নদীতে প্রবল স্রোতও ফেরি সঙ্কটের কারণে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে আরিচা-কাজিরহাট এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটের ফেরি সার্ভিস। ফলে এসব ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে সহ¯্র্রাধিক যানবাহন।
গতকাল সকালে আরিচা ফেরি ঘাট এলাকা থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বোয়ালী ডাক্তারখানা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এবং উথুলী মোড় থেকে বোয়ালী ব্রীজ পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মহাসড়কের উপর পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। দুর্ভোগে পড়েছেন এসব যানবাহনের শ্রমিকরা। কর্তৃপক্ষ দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এ দুর্ভোগ সহসায় কমছে না বলে মন্তব্য করেছেন ভুক্তভোগী অনেকেই।
বিআইডব্লিউটিসি সুত্রে জানা গেছে, আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে ফেরি সার্ভিস সচল রাখতে ২টি ছোট এবং ১টি ডাম্ব মোট ৩টি ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে ডাম্ব ফেরি রাণীক্ষেত এবং ছোট ফেরি কপোতি অনেক দিনের পুরানো হওয়ায় এমনিতেই ১৪কিলোমিটার নৌপথ যাতায়াতে ৫/৬ ঘন্টা করে সময় লাগে। ইঞ্জিন সমস্যার কারণে মাঝে-মধ্যে মেরামতে থাকছে এ দু’টি ফেরি। শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে মেরামতের জন্য আরিচা ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে ফেরি কপোতি।
নদীতে পানি বৃদ্ধির কারণে কাজিরহাটে দু’টির একটি ঘাট বন্ধ রয়েছে। কাজিরহাট ফেরি ঘাটের কাছাকাছি লঞ্চ ঘাট হওয়ায় অনেক লম্বা আকৃতির ডাম্ব ফেরি ওই ঘাটে ভীড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এ ফেরিটি শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে আরিচা ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে। কদম নামের একটি মাত্র ফেরি দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে।
এদিকে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ২১টি ফেরির মধ্যে ১৮টি চলাচল করছে। রো-রো ফেরি গোলাম মওলা ইঞ্জিন সমস্যার কারণে ভাসমান কারখানায় সাময়িক মেরামতে রয়েছে। নদীতে প্রবল স্রোত এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে এ নৌরুটে ২টি ডাম্ব ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে উক্ত নৌপথগুলোতে ফেরি ফেরি সঙ্কট চরম আকার ধারণ করছে।
এছাড়া নদীতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে ফেরিগুলোর স্রোতের বিপরীতে চলতে সময় একটু বেশী লাগছে। আগে একটি মাত্র দ্রুতগামী কদম ফেরি যাতায়াতে সময় লাগতো তিন ঘণ্টা, এখন লাগছে চার ঘন্টা। এছাড়া রাণীক্ষেত ও কপোতির সময় লাগছে ৬/৭ ঘণ্টা করে। প্রতিটি ফেরিতেই এক ঘণ্টা করে সময় বেশী লাগছে। এতে যানবাহনগুলোকে ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে এক দিন পর ফেরি পারাপার হতে হচ্ছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যানবাহন শ্রমিকদেরকে। এ পরিস্থিতিতে দ্রুত ফেরি বাড়নো দরকার বলে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
আব্দুল মালেক, মজিবর ও হাসেম আলীসহ একাধিক ট্রাক চালকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলগামী মানুষের রাজধানী ঢাকার সাথে সহজ যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম বঙ্গবন্ধু সেতু এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটের বিকল্প রুট হতে পারে আরিচা-কাজিরহাট নৌ-রুট। বিশেষ করে পাবনা, ঈশ্বরদীর মানুষ এমনিতেই এখান দিয়ে যাতায়াত করে থাকে। অনেক সময় বঙ্গবন্ধু সেতু ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট হলে ওই রুটের গাড়িগুলো আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট ব্যবহার করতে দেখা গেছে। যানজট এড়াতে এবং সময় ও অর্থ সাশ্রয় হওয়াতে অনেকেই এই রুট ব্যবহার করছে বলে জানা গেছে।
ট্রাক চালক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুতে ওজনের ঝামেলাসহ নানা ধরনের ঝক্কি-ঝামেলা এবং যানজটের বিড়ম্বনার কারণে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু হওয়ার পর থেকে আমি এখান দিয়েই চলাচল করছি। এতে একদিকে ফেরিতে বিশ্রাম নেওয়া যায়। অপর দিকে, সহজে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। কিন্তু ফেরি সঙ্কটের কারণে অনেকেই এরুটে আসতে চাচ্ছেন না। প্রয়োজনীয় সংখ্যক ফেরি থাকলে যাত্রী ও যানবাহনের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি জানান।
বিআইডব্লিউটিসি’র আরিচা ঘাটের ম্যানেজার আবু আব্দুল্লাহ বলেন, ঘাট সমস্যার কারণে ডাম্ব ফেরি চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ইঞ্জিন সমস্যার কারণে কপোতি ফেরি মেরামতে রয়েছে। তিনটি ফেরির মধ্যে দুটি ফেরি বসা। শনিবার কদম নামের একটি মাত্র ফেরি দিয়ে আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটের ফেরি সার্ভিস চালু রাখা হয়েছে। এছাড়া, বিগত কয়েকদিন ধরে নদীতে পানি বৃদ্ধিতে প্রবল স্রোতের বিপরীতে ফেরিগুলো চলাচলে সময় একটু বেশী লাগছে বলে তিনি জানান।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন