শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সম্পাদকীয়

প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ আবশ্যক

সরদার সিরাজ | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২২, ১২:০৬ এএম

মানুষের শরীর ও মনের সুস্থতার জন্য নিয়মিত ব্যায়াম ও হাঁটা-চলা করা প্রয়োজন। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ডাক্তার নির্ধারিত সময় হাঁটা-চলা করা বাধ্যতামূলক। শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য নিয়মিত খেলাধুলা করা প্রয়োজন। অর্থাৎ স্বাস্থ্যনীতি অনুযায়ী প্রতিটি মানুষের দৈনিক ৮ ঘণ্টা পরিশ্রম, ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম ও ৮ ঘণ্টা বিনোদন ও খেলা প্রয়োজন। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্যও প্রয়োজনীয় ফাঁকা যায়গা থাকা দরকার। ভালো খেলার মাধ্যমে প্রচুর অর্থ আয় করা যায়। তাই অনেকেই ভালো খেলোয়াড় হওয়ার জন্য সাধনা করে। ক্লাব ও জাতীয় দলগুলো কোচ রেখে নিয়মিত কঠোর অনুশীলন করে। ভালো খেলে এবং আঞ্চলিক ও বিশ্ব খেলার আয়োজন করে দেশের ভাবমর্যাদা বৃদ্ধি করা যায়। তাই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক খেলার আয়োজন করা নিয়ে প্রচণ্ড প্রতিযোগিতা চলে। বিভিন্ন দেশ কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে প্রয়োজনীয় আন্তর্জাতিক মানের খেলার মাঠ ও হোটেল তৈরি করে। এছাড়া, কোটি কোটি ডলারে খেলোয়াড়, ক্লাব, কোচ, রেফারি কেনা-বেচা হয়। ক্রীড়া তারকারা মানুষের পরম শ্রদ্ধেয় হয়। অনেকেই অনায়াসে এমপি, মন্ত্রী, জাতীয় ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি হয়। এসব বহুবিধ সুবিধার জন্য বিশ্বের সব দেশেই প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ ও পার্ক থাকা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে তা নেই। যে সামান্য আছে, তারও অধিকাংশই দখল হয়ে রয়েছে। ফলে মানুষের খেলা ও বিনোদন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। তাই অনেক দেশীয় খেলা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক খেলাগুলোরও উন্নতি নেই তেমন। প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ না থাকার ক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকা সর্বাধিক। এ নিয়ে গত ২৯ এপ্রিল জার্মান বেতারে প্রকাশ, ‘বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব প্ল্যানার্স এর গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ঢাকা শহরের খেলার মাঠ বা পার্কের তালিকাটা কাজীর গরুর মতো, যা কেতাবে আছে বাস্তবে নেই। আর যা আছে তার সর্বোচ্চ ১৮ ভাগে সাধারণের প্রবেশাধিকার আছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দখলে আছে ৬০ ভাগ। আর সরাসরি সরকারের দখলে আছে সাত ভাগ। প্রধানমন্ত্রীর ‘অনুশাসন’ আছে, রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে দুইটি করে মাঠ থাকতে হবে। কিন্তু কাগজে-কলমেও ঢাকার ৪১টি ওয়ার্ডে কোনো মাঠ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হু’র মতে, শহরে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ৯ বর্গমিটার খোলা জায়গা থাকা দরকার। কিন্তু ঢাকা শহরে আছে এক বর্গ মিটারেরও কম। স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন বলেন, এর ফলে আমরা ভবিষ্যতে একটি হৃদয়হীন ও অসামাজিক প্রজন্ম পাবো। যাদের দুনিয়া হবে টিভি ও মোবাইল ফোন। তারা বাস্তব দুনিয়া চিনবে না। বাপা’র সভাপতি ডা. আবদুল মতিন বলেন, খোলা মাঠ আর সবুজ না থাকলে এক সময় জীবনও থাকবে না।’ উক্ত খবরে ঢাকার কোন খেলার মাঠ কারা দখল করেছে এবং তাতে কী করা হয়েছে তার বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে। সে মতে, বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল ও প্রতিষ্ঠান খেলার মাঠ দখল করে বাজার, স্থাপনা ইত্যাদি করেছে। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানও পিছিয়ে নেই। যার সর্বশেষ উদাহরণ কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ। এলাকার লোকজন, কিছু পরিবেশবিদ, মিডিয়ার বলিষ্ঠ ভূমিকা এবং শেষাবধি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণে মাঠটি রক্ষা পেয়েছে। কিন্তু ঢাকার অন্যসব খেলার মাঠের ক্ষেত্রে কোনো আন্দোলন হয়নি। তাই সেগুলোর অপমৃত্যু ঘটেছে নীরবেই! ফলে মানুষের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তবুও খেলার মাঠগুলো পুনরুদ্ধার করে সকলের জন্য উন্মুক্ত করার বিন্দুমাত্র প্রচেষ্টাও নেই! তাই বেলা’র প্রধান সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আমাদের প্রিয় নগরী ঢাকা শহর আজ একটি দর্শনহীন, ভিশনহীন ও সমন্বয়হীন দূষিত নগরে পরিণত হয়েছে।’ এ অবস্থা কম-বেশি সারা দেশেই। তবুও মাঠ দখল চলছেই!

দেশে প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ না থাকায় মানুষ নানাবিধ সংকটে পড়েছে। যার অন্যতম হচ্ছে ইন্টারনেটের প্রতি আসক্তি এবং নানা অপরাধে লিপ্ত হওয়া। অনলাইন জুয়াও ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলে যে সে ক্ষতি কিছু পুষিয়ে নিবে, সে উপায়ও নেই তাদের। কারণ, বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ নেই। তাই শিশুরা ঘর বন্দি হয়ে পড়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে তারা রেডিও, টিভি ও সামাজিক মাধ্যমগুলোতে সম্পৃক্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগই আসক্ত হয়ে পড়েছে ইন্টারনেট ভিত্তিক বিনোদনে। এমনকি পর্নোগ্রাফিতেও। ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে ব্যাপক।যার অন্যতম হচ্ছে: স্থূল হওয়া, ঠিকমতো পড়াশোনা না করা, সময় মতো খাওয়া-নাওয়া না করা, নিয়মিত না ঘুমানো, মনমানসিকতা খিটখিটে হওয়া, দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। গত ১১ মে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা শহরে খেলার সুযোগ কম। তাই শিশুরা ফ্ল্যাটে বাস করে ফার্মের মুরগির মতো হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ শিশুদের সহজাত সামাজিক গুণাবলির বিকাশ হচ্ছে না। শিশুদের অনলাইন গেমিং আসক্তিকে মানসিক সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে হু। স্মার্টফোন না পাওয়ায় শিশুর আত্মহত্যা ও বাড়ি থেকে পালানোর খবরও প্রকাশিত হচ্ছে। আঁচল ফাউন্ডেশনের তথ্য মতে, ২০২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে। নিম্নস্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ সংখ্যা আরো বেশি। অন্যদিকে, দেশের সর্বত্রই কিশোর গ্যাং ক্রমেই বেপরোয়া হয়ে উঠছে!

কলাবাগানের তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে টানা-হেঁচড়ার সময় বিবিসির সাথে সাক্ষাৎকারে স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘ঢাকার খেলার মাঠগুলোর নিয়ন্ত্রণের জন্য একক কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। অনেক প্রতিষ্ঠানের আওতাধীন রয়েছে এসব মাঠ। ফলে তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে মাঠগুলো দখলমুক্ত হচ্ছে না। তাই ঢাকার সব খেলার মাঠের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের আওতায় দেওয়া দরকার। কারণ, এই সংস্থাটি সরাসরি জনগণের সাথে সম্পৃক্ত। তাই জনগণ ও জনপ্রতিনিধিরা সম্মিলিতভাবে বেদখলে থাকা মাঠগুলো পুনরুদ্ধার এবং সব মাঠ পরিচর্যা করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখতে পারবে। ঢাকাবাসীর ব্যাপক কল্যাণ হবে।’ বিবিসির উক্ত সাক্ষাৎকারে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও অংশগ্রহণ করেন। তাতে তিনি বলেন, ‘ঢাকার সব খেলার মাঠের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের আওতায় দেওয়া হলে সংস্থাটি স্বীয় দায়িত্ব পালেন সচেষ্ট হবে।’

এই অবস্থায় ঢাকাসহ সারা দেশের যেসব খেলার মাঠ বেদখল হয়ে রয়েছে, তা পুনরুদ্ধার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে অবিলম্বে। তার পরও যদি খেলার মাঠ প্রয়োজন মোতাবেক না হয়, তাহলে প্রয়োজনীয় মাঠ সৃষ্টি করতে হবে। উপরন্তু মানুষকে, বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের নিয়মিত সব ধরনের খেলার প্রতি আগ্রহী করে তুলতে হবে। এছাড়া, ঘন ঘন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক খেলার আয়োজন করতে হবে দেশে। তাতে দেশের খেলোয়াড়দের দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা বাড়বে। স্মরণীয় যে, আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের নাম জানে না বা শোনেনি এমন লোক বিশ্বে নেই। উক্ত দু’টি দেশের বিশ্ব পরিচিতি ঘটেছে কি আর্থিক, সামরিক, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সাহিত্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে? না, তা হয়নি। আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের বিশ্বে সুপরিচিতি ঘটেছে ফুটবলের জন্য। কারণ, সেখানে জন্মেছে জগৎখ্যাত ফুটবলার পেলে, ম্যারাডোনা, মেসি ইত্যাদি। তাদের ক্রীড়া নৈপুণ্যেই দেশ দু’টি কয়েকবার করে ফুটবলে বিশ্ব ও আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের কয়েকটি ছোট ও গরিব দ্বীপ নিয়ে গঠিত হয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল। সে দলেই তৈরি হয়েছে বিশ্বখ্যাত ক্রিকেট তারকা লারা, গেইল ইত্যাদি। তাদেরকে চিনে না বা তাদের নাম শোনেনি এমন ক্রীড়ামোদী বিশ্বে নেই। এরূপ অনেক দেশ বিশ্বখ্যাত হয়েছে নারী, পুরুষ ও প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়া নৈপুণ্যেই। উপরন্তু বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ সে দেশগুলোর জাতীয় দলের চরম ভক্ত। তাই বিশ্বকাপ শুরু হলেই, বিশেষ করে ক্রিকেট ও ফুটবলের ক্ষেত্রে বিশ্ববাসী প্রায় উন্মাদ হয়ে যায়। অসংখ্য মানুষ প্রিয় দলের জার্সি পরিধান করে, বিপুল অর্থ দিয়ে টিকেট কিনে মাঠে খেলা দেখে। এছাড়া, কোটি কোটি মানুষ রেডিও-টিভির সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে খেলা উপভোগ করে। রেডিও-টিভিতে চলে নানা পণ্যের বিজ্ঞাপনের হিড়িক। উপরন্তু অগণিত মানুষ মিছিল করে দলের জয়োধ্বনী করে। পক্ষে-বিপক্ষে ব্যাপক তর্ক-বিতর্কও হয় । এ ক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল-মত নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর নির্বিশেষে সকলেই একাকার হয়ে যায়। এমন ‘বিশ্ব মিলন’ খুব কম ক্ষেত্রেই ঘটে। হানাহানির সংখ্যাও কম হয় না। বিশ্বখ্যাত তারকাদের জার্সিও বিক্রি হয় রেকর্ড মূল্যে। ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ জয়ের জার্সি সম্প্রতি বিক্রি হয়েছে রেকর্ড মূল্যে। খেলা নিয়ে পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ল্যাটিন আমেরিকা ও ইউরোপের মানুষ ফুটবল পাগল। উপমহাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার মানুষ ক্রিকেট পাগল। মার্কিনীরা রাগবি ও রেসলিংয়ে অনুরক্ত। চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মানুষ ইনডোর খেলায় পারদর্শী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ, ব্যয়বহুল, সর্বজনীন, একসঙ্গে সর্বাধিক খেলার আসর হচ্ছে বিশ্ব অলিম্পিক। যা ৪ বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয়। বিশ্বখ্যাত খেলোয়াড়গণ যে সকলেই ধনী ঘরের সন্তান, তা নয়। অধিকাংশই দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। উপরন্তু তাদের এ অবস্থা একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিনের লাগাতর প্রচেষ্টা, প্রয়োজনীয় পরিচর্যা ও পর্যাপ্ত খেলার মাঠ থাকার কারণেই হয়েছে।
বাংলাদেশেরও পরিচিতি বেড়েছে ভালো ক্রিকেট খেলার জন্য। বিশেষ করে, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জন্য। বর্তমানে বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ৮ম। টাইগাররা যখন কোনো খেলায় জয়ী হয়, তখন দেশবাসী আনন্দে আত্মহারা হয়। প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীগণ, রাজনীতিবিদগণ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিদের অভিনন্দন বার্তার সুনামি চলে। এসব দেখে-শুনে শিশুরা পর্যন্ত ক্রিকেটের প্রতি অনুরক্ত হয়েছে। তাই তাদের অনেকেই যত্রতত্র প্লাস্টিকের ব্যাট-বল নিয়ে খেলে। বিশ্বের ক্রিকেটামোদীদের মধ্যে সাকিব আল হাসানের নাম জানে না, এমন লোক বিরল। বিশ্ব দাবাড়ু রানী হামিদ ও গলফার সিদ্দিকুর রহমানের কারণেও দেশের পরিচিতি ও সুনাম বেড়েছে। কিন্তু দেশের ক্রীড়ার অন্য ক্ষেত্রের অবস্থা শোচনীয়। প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ না থাকায় ও পর্যাপ্ত পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে এটা হয়েছে। তাই সারা দেশে প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ তৈরি করে নিয়মিতভাবে সব খেলার ব্যবস্থা করতে হবে। উপরন্তু দেশব্যাপী পাড়া-মহল্লায়, গ্রামে-গঞ্জে, ইউনিয়নে, উপজেলায়, জেলায়, বিভাগীয় পর্যায়ে ও জাতীয় পর্যায়ে নিয়মিতভাবে সব খেলার বার্ষিক প্রতিযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। সর্বোপরি ভালো কোচের মাধ্যমে সব খেলার উন্নতির ব্যবস্থা করতে হবে। সব ইভেন্টের জাতীয় দলকে দলীয়করণ ও রাজনীতিমুক্ত করে ক্রীড়ামোদীদের দিয়ে শক্তিশালী পরিচালনা পরিষদ গঠন করতে হবে। উপরন্তু প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে ক্রীড়া ক্ষেত্রে বরাদ্দ বৃদ্ধি ও তার পূর্ণ সদ্ব্যব্যবহার করতে হবে। ঘনঘন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক খেলার আয়োজন করতে হবে। উপরন্তু সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও প্রয়োজনীয় খেলার মাঠ থাকা এবং আন্তঃস্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়মিত বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা বাধ্যতামূলক করতে হবে। উল্লেখ্য যে, মাঠ ছাড়াও ইনডোরের বহু ধরনের খেলা রয়েছে। তন্মধ্যে যেসব খেলায় শারীরিক কসরত হয়, সেসব খেলায়ও যুব শিশু-কিশোরদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। বিলুপ্ত হওয়া দেশীয় খেলা পুনঃচালু করতে হবে। এসব হলেই অচিরেই দেশের ক্রীড়া জগতে নতুন দিগন্তের সূচনা ঘটবে। ক্রিকেটের ন্যায় বহু ইভেন্টে বিশ্বে দেশের অবস্থান শক্ত হবে। বছরে দু’একটি করে বিশ্ব তারকা সৃষ্টি হবে। শিশু-কিশোররা ইন্টারনেট আসক্ত ও অন্য অসামাজিক কর্ম থেকে সরে এসে খেলায় মনোনিবেশ করবে। সমগ্র জাতিও ক্রীড়ামোদী হয়ে উঠবে।স্মরণীয় যে, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রতিবছর নিয়মিত দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সম্প্রতি। কিন্তু প্রতিবছর জাতীয় ক্রীড়া অনুষ্ঠিত না হলে সেটা কীভাবে হবে? যা’হোক, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন বীররমনী সৈয়দা রত্না। এতে সামিল হয়েছিল তার শিশুপুত্রও। পুলিশ মা-ছেলেকে আটক করে থানায় রেখেছিল দীর্ঘ সময়। তার এই সাহসী পদক্ষেপের জন্য মাঠটি রক্ষা পেয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষ যদি অবিলম্বে সারা দেশের মাঠগুলো দখলমুক্ত করার ব্যবস্থা না করে, তাহলে সেটা করার জন্য তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষার আন্দোলনের মতো দল-মত নির্বিশেষে সকলের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এলাকা ভিত্তিকভাবে। তাহলে অচিরেই সারা দেশের সব মাঠ দখলমুক্ত হবে। দেশের ব্যাপক কল্যাণ হবে। সমগ্র দেশের এলাকাভিত্তিক কোন কোন মাঠ দখল রয়েছে, দখলদার কারা, নতুন মাঠের প্রয়োজন আছে কি-না ইত্যাদির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করতে পারলে দখলদাররা দুর্বল হয়ে পড়বে। আন্দোলন জোরদারে ব্যাপক সহায়ক হবে।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955@gmail.com

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন