দক্ষিণাঞ্চলে ডায়রিয়া পরিস্থিতির ক্রমবনতি অব্যাহত রয়েছে। গত ২০ দিনে আরো ৮ হাজার ডায়রিয়া আক্রান্ত নারী-পুরুষ ও শিশু দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে। এরমধ্যে গত এক সপ্তাহেই রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ৩ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ৪শ’ ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে আসছে। তবে এর বাইরে আরো অগনিত রোগী বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল ও ক্লিনিকসহ ডাক্তারের চেম্বারে ব্যবস্থাপত্র নিয়ে বাড়ীতে চিকিৎসা গ্রহণ করলেও তার কোন পরিসংখ্যান নেই স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে। এনিয়ে গত এক মাসে দক্ষিণাঞ্চলের ৪২ উপজেলায় প্রায় সাড়ে ১২ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেছে। আর গত সাড়ে ৩ মাসে রোগীর সংখ্যা দাড়িয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার । এরমধ্যে অবশ্য ৩৬ হাজার সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে।
গতবছর শুরুর দিকেও দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা জুড়ে বৃষ্টির অভাবের সাথে খাল ও বদ্ধ জলাশয়ের পানি দুষিত হয়ে পড়ায় ব্যাপকহারে ডায়রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি ঢাকার আইসিডিডিআরবি’র বিশেষজ্ঞ দল দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি জেলা সফর করে নমুনা সংগ্রহ করে চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ধারণ করে দেন।
গত বছর মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত প্রায় ৭৫ ডায়রিয়া রোগী দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করেন। এর মধ্যে মারা গেছে ২৫ জন। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, বরিশাল জেনারেল হাসপাতালের ৪ শয্যার ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ১শ’ রোগীকেও চিকিৎসা দিতে হয়েছে। হাসপাতালের মেঝেতেও স্থান সংকুলান না হওয়ায় মাঠে তাবু খাটিয়েও চিকিৎসা নিয়েছে মানুষ ।
এবছর গত মার্চের মধ্যভাগ থেকে পরিস্থিতির অবনতি শুরু হয়। এপর্যন্ত যে ৩৬ হাজার ৪৮৪ জনের আক্রান্তের কথা বলেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। তার অন্তত ৩৫ হাজারই আক্রান্ত হয়েছে মধ্য মার্চের পরে। এবছরও গত বছরের মতই সর্বাধিক আক্রান্তের সংখ্যাটা বরিশালেই। ২০মে সকাল পর্যন্ত বরিশালে জেলায় আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৯ হাজার। যার দুই তৃতীয়াংশই বরিশাল মহানগরীতে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আক্রান্ত জেলা ভোলা। এ দ্বীপ জেলাটিতে ইতোমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ৭ হাজার অতিক্রম করেছে। গত মাসের শেষ থেকে পিরোজপুরেও ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকে। এসময়ে জেলাটিতে প্রতিদিন গড়ে দেড় শতাধিক মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। জেলাটিতে ইতোমধ্যে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৭ হাজার। পটুয়াখালীতে ইতোমধ্যে ৬ হাজার ১০৫ জন ডায়রিয়া রোগী বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বরগুনা জেলায়ও ইতোমধ্যে প্রায় ৪ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। ঝালকাঠীর অবস্থাও প্রায় একই। দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে ছোট জেলা ঝালকাঠীতেও ইতোমধ্যে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার ডায়রিয়া রোগী সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন