শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে হবে

জালাল উদ্দিন ওমর | প্রকাশের সময় : ২৩ মে, ২০২২, ১২:০৩ এএম

এখন দ্রব্যমূল্য যে উচ্চতায় তাতে সীমিত আয়ের মানুষের জীবন যাপন অত্যন্ত কষ্টকর। তাদের আয় সীমিত এবং তাদেরকেও পেটে তিন বেলা খাবার দিতে হয়। আর পেটের ন্যূনতম একটা চাহিদা আছে এবং সেটা পূরণ করতে হয়। তা না হলে শরীর দুর্বল এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে। আর সবাইকে কিন্তু একই দাম দিয়েই বাজার থেকে পণ্য কিনতে হয়। ফলে সীমিত আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে গিয়ে নিম্নআয়ের মানুষ প্রতিনিয়তই হিমশিম খাচ্ছে। অনেকে সঞ্চয় ভেঙ্গে জীবন চালাচ্ছে। আবার অনেকে ধার দেনা করতে বাধ্য হচ্ছে। চাল, ডাল, তেল, তরকারিসহ প্রতিটি জিনিসের দামই সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে। বাচ্চাদের খাবার গুঁড়ো দুধের দামও বেড়েছে। কাপড় চোপড়ের দামও বেড়ে গেছে। চিকিৎসা খরচ এবং ঔষধপত্রের দাম বেড়ে গেছে। রড, সিমেন্ট, ইট, বালু, টাইলস, স্যানিটারি আইটেম, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ সকল ধরনের নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেক বেড়েছে। হোটেল রেস্টুরেন্টেও সব কিছুর দাম বেড়েছে। চা, সিংগারা, সমুচা, পরোটা, ডাল-ভাজিসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে গাড়ি ভাড়াও বেড়েছে। অথচ, সেই অনুসারে মানুষের আয় বাড়েনি। ফলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অস্বাভাবিক গতিকে এখনই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তার জন্য সরকারকে কঠোর এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। বাজার ব্যবস্থাকে নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। সিন্ডিকেট করে পণ্যদ্রব্য মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোনো দ্রব্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে কিনা সেটাও তদন্ত করতে হবে। সাম্প্রতিককালে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দেয় এবং সয়াবিন তেলের যোগান কমে যায়। অথচ, আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিপুল পরিমাণ সয়াবিন তেল উদ্ধার হয়। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফায় বিক্রির জন্য এসব তেল বিভিন্ন স্থানে গোপনে মজুদ করেছিল। সুতরাং সয়াবিন তেলের এই সংকট যে ব্যবসায়ী নামধারী কিছু মানুষের সৃষ্টি তা তো প্রমাণিত। এ অবস্থায় অবৈধ মজুতদারির জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। বাজারে পণ্যের চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে অবশ্যই সমন্বয় সাধন করতে হবে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রকৃত কারণকে খুঁজে বের করতে হবে এবং এর পিছনে যারাই জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ স্বাভাবিক এবং দাম স্থিতিশীল রাখার উদ্দেশ্যে টিসিবির কার্যক্রমকে আরো বাড়াতে হবে। টিসিবিকে সক্রিয় করতে হবে এবং টিসিবির মাধ্যমে পণ্য আমদানির পরিমাণ বাড়াতে হবে। পণ্য পরিবহনের সময় সন্ত্রাসীদের চাঁদা প্রদান করতে হয়। আর এই চাঁদাবাজি জিনিসপত্রের দাম বাড়ার পিছনে একটি কারণ। চাঁদাবাজির কারণে পণ্যের পরিবহন খরচ বেড়ে যায়, যা সরাসরি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়।

বিভিন্ন ধর্মীয় এবং সামাজিক উৎসব উপলক্ষে এদেশে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এবং ইচ্ছামত দাম বাড়িয়ে দেয়। যেমন প্রতি বছর রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, যার বাস্তবসম্মত কোনো কারণ নেই। ইসলাম কিন্তু অত্যাধিক মুনাফা অর্জনের জন্য পণ্যের মজুদ করা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এবং যারা এরকম পণ্য মজুদ করে বাজারে পণ্যের দাম বাড়াবে তাদের পরকালে কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে। অথচ, আমরা ইসলামের এই শিক্ষাকে গ্রহণ করিনি। এ অবস্থায় বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে হবে এবং পণ্যের মূল্যও স্বাভাবিক রাখতে হবে।

আজীবন কোনো জিনিসের দাম এক থাকবে না এবং তা নিরেট সত্য। সময়ের সাথে সাথে সঙ্গত কারণে দাম বাড়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তবে সেই মূল্য বৃদ্ধির একটা সীমা-পরিসীমা থাকতে হবে। যুদ্ধ-বিগ্রহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, খরা, বন্যার কারণে ফসল এবং অন্যান্য বস্তুর উৎপাদন কম হলে বাজারে এসব পণ্যের যোগান কম হওয়াটা স্বাভাবিক। এ অবস্থায় যোগান কম হবার কারণে চাহিদা মতো পণ্য না পাওয়াটাও স্বাভাবিক। কিন্তু অকারণ, অহেতুক দাম বাড়ার তো কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।

লেখক: প্রকৌশলী এবং উন্নয়ন গবেষক।
omar_ctg123@yahoo.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন