বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

সারা বাংলার খবর

ইবিতে ১০ বছরেও অনার্স শেষ হচ্ছে না

ইবি সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

১০ বছরেও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) অধীনে ফাজিল অনার্স (সম্মান) কোর্স শেষ হচ্ছে না। ৪ বছরের কোর্স হলেও সেশনজটে জর্জরিত হয়ে আছে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। এক শিক্ষাবর্ষের পরীক্ষা শেষ হতে দেড় থেকে দুই বছর সময় নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। এতে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে অতিরিক্ত মূল্যবান ৬টি বছরের অধিক সময় নষ্ট হয়ে গেছে। ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৭ মাস পরেও এখনো রেজাল্ট দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন। জানা যায়, ফাজিল স্নাতক সম্মান ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ৪র্থ বর্ষ-২০১৭ ও ১৮ সালের চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্ন হলেও পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৭ মাসের মধ্যে রেজাল্ট দিতে পারেনি। চাকরির বয়স শেষ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু চাকরিতে আবেদন করতে পারছেনা এমন বিভিন্ন অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ফাজিল অনার্সের (সম্মান) মান চালু হয়। তখন থেকে ইবির অধীনে সারাদেশের ৩১টি মাদরাসায় শিক্ষার্থীরা ফাজিল অনার্স (সম্মান) কোর্সে ভর্তি হন। ৪ বছর মেয়াদি এই কোর্সের ৪ হাজার ১ শ’ মার্কের উপর পরীক্ষা দেন তারা। তবে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ৩১টি মাদরাসার সবগুলোতে ৫টি সাবজেক্ট দেওয়া হয়নি। কিছু মাদরাসায় দুই একটি করে সাবজেক্ট দেওয়া হয়েছে। আবার যে সব মাদরাসায় সব সাবজেক্ট দেওয়া হয়েছে সেখানে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক। ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শুরু করে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত মোট ৫টি বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে তিনটি বর্ষ চূড়ান্ত পরীক্ষা ও রেজাল্ট সম্পন্ন করতে পেরেছে। বাকি দুটি শিক্ষাবর্ষ ২০১৩-১৪ ও ২০১৪-১৫ চূড়ান্ত বর্ষের পরীক্ষা ৯ বছরে সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘদিন ধরে পরীক্ষা নেবার আশ্বাস দিয়ে বহু ভোগান্তির মধ্য দিয়ে পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। তবে রেজাল্ট দেওয়া নিয়ে বার বার সময়ের নামে কালক্ষেপণ করেই চলেছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এভাবে চলতে থাকলে মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বড় ধরণের সেশনজটে আটকে থাকবে।

তা›মীরুল মিল্লাত মাদরাসার ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের আল-কোরআন বিভাগের শিক্ষার্থী ইব্রাহিম বলেন, ‘চার বছরের অনার্স নয় বছর লাগিয়ে পরীক্ষা নিয়েছে। এদিকে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৭ মাস পরেও রেজাল্ট দিতে পারলো না বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯০ কার্যদিবসের মধ্যে রেজাল্ট দেওয়ার নিয়ম সেখানে ২১০ দিনের বেশি অতিক্রম হয়ে গেছে তবুও রেজাল্ট পাচ্ছিনা। দীর্ঘ ৯ বছর পর অনেক কষ্টে অনার্স ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা শেষ করেছি। রেজাল্ট না পাওয়ার কারনে মাস্টাসে ভর্তি হতে পারছি না এমনকি চাকরিতেও আবেদন করতে পারছিনা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘এই সমস্যার জন্য দায়ী ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কারণ আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চলমান অনার্সে সময়মত পরীক্ষা হচ্ছে, দ্রুত রেজাল্ট হচ্ছে এবং তারা সেশনজটমুক্ত। তাছাড়া আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের থেকে টাকার পরিমানও বেশি নেয়। অথচ তারা সঠিক সময়ে পরীক্ষা ও রেজাল্ট দিতে পারে না। এমনকি পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৬ মাস পরে ভাইভা নিয়ে থাকে যেটা সম্পূর্ণ অনিয়ম।

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি বার বার (মিনি এস আর) অর্থাৎ যারা আমাদের এই রেজাল্ট নিয়ে কাজ করছে তাদের কে তাগিদ দিচ্ছি। কিন্তু তারা মূলত মাদ্রাসা বোর্ডে কাজ করেন আর এই রেজাল্ট তৈরির কাজটা তাদের কাছে অপশনাল। যার জন্য তারা গড়িমসি করছে। এছাড়াও আর্থিক লেনদেনের একটা বিষয় আছে যেটা সাবেক ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল হাকিম সরকারের সময় চুক্তি হয়েছিলো। আর্থিক বিষয়টা নিয়েও একটু সমন্বয়হীনতার দেখা দিয়েছে। তাই এবিষয়ে আমি ভিসি ড. আব্দুস সালামকে অবহিত করেছি। তিনি বিষয়টা জোরালোভাবে দেখবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. মাহবুবুর রহমান বলেন, এবিষয় আমার কিছু জানা নেই, তবে এবিষয়ে দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।

ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুস সালাম বলেন, ‘এটা একটা পাবলিক পরীক্ষার রেজাল্ট এটা নিয়ে তারা কেনো এমনটা করছেন আমি বুঝছিনা। আমি এবিষয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলেছি। আমাদের যারা এই ফাজিল অনার্স ( সম্মান) রেজাল্টের কাজ করেন তাদেরকে একটা লিগ্যাল নোটিশ দিব এবং তাদের কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময় নিব তারা যদি এর সুষ্ঠু সমাধান না দেন তাহলে আমি আইনের সহায়তা নিয়ে কোর্টের মাধ্যমে মামলা করবো। যাতে শিক্ষার্থীরা রেজাল্ট দ্রুত পায়।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন