। তেমনটাই দাবি নরেন্দ্র মোদি বিচার মঞ্চ নামে ওই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনটির। ইতিমধ্যেই মান্ডিয়া জেলার ডেপুটি কমিশনের কাছে বিষয়টি নিয়ে তদবির করেছেন তারা।
কিছু দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে উস্কে উঠেছে হনুমান চালিশা পাঠের রমরমা। মসজিদে লাউড স্পিকার ব্যবহার বন্ধ না করলে উচ্চস্বরে হনুমান চালিশা পাঠেরও হুমকি দিয়েছিল মহারাষ্ট্রের এমএনসিসহ ভারতের বেশ কিছু হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। এবার আরো একধাপ এগিয়ে মসজিদের ভেতরেই হনুমান বন্দনার ডাক দিয়ে বসেছে নরেন্দ্র মোদি বিচার মঞ্চ । মসজিদ-এ-আলার ভিতরেও আর্কিওলজিকাল সার্ভেকে দিয়ে সমীক্ষা করানোর দাবিও তুলেছে তারা তাদের আরজিতে।
ব্যাপারটিকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে প্রবল হয়েছে সহিংসতার আশঙ্কা। রাজ্য়ের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নিত করলে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করলে তার ফল ভালো হবে না বলে ইতিমধ্যেই হিন্দুত্ববাদী দলটিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরাগা জ্ঞানেন্দ্র। সহিংসতার পথে নয়, সমস্যা থেকে থাকলে আইনের পথেই সমাধান বেরোক, এমনই মত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। বিশৃঙ্খলার আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই নিরাপত্তা বাড়িয়েছে কর্নাটক প্রশাসন। সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন