সুনামগঞ্জের ছাতকে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও বেড়েছে দূর্গত মানুষের দূর্ভোগ। চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন পানিবন্দি মানুষ। সার্বিক ভাবে অর্ধফুট পানি কমেছে এখানে। কিন্তুু পানি কমলেও ভারী বৃষ্টির কারনে তা আবারো পানি বেড়ে যায়।
উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। বন্যার কারনে গ্রামাঞ্চলের টিউবওয়েলগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বন্যার পানি ময়লাযুক্ত হওয়ায় ফুটিয়েও পান করা যাচ্ছে না। গত ১৭ মে থেকে সারা দেশের সাথে ছাতকের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গত ২০ মে বিকেলে দুরপাল্লার কয়েকটি বাস ও লরি ঝুঁকি নিয়ে ছাতকে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের ফায়ার সার্ভিস এলাকা, বঙ্গবন্ধু সড়ক ও ঝাওয়ার খাড়া ব্রীজের দু'পাশ এলাকায় এখনো তিন ফুট পানি রয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সুরমা, চেলা ও পিয়াইন নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যা দূর্গতদের জন্য ৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় দু'শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ অসহায় লোকজনের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরন করা হলেও তা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। টানা দিনদিন রান্না করা খাবার পানিবন্দি আশ্রয় কেন্দ্রে বসবাসকারী মানুষকে বিতরণ করেছেন ছাতক পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী।
বন্যায় উপজেলার ইসলামপুর, নোয়ারাই, কালারুকা, ভাতগাঁও, সিংচাপইড়, উত্তর খুরমা, দক্ষিণ খুরমা, দোলারবাজার, ছৈলা-আফজলাবাদ, গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, জাউয়াবাজার ও চরমহল্লা ইউনিয়নসহ অধিকাংশ এলাকায় বন্যার পানিতে থৈ-থৈ করছে। এসব এলাকার ছোট-বড় প্রায় ৫০টি মৎস্য খামারের মাছ ঢলের পানিতে ভেসে গেছে। উপজেলার প্রায় সবকটি গ্রামীন সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। অনেক কৃষকের মাড়াই করা ধান রোদের কারনে ঘরে পচে যাচ্ছে। অনেকের কাটা ধান বন্যায় ভেসে গেছে। উপজেলার প্রায় সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মাঠে বন্যার পানি থাকায় শনিবার পর্যন্ত বন্ধ ছিল। উপজেলার সব ক'টি হাট-বাজারেও বন্যার পানি রয়েছে। কালারুকা ইউপি'র ঝাওয়া আশ্রয়ন প্রকল্পে থাকা এক কৃষক জানান, এক বিঘা জমি কর্তন করা ধান বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ঘরে এবং রাস্তায় পানি থাকায় ধান কোন জায়গায় রাখা যাচ্ছে না। গৃহপালিত পশুর গো-খাদ্য সঙ্কটে বিপাকে পড়েছেন শত-শত কৃষক পরিবার। ঢলের পানির প্রবল স্রোতের কারনে আতঙ্কে রয়েছেন সুরমা নদী তীরবর্তী শতাধিক পরিবার। জাউয়াবাজার ইউনিয়নের ব্যবসায়ী মাইদুল ইসলাম জানান, গত ৪দিন ধরে পানি বন্দি রয়েছেন। ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। দোকানে বন্যার পানি প্রবেশ করায় অনেক মালামাল নষ্ট হয়ে গেছে। ৪দিন ধরে একই জায়গায় পানি রয়েছে। ২-৪ইঞ্চি পানি কমলেও তা আবার বৃষ্টির কারনে বেড়ে যাচ্ছে। ছাত্তার মিয়া নামের এক কৃষক জানান, নিজের খাবারের চেয়ে এখন গরু নিয়ে চরম বিপদে তিনি আছেন। চারিদিকে পানি আর পানি। ৪দিন ধরে গরু পানিতে রয়েছে। দুই দিন যাবত একই জায়গায় পানি রয়েছে। খড়কুটো যা ছিলো তা বন্যায় ভেসে গেছে। সিএনজি চালক সজিব আহমদ জানান, ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের গাড়ি চালাতেন তিনি। সড়কের অধিকাংশ জায়গা বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারনে গাড়ি চালাতে পারছেন না। পরিবারের লোকজন নিয়ে বিপদে আছেন। এখন পর্যন্ত কোন জনপ্রতিনিধির দেখা মেলেনি। এলাকায় অনেক ধনি ব্যক্তিরা থাকলেও আজ পর্যন্ত কোন ধরনের সহযোগিতাও কেউ করেনি।
এদিকে শহরের বাইরে পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ খাদ্য ও বিশুদ্ধর পানির সঙ্কটে ভোগছেন। এসব পানিবন্দি মানুষ সরকারী-বেসরকারীসহ কোন ধরনের ত্রান সহায়তাও পাচ্ছে না। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। সুরমা, চেলো ও পিয়াইন নদীর তীব্র স্রোতের কারনে ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের পানিবন্দি মানুষের কাছে ত্রান সহায়তা পৌছে দেয়া অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ন মনে করছেন অনেকেই। যে কারনে পানিবন্দি এসব মানুষ রয়েছে সরকারী-বেসরকারী ত্রান সহায়তার বাইরে। ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের চরম দুর্ভোগ থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর অন্তরালে। অভিজ্ঞজনরা মনে করেন, শহর এবং শরের আশপাশের বন্যাকবলিত মানুষকে সহায়তা প্রদানে অনেকেই হাত বাড়িয়ে থাকে। তারা সরকারী-বেসরকারী ত্রান পেয়ে থাকে সহজেই। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের পানিবন্দি গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ দেখার কেউ থাকে না। গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পানিবন্দি মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারী-বেসরকারী সংস্থার কর্তাদের প্রতি আহবান জানান তারা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, বন্যা পরিস্থিতি সার্বিকভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। একটি টিমও গঠন করা হয়েছে। বানভাসি মানুষের সহায়তায় জন্য প্রস্তুত রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন