সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

ধানের দাম কম বিপাকে কৃষক

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৩০ মে, ২০২২, ১২:০১ এএম

বোরো ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়লেও কৃষক ধানের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। বোরো ধান আবাদ করে চাষিরা বিপাকে পড়েছেন। একমণ ধান বিক্রি করে কৃষক উৎপাদন খরচও পাচ্ছেন না। বর্তমানে একমণ ধান বিক্রি করে একজন ধান কাটার শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে। অথচ জমি চাষ, রোপন করা, নিড়ানি দেওয়া, জমিতে পানি দেওয়া, সার ও কিটনাশক ব্যাহার করে এক মণ ধান উৎপাদন করতে ১১শ টাকার বেশি খরচ হচ্ছে। তার সাথে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের খরচ যোগ করলে উৎপাদন খরচ ১২শ থেকে সাড়ে ১২শ টাকায় দাঁড়ায়। অথচ বর্তমানে একজন চাষি একমণ ধান এক হাজার থেকে ১১শ টাকায় বিক্রি করছেন। এতে প্রতি মণে তার এক থেকে দেড়শ টাকা লোকসান হচ্ছে। এ অবস্থায় ধান চাষিরা চরম হতাশায় ভুগছেন। বিশেষ করে দেশের হাওরাঞ্চলের চাষিদের সারা বছর চলে এই বোরো ফসলকে কেন্দ্র করে। বোরো ধানের ওপরই হাওরবাসীর একমাত্র ভরসা।

বাংলাদেশে উৎপাদিত চালের শতকরা প্রায় ৬০ ভাগ আসে বোরো মৌসুমে উৎপাদিত ধান থেকে। আর উৎপাদিত বোরো ধানের শতকরা ২২ ভাগ পাওয়া যায় হাওর অঞ্চল থেকে। যে বছর হাওর অঞ্চলে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়, কৃষক নির্বিঘ্নে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেন, সে বছর চালের দাম ভোক্তাদের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকে। নিশ্চিত হয় দেশের খাদ্য নিরাপত্তা।
তবে এবছর ভারতীয় ঢলে আগাম বন্যা ও অতি বৃষ্টির কারণে হাওরের কৃষক কষ্টের ধান ঘরে তুলতে পারেননি। বন্যায় হাওরের শত শত একর জমির ধান বন্যার পানিতে পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হাওর এলাকার চাষিরা এমনিতেই দুশ্চিন্তায় আছেন। তার উপর ধানের ন্যায্য দাম না পেয়ে তারা আরও হতাশায় ভেঙে পড়ছেন।

নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানার গাগলাজুর গ্রামের কৃষক মোখলেছুর রহমান গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের আয়ের প্রধান উৎস বোরো ধান। ধান কাটা-মাড়াই শেষে বিক্রি উপযোগি করতে মণ প্রতি ১২ থেকে ১৩শ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ এখন বাজারে ধান বিক্রি করতে হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১১টাকা মণ দরে। সরকার প্রতিমণ ধানের দাম নির্ধারণ করেছে ১০৮০ টাকা। ব্যাপারিরা এ দামের চেয়ে কম দামে ধান কিনতে চায়। তাই সরকারের উচিত ধানের দামের বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে বিবেচনা করা। তা না হলে এ অঞ্চলের কৃষকরা ঋণে জরজরিত হয়ে পড়বেন। অনেকেরই সংসার চালানো কষ্টকর হয়ে পড়বে।

ওই এলাকার ধানের ব্যাপারি তরিকুল ইসলাম বলেন, সরকার ধানের দাম ১০৮০ টাকা মণ নির্ধারণ করেছে। এ অবস্থায় মিলাররা এর চেয়ে বেশি দামে ধান কিনতে চায় না। সিজনের শুরুতে মিলাররা সাড়ে ৬শ থেকে ৭শ টাকা মণ দরে ধান কিনে মজুদ করেছে। এখন তারা সরকারি দামের চেয়ে বেশি দামে কিনতে চায় না। তাই আমাদেরও কৃষকদের কাছ থেকে এ দামেই কিনতে হচ্ছে। সরকার যদি ধানের দাম বাড়ায় তাহলে হয়তো কৃষকরা আরও ভাল দাম পাবে।

উত্তরের জনপদ গাইবান্ধায়ও ব্যাপক ধান চাষ হয়। তবে এবছর বোরো ধান চাষ করে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। এক মণ ধান বিক্রি করে উৎপাদন খরচও উঠছে না তাদের। এ জেলায় বোরো মৌসুমের ধান কাটা-মাড়াই শেষ পর্যায়ে। ব্যস্ততা দেখে মনে হবে ধানচাষিদের সুদিন এসছে। কিন্তু চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাদের হতাশার কথা।

গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সোনাইডাঙ্গা গ্রামের চাষি জয়নাল বলেন, ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছি। অনেক আশা ছিল ফলন ভালো হবে। কিন্তু আশার আলোয় প্রথমে আঘাত হানে শিলাবৃষ্টি। কিছুদিন পরে দেখা দেয় পোকার আক্রমণ। এরপর ধানের শীষ সাদা হতে শুরু হয়। সার পানি কীটনাশকসহ সব খরচ শেষে যখন ধান ঘরে তুলতে হবে ঠিক সেই সময় দেখা দিলো শ্রমিক সংকট। বেশি টাকায় শ্রমিক নিয়ে ধান কাটার পরে দেখা গেলো উৎপাদন খরচ উঠছে না। তিনি অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় মিলারা সিন্ডিকেট করে ধানের দাম কমিয়ে দিয়েছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন