বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

স্বাস্থ্য

শিশুর র‌্যাশ বা ফুসকুড়ির সঙ্গে জ্বর

| প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ত্বকের র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি হলে আক্রাান্ত ত্বকের স্থানের রং পাল্টে যায়, স্বাভাবিক ত্বকের সঙ্গে যার পার্থক্য খুব সহজেই চোখে পড়ে। বিভিন্ন কারণে শিশুদের মধ্যে এই উপসর্গ দেখা দিতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে খাবার বা ওষুধের অ্যালার্জির কারণেও এটা হয়ে থাকে। তাছাড়া গ্রীষ্মকালে সূর্যের তাপে, ত্বকের ওপর র‌্যাশ দেখা যায়। ভাইরাস, ব্যাকটিরিয়া, ফাঙ্গাস, বা পরজীবী সংমণের কারণেও ত্বকের র‌্যাশ হতে পারে। কখনো কখনো কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসাবে ত্বকের র‌্যাশ দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও কোনও অ্যালার্জি সংমণের আগাম উপসর্গ হিসাবে ত্বকের র‌্যাশ বা ফুসকুড়ি দেখা যায়, যা থেকে প্রবল চুলকানি হয়, ফুলে যেতে পারে, এবং সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে যেতে পারে এবং পরে সেগুলি ফুসকুড়ি বা ফোড়ায় পরিণত হয়। তবে শিশুদের জ্বরের সাথে ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ সহ বিশেষ কয়েকটি ভাইরাস জনিত রোগ হয় যেগুলোকে এক্সানথেমাস ডিজিজ বলা হয়। যেমন, জলবসন্ত বা চিকেনপক্স, হাম এবং রুবেলা সহ বেশ কয়েকটি ভাইরাস সংক্রমনের শিশুদের জ্বরের সাথে ফুসকুড়ি বা র‌্যাশ হয়। এই ভাইরাসজনিত অসুস্থতাগুলি সাধারনত এমনিতেই সেড়ে যায়। তবে কখনো কখনো জ্বরে আক্রান্ত ফুসকুড়ি আরও মারাত্মক হতে পারে।

কয়েকটি জীবানু সংক্রমন যেমন মেনিনগোকক্কাল সংক্রমন, সেলুলাইটিস ইত্যীদি মারাত্বক হতে পারে। আবার কিছু ভাইরাস সংক্রমন যেমন রোসিওলা, ফিফ্থ রোগ খুবই হালকা রোগ। বাচ্চার যখন ফুসকুড়ি নিয়ে জ্বর হয় তখন পিতামাতারা স্বভাবতই উদ্বিগ্ন হয়ে পরেন। এসব ক্ষেত্রে অতিশিঘ্রই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত, বিশেষত যদি শিশু খুব অসুস্থ থাকে বা তাদের লক্ষণগুলি দ্রুত খারাপের দিকে যায়। অন্যদিকে, কিছ ুক্ষেত্রে ড্রাগের পার্শপ্রতিক্রিয়ার কারনেও ফুসকুড়ি বা জ্বর হতে পারে। যেহেতু, বিভিন্ন কারনে বা পরিস্থিতিতে শিশুদের জ্বরের সাথে ফুসকুড়ির লক্ষণগুলি দেখা দিতে পারে এবং কিছু ক্ষেত্রে তা ভয়ংকর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাই প্রথমদিকেই রোগ নির্নয় করা জরুরী। নিম্নে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য রোগের সংক্ষিপ্ত বর্ননা দেয়া হলো।

হাম ঃ হাম একটি ভাইরাস জনিত সংক্রমন। ঠিক মতো এ রোগের চিকিৎসা না করা হলে রোগী নানা জটিলতায় পড়তে পারে। তবে হাম সম্পূর্ণ প্রতিরোধযোগ্য। শিশুরাই হামে বেশি আক্রান্ত হয় বলে এক বছর থেকে ১৮ মাস বয়সী শিশুদের হামের ভ্যাকসিন দেওয়া হয়।

রুবেলা বা জার্মান হাম ঃ রুবেলা বা জার্মান হাম তিন দিনের হাম নামেও পরিচিত। রুবেলা একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এই রোগ প্রায়ই মৃদু এবং আক্রান্ত রোগীদের অর্ধেকই অসুস্থতা বুঝতে পারে না। লালচে ফুসকুড়ি সংক্রমণের প্রায় দুই সপ্তাহ পর শুরু হয়ে তিন দিনের জন্য স্থায়ী হতে পারে। এটি সাধারণত মুখের ওপর শুরু হয় এবং শরীরের বাকি অংশে ছড়িয়ে পড়ে। হামের মত একই জায়গায় কিন্তু কম লাল হামের ফুসকুড়ির মত উজ্জ্বল নয় এবং কখনও কখনও চুলকানি হয়। বড়দের অস্থিসন্ধিতে ব্যাথা হয়। রুবেলা একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ যা একটিমাত্র টিকার মাধ্যমে ৯৫% প্রতিরোধযোগ্য। প্রায়ইই এটা হাম এবং কোন ক্ষেত্রে হাম ও মাম্পস ভ্যাকসিনের সাথে একযোগে দেওয়া হয়, যা এমআর ও এমএমআর টিকা হিসাবে পরিচিত।

গর্ভাবস্থার প্রাথমিক পর্যায় মায়ের সংক্রমণ থেকে জন্মগত রুবেলা সিনড্রোম (সিআরএস) হতে পারে। সিআরএস আক্রান্ত শিশুরা এক বছরের বেশি সময় পর্যন্ত ভাইরাস রোগ ছড়াতে পারে। নবজাতকের রুবেলা সিনড্রোমে (সিআরএস) হৃদপান্ডের ত্রুটি, অপরিণত মস্তিষ্ক , চোখ এবং শ্রবণ-যন্ত্রের গঠনে অপূর্ণতা হয় । অর্থাৎ জন্মগত হৃদরোগ,অন্ধত্ব, বধিরতা, বা মানসিক প্রতিবন্ধি এবং অন্যান্য জীবন হানিকর বিভনড়ব অঙ্গের রোগ নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। এছাড়াা অপূর্ণতা, কম জন্ম ওজন, এবং নবজাতক থ্রম্বোসাইটপেনিয়া, রক্তাল্পতা এবং হেপাটাইটিস হতে পারে।

জল বসন্ত ঃ ভেরিসেলা-জস্টার নামক ভাইরাসের কারণে চিকেনপক্স হয়। চিকেনপক্সে জ্বর, ক্লান্তিবোধ, বিরক্তিভাব ও মাথা ব্যাথার মত উপসর্গের সাথে শুরু হতে পারে। ফুসকুড়ির এক বা দুই দিনের মধ্যে দেখা দেয়, সমস্ত শরীরে ক্ষুদ্রক্ষুদ্র গুটি, গুটিগুলো ভিতরে পানি বা জল ভরা ফোসকার হয় । আর একারনেই একে জলবসন্ত বলা হয়। ফোসকাগুলি চুলকায় এবং শুকনো চামড়া ফেটে গিয়ে রক্তপাত হতে পারে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রায় এক সপ্তাহের মধ্যে ভাল হয়ে যায়। তবে মারাত্মক বা দ্বীর্ঘমেয়াদী রোগী বা কম ও দুর্বল প্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ শিশুরা খুব অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। বেশিরভাগ দেশেই এখন চিকেনপক্সের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে । যদিও বাংলাদেশে এই ভ্যাক্সিন শুধুমাত্র বেসরকারী পর্যায়ে পওয়া যায়। এটি অত্যন্ত কার্যকর ভ্যাক্সিন। তবে কিছু ক্ষেত্রে টিকা নেয়ার পরও চিকেনপক্স হতে পারে। যেসব শিশুরা ভ্যাকসিন দেওয়ার পরে চিকেনপক্সে আক্রান্ত হয়, তাদের মধ্যে এই রোগটি খুব হালকা আকারে হয়।

স্কারলেট জ্বর : স্কারলেট জ্বর ‘গ্রুপ এ স্ট্রেপ্টোকোকাস’ সংক্রমণের ফলে গলায় প্রদাহ থেকে হয়। স্ট্রেপ একটি ব্যাকটিরিয়াা সংক্রমণ, এবং সংক্রমণের কিছু দিনের মধ্যে আক্রান্তরা দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ে। ফুসকুড়ি বুকে, ঘাড় বা কুঁচকিতে দেখা দেয়।

সাধারনত শিশুর গলাব্যথার সাথে ফুসকুড়ি হয় বা গলা ব্যথা কমে যাওয়ার পরেও ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। বেশিরভাগ বাচ্চাদের জ্বর হয় এবং এতে চেহারায় রক্তিম ভাব মত থাকতে পারে।

অ্যান্টিবাাটিক দিয়ে স্কারলেট জ্বরের চিকিত্সা করতে হয়। নতুবা পরবর্তিতে বাতজ্বরের মত গুরুতর রোগের সম্ভাবনা থাকে এবং কিছু ক্ষেত্রে হৃদপিন্ডের ভাল্ভ মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এই কারণে, ডাক্তারের সাথে পরামর্শ গুরুত্বপূর্ণ।

ঘরোয়া সমাধান ঃ অধিকাংশ সময়ে ত্বকের র‌্যাশের কোনও চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না এবং নিজে থেকেই মিলিয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে কিছু ঘরোয়া প্রতিকারের সাহায্যে উপসর্গের উপসম হয়। যেমন ক্যালামাইন লোসন লাগালে অথবা গায়ে পাউডার দিলে নিরাময় হয়। প্রয়োজন বোধে অ্যান্টি অ্যালার্জিক বা অ্যান্টি হিস্টামাইন অথবা স্টেরয়েড ক্রিম বা মলম ব্যবহার করা যেতে পারে । এছাড়া ঠান্ডাপানি, নীমপাতা দিয়ে গা ধোয়া, বরফের শেক, পাউডার দিলে জ্বালা ও চুলকানীর উপশম করা যায়।

অধ্যাপক (ডা:) মনজুর হোসেন
সভাপতি, বাংলাদেশ শিশু চিকিৎসক সমিতি।
সাবেক অধ্যাপক ও পরিচালক, ঢাকা শিশু হাসপাতাল
ও চীফ কনসালট্যান্ট ডা.মনজুর’স চাইল্ড কেয়ার সেন্টার
বাড়ী নং- সাত মসজিদ রোড ,ধানমন্ডি,ঢাকা।
সেল- ০১৭১১-৫৩৫১৪৮।

 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন