বাদাম একটি অতি পরিচিত খাদ্য। সস্তা, উপাদেয় ও যথেষ্ট পুষ্টিকর। চলার পথে, আড্ডায়, বাদাম অল্প টাকায় খেতে খেতে সময় পার করার সবচেয়ে ভালো উপায়। আমাদের দেশে বৃষ্টির দিনে বাদাম খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। শুধু বৃষ্টির দিনে নয় প্রতিদিনই পরিমিত পরিমাণ বাদাম খাওয়া উচিত। কারণ বাদাম খুবই পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং হৃদরোগ ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী। অনেকেরই ধারণা বাদাম খেলে হৃদপিণ্ডের ক্ষতি হয় ও কোলেস্টেরল বাড়ে বাদামের চর্বির জন্য। বাদামের চর্বিই হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। বাদামের চর্বির ৫০ শতাংশ হলো মনোআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট খেলে হৃদপিণ্ডের ক্ষতিকর এলডিএল মান কমে এবং বাড়ে হৃদপিণ্ডের উপকারী এইচডিএল।
হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ দশ বছর গবেষণার পর দেখেছে, যেসব মহিলা প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৫ আউন্স বাদাম খেয়েছেন, যাঁরা বাদাম খাননি তাদের তুলনায় করোনারি হৃদরোগে ৬৫ শতাংশ কম ভুগেছেন। ৩০ গ্রাম ভাজা বাদমে আছে প্রতিদিন দেহের চাহিদার ১০ শতাংশ ফলিক এসিড। এটা হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী।
বাদামকে কুচি কুচি করে বেটে নরম পেস্ট তৈরি করা হয়, একে বলে পীনাট বাটার। এটা দেহে শক্তি যোগায়। গবেষণায় দেখা গেছে- ফল ও সবজির সব গুণাগুণ বাদামে আছে, যা দেহের কোলেস্টেরল রুখতে সাহায্য করে। কাজু বাদামও কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। বাদামে আছে কোলিন এমাইনো এসিড যা মেধাশক্তি ও স্মরণশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বাদাম খেলে মোটা হয় এ ধরণা ভুল। কারণ বাদামে শর্করা কম থাকে। বাদামে আছে ভিটামিন ই। এটা একটি শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্ট। বাদামের এই ভিটামিন ই এলজিমারস রোগকে বিলম্বিত করে কিংবা প্রতিরোধ করে। ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্টাডি এর গবেষকরা দেখেন যে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কে যে ক্ষতি হয় ভিটামিন ই এর এন্টি অক্সিডেন্ট তা প্রতিরোধ করে। তবে বিজ্ঞানীরা ভিটামিন ই এর পরিপূরক গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
নিয়মিত অল্প পরিমাণ বাদাম খেলে মস্তিষ্ক সুস্থ থাকে। এতে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বাড়ে। চিনা বাদামসহ সব বাদামেই প্রচুর প্রোটিন আছে। ১০০ গ্রাম ডিমের চেয়ে ১০০ গ্রাম বাদামে অনেক বেশি প্রোটিন থাকে। এই প্রোটিন খাদ্যশস্য এবং ডালের প্রোটিন অপেক্ষা উৎকৃষ্টতর। তবে মাছ, মাংস, ডিম ও দুধের প্রোটিন অপেক্ষা নিকৃষ্টতর। তাই এগুলো অভাব শুধু চিনা বাদাম দিয়ে পূরণ করা যায় না।
বাদাম তেল সরিষার তেলের চেয়ে ভাল এবং বিভিন্ন রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়। চিনাবাদামে ভিটামিন ‘এ’ ছাড়া সব পুষ্টি উপাদান উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আছে। সকল ফল, শাকসবজি ও খাদ্যের চেয়ে সবচেয়ে বেশি খাদ্যশক্তি আছে। অধিকাংশ ফল ও শাকসবজির চেয়ে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ বেশি। ফসফরাসের পরিমাণ সব ফল ও শাকসবজির চেয়ে বেশি। ভিটামিন ‘ই’ আছে যা অধিকাংশ খাদ্যদ্রব্যে ভিটামিন ‘ই’ থাকে না। ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী চিনাবাদামে থাকে খাদ্যশক্তি ৫৭০ কিলোক্যালরি, শর্করা ২৬.২০ গ্রাম, আমিষ ২৬.৭০ গ্রাম, চর্বি ৩৯.৮০ গ্রাম, আয়রন ৩.১ মিলিগ্রাম । এছাড়াও খনিজ পদার্থ ও ভিটামিনসমূহ আছে।
সবশেষে মনে রাখুন- দৈনিক খাদ্য তালিকায় আংশিক চালের পরিমাণ কমিয়ে সমপরিমাণ গম বা ভুট্রা এবং সামান্য বাদাম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
মো: লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬২৭০১২০
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন