কোভিড ১৯ নামক সংক্রামক রোগটি মোকাবিলা করে বিশ্ব নিঃশ্বাস নেবার আগেই নতুন এক আতংক “মাংকিপক্স” । বসন্ত বা পক্স গোত্রের এই ভাইরাস জনিত রোগটি সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্বের বেশ কয়েকটি মহাদেশে সনাক্ত হয়েছে। যদিও ভাইরাসটি উৎপত্তিস্থল এবং পাওয়া যায় মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার ঘনবর্ষন বনাঞ্চালে।
লক্ষণসমূহঃ জ্বর, চামড়ায় ফোসকা, লসিকা গ্রন্থির আকার বৃদ্ধি এই রোগের প্রধান লক্ষন। এছাড়াও দেহে সংক্রমন প্রতিহত করার ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে গেলে, কফ-কাশি, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যাথা, গায়ে ব্যাথা, দূর্বলতা, চোখে ঝাপসা দেখা ইত্যাদি। রোগটি জটিলআকার ধারণ করলে মৃত্যুহার ০ থেকে ১১% পর্যন্ত হতে পারে। আক্রান্ত হবার ২ থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ্য হতে পারে।
রোগ নির্ণয়ঃ আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছে এমন ব্যক্তি যদি উপরোক্ত লক্ষণ দেখা দেয় এবং চামড়ায় ফুসকুড়ি জমায় তাদের এই ফোসকার গোড়া থেকে রস নিয়ে অথবা ফোসকার শুকনো খোসা নিয়ে পিসিআর টেস্ট করে রোগটি সহজে নির্নয় করা যায়। স্থানীয়ভাবে এই ভাইরাসের পিসিআর ব্যবস্থা না থাকলে ঐ স্যাম্পলটি বিধিবদ্ধ নিয়মে সংরক্ষন করে উন্নতর ল্যাবরেটরিতে যেমন (ঢাকার আই সি ডি ডি আর) অথবা প্রয়োজনে আর্ন্তজাতিক ল্যাবে পাঠানো যেতে পারে। রক্ত পরীক্ষা করে এই ভাইরাসটি সহজে পাওয়া নাও যেতে পারে । সুযোগ থাকলে, চামড়ায় বায়ওপসি নিয়েও পরীক্ষা করা যায়।
প্রতিরোধঃ এই ভাইরাসজনিত রোগটি প্রতিরোধ করার প্রধান উপায় স্বাস্থবিধি মেনে চলা। সচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যশিক্ষা এজন্য একান্ত প্রয়োজন। জলবসন্তের ভ্যাক্সিন যারা পেয়েছেন অর্থাৎ যাদের বয়স ৫০ থেকে ৬০ এর উপরে তাদের এই রোগের তীব্যতা কম হতে পারে। তাই শিশু ও কম বয়সীদের এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য নতুন করে ভ্যাক্সিন প্রয়োগ প্রয়োজন হবে।
চিকিৎসাঃ এই রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় এন্টিভাইরাল ঔষধ “টেকোভিরিমেট” প্রয়োগ করা যেতে পারে। বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের উপসর্গ থাকলে তাদের কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা নিতে হবে। অসুস্থ বা মৃত প্রাণী বিশেষতঃ ইদুঁর জাতীয় এবং কিছু কিছু বানর জাতীয় প্রাণীর সংস্পর্শে আসলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। মাংস গ্রহনের সময় সম্পূর্ণ রান্না করা সিদ্ধ মাংস গ্রহণ করতে হবে।
উপসংহারঃ দূর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বুকে একটি দৃষ্টান্ত। কোভিড মোকাবেলায় আমাদেরসাফল্য সে কথাটিই প্রমাণ করে। মাংকিপক্সের মত যে কোন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি মোকাবেলায় সতর্কতা ও সচেতনতা সর্বাধিক কার্যকরী পদক্ষেপ। তাই সময় অপচয় না করে এখন থেকেই আমাদের রোগটি সম্পর্কে সচেতন হয়ে সকল করণীয় করতে হবে। তবে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রেও সফল হবে এ বিশ্বাস আমাদের সকলের আছে।
লেখক: অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ ও কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন