প্লাস্টিকপণ্য হালকা-পাতলা, বহনযোগ্য, টেকসই ও সস্তা। তাই প্লাস্টিকপণ্যের ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বাড়ছে বিশ্বব্যাপী। গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত স্টকহোম রেসিলিয়েন্স সেন্টারের রিপোর্ট মতে, বর্তমানে বিশ্বে প্লাস্টিকপণ্য পুনর্ব্যবহৃত হচ্ছে ১০ শতাংশেরও কম। অথচ, প্লাস্টিকের উৎপাদন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬.৭০ কোটি টন, যা বর্তমানে সব জীবের ওজনের তুলনায় চার গুণ বেশি। প্লাস্টিকে সমুদ্রও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। গত ১ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার’র প্রতিবেদন মতে, সাগরের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে প্লাস্টিক, যা প্রথমে সামুদ্রিক প্রাণীদের দেহে এবং সেখান থেকে মানুষসহ অন্য প্রাণীদের দেহেও ঢুকে পড়ছে। পরিস্থিতি এত ভয়াবহ যে, আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরে ভাসমান প্লাস্টিকে তৈরি হয়েছে অতিকায় ‘প্লাস্টিকের দ্বীপ’। প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে না নিলে ২০৪০ সালের মধ্যে সাগরে প্লাস্টিকবর্জ্যের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। প্লাস্টিক পর্বতেও দূষণ ঘটাচ্ছে। যার অন্যতম হিমালয় পর্বত। সেখানে প্লাস্টিকপণ্যে ভরপুর হচ্ছে। পর্বত আরোহীদের ব্যবহৃত প্লাস্টিকপণ্য সরিয়ে না ফেলায় এটা হচ্ছে!
প্লাস্টিকপণ্যের ব্যবহার ও রফতানির পরিমাণ বাংলাদেশেও বাড়ছে। দেশের সর্বত্রই প্লাস্টিকপণ্যের কারখানা তৈরি হয়েছে ও হচ্ছে। তাতে রঙ-বেরঙের নানা বৈচিত্র্যের পণ্য তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এই প্লাস্টিকপণ্যের কারণে প্রকৃতি, প্রাণী ও মানুষের সর্বনাশ ঘটছে। বিশেষ করে, নন-রিসাইক্লিং প্লাস্টিকপণ্যে। কারণ, এই প্লাস্টিক সহজে পচে না, থেকে যায় দীর্ঘকাল। তাই পরিত্যক্ত এই পণ্যের অধিকাংশই মাটিতে মিশে মাটির উর্বরা শক্তি নষ্ট করছে। এছাড়া, নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর, ড্রেন ও নদীতে পড়ে সেগুলো মজে যাচ্ছে। তবুও প্লাস্টিকের ব্যবহার বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের মতে, পলিথিনসহ দেশে বছরে ১০.৯৫ লাখ টন প্লাস্টিকবর্জ্য উৎপাদিত হয়। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন-২০২০ মতে, প্লাস্টিকদূষণের দিক থেকে গঙ্গা, পদ্মা, যমুনা বিশ্বের দ্বিতীয় দূষিত অববাহিকা। এছাড়া, সার্বিকভাবে পরিবেশদূষণের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এসব ক্ষেত্রে নন-রিসাইক্লিং প্লাস্টিক ও পলিথিন অনেকটা দায়ী। উপরন্তু পানিতে থাকা প্লাস্টিক কণা মাছসহ প্রাণীকূলের পেটে যাচ্ছে, যা খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকছে। উপরন্তু বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যের সাথেও প্লাস্টিকের কণা মানুষের শরীরে ঢুকছে। এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের সাম্প্রতিক কিছু গবেষণার ফল স্মরণযোগ্য। নেদারল্যান্ডসের বিজ্ঞানীরা মানুষের রক্তে মাইক্রো প্লাস্টিকদূষণ শনাক্ত করেছেন, যা বিশ্বে প্রথম। গবেষণাটিতে বিজ্ঞানীরা ২২ জন অজ্ঞাত রক্তদাতার নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। তাদের মধ্যে ১৭ জনের শরীরে প্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। অর্ধেক নমুনায় পিইটি প্লাস্টিক পাওয়া গেছে, যা সাধারণত পানীয়ের বোতলে ব্যবহৃত হয়। এক-তৃতীয়াংশের নমুনায় পলিস্টাইরিন পাওয়া গেছে, যা খাবার ও অন্যান্য পণ্য প্যাকেজ করার জন্য ব্যবহৃত হয়। এছাড়া এক চতুর্থাংশ রক্তের নমুনায় পলিথিন শনাক্ত হয়েছে। এর আগে গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মলে মাইক্রো প্লাস্টিকের পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেশি। যেসব শিশুর প্লাস্টিকের বোতলে খাওয়ানো হয় তাদের দেহে প্রতিদিনই কয়েক লাখ মাইক্রো প্লাস্টিক কণা প্রবেশ করে। গবেষণাটি পরিচালনায় অর্থায়ন করেছে ডাচ ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কমন সিস। এটি একটি সামাজিক উদ্যোগ, যা প্লাস্টিকদূষণ কমাতে কাজ করছে। এটি এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, নোয়াখালী উপকূলে ভাসমান ক্ষুদ্র প্রাণী বা জুপ্লাংকটনে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। জুপ্লাংকটন বিভিন্ন রকম মাইক্রো প্লাস্টিককে খাদ্য কণা ভেবে গ্রহণ করে, যা পরবর্তী সময়ে খাদ্যচক্রের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। মাইক্রো প্লাস্টিক মানবদেহে রক্তে বিষাক্ততা তৈরি করে অভ্যন্তরীণ টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে বলে গত ৯ মে খবরে প্রকাশ। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পরিবেশ বিজ্ঞানী গবেষণা করে জানিয়েছেন, প্রতি কেজি সামুদ্রিক লবণে গড়ে ২,৬৭৬টি আণুবীক্ষণিক প্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এই হিসেবে দেশের একজন মানুষ প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৩ হাজার মাইক্রো প্লাস্টিক গ্রহণ করে। এসব মাইক্রো প্লাস্টিক জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এটি ‘এনভায়রনমেন্টাল অ্যাডভান্সেস’-এ প্রকাশিত হয়েছে। জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক এক প্রতিবেদন মতে, কৃষিখাতে ব্যবহার হওয়া কীটনাশক, প্লাস্টিক ও ই-বর্জ্যের কারণে বিশ্বে প্রতিবছর প্রায় ৯০ লাখ মানুষের অকাল মৃত্যু হয়। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বাংলাদেশের বাজারের বিভিন্ন নামী প্রতিষ্ঠানের প্যাকেটজাত ও খোলা বাজারে বিক্রি হওয়া সাদা চিনির প্রতি কেজিতে ৩৪৪টি মাইক্রো প্লাস্টিক পেয়েছেন। ফলে শুধু চিনিতেই বছরে ১০.২ টন মাইক্রো প্লাস্টিকের কণা বাংলাদেশের মানুষের দেহে প্রবেশ করছে। গবেষণা দলের প্রধান ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমদানি, প্যাকেজিং ও প্রসেসিংয়ের সময় এটা যুক্ত হতে পারে। এই গবেষণাটি প্রকাশের জন্য ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ৫টি নামীদামী ব্র্যান্ডের কোম্পানির টি-ব্যাগ নিয়ে গবেষণা করে সবগুলোতেই উল্লেখযোগ্য হারে মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা, উচ্চ শতাংশে মাইক্রোপ্লাস্টিক টুকরা, আঁশ ও বিপুল পরিমাণ লাল, নীল, বাদামি রঙের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট’-এ এটি প্রকাশিত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণায় ১৫ প্রজাতির দেশি মাছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা পাওয়া গেছে, যা দৈনন্দিন ব্যবহৃত প্লাস্টিকের বোতল, জুস, শ্যাম্পু বোতল, প্লাস্টিকের ব্যাগ, কনটেইনার, প্লাস্টিক ও ফোমের জুতা এবং মোড়ক ইত্যাদি থেকে পরিবেশে প্রবেশ করে। গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক শফি মুহাম্মদ তারেক বলেন, প্লাস্টিকে যেসব রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয়, সেটা মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল ইনভায়রনমেন্ট’-এ প্রকাশিত হয়েছে। স্পেনের বার্সেলোনায় বোতলজাত পানির ব্যবহারের উপর গবেষণা করে বার্সেলোনা ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথ জানিয়েছে, কলের পানির চেয়ে বোতল জাত পানি পরিবেশের জন্য ৩.৫ হাজার গুণ বেশি ক্ষতিকর। এটি ‘সায়েন্স ডাইরেক্ট’-এ প্রকাশিত হয়েছে।
অপরদিকে, দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন মানুষের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হয়েছে। এতে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। যেমন: নদী, খাল, বিল, হাওর, ড্রেন মজে যাচ্ছে। খবরে প্রকাশ, বুড়িগঙ্গা নদীর তলদেশে প্রায় ৮ ফুট পলিথিনের স্তর জমেছে। এরূপ অবস্থা কম-বেশি প্রায় সব নদী ও খাল-বিলেই হয়েছে। তাই পানি ধারণের ক্ষমতা কমে গেছে। উপরন্তু পুনঃখননের খুবই অসুবিধা হচ্ছে। ড্রেনগুলোও মজে গেছে। ফলে পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়ে পানিজট সৃষ্টি হচ্ছে শহরাঞ্চলে। মাটিরও উর্বরা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। জীববৈচিত্র্যও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সাগরও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পলিথিন ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার আমাদের পরিবেশকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। এটা একধরনের আত্মহত্যার শামিল। তাই এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। উচ্চ আদালতের এক রায়ে বলা হয়েছে, সব হোটেল-মোটেলে পলিথিন ও একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বন্ধ করতে হবে। এ ছাড়া পলিথিন উৎপাদন ও বিপণনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তারপরও অবাধে চলছে পলিথিন ও প্লাস্টিকের ব্যবহার। এতে ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য। এসডোর মতে, প্রতি বছর ৮৭ হাজার টন একবার ব্যবহারযোগ্য পলিথিন ও প্লাস্টিক বাংলাদেশে ব্যবহৃত হয়। পবার সাম্প্রতিক প্রতিবেদন মতে, সারাদেশে অবৈধ পলিথিন তৈরির কারখানা রয়েছে কমপক্ষে ১৫০০। এর মধ্যে পুরান ঢাকা ও বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে রয়েছে কমপক্ষে ৭ শতাধিক। তবুও পরিবেশ অধিদফতর নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ও নন-রিসাইক্লিং প্লাস্টিক বন্ধ করার বিষয়ে নীরব রয়েছে। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশও কার্যকর হচ্ছে না! স্মরণীয় যে, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-২০০২-এ পলিথিনের উৎপাদন ও বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। উপরন্তু এ আইনে পলিথিন উৎপাদন ও বিপণনের দায়ে জেল ও জরিমানার কথা বলা হয়েছে। আইনটি জারির পরপরই পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহারের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তৎকালীন পরিবেশমন্ত্রী মরহুম শাহজাহান সিরাজ। ফলে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার ব্যাপক হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তনের পর এ ব্যাপারে শৈথিল্য দেখা দেয়। ফলে পলিথিনের উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়তে বাড়তে এখন অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে।
যেহেতু অপচনশীল নন-রিসাইক্লিং প্লাস্টিক ও পলিথিন মানুষ, প্রাণীকূল ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে, তাই এগুলোর উৎপাদন, বাজারজাত ও ব্যবহার বন্ধ করা অপরিহার্য। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কঠোর পন্থা অবলম্বন করা ছাড়া হবে না। তাই পরিবেশ অধিদপ্তরের সকলকে সততা ও কঠোরতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এতে যার দায়িত্বে অবহেলা, গাফিলতি, স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ইত্যাদি পরিলক্ষিত হবে, তাকে সাথে সাথে কঠোর শাস্তি দিতে হবে। অর্থাৎ সর্ষের ভূত তাড়াতে হবে আগে। অতঃপর আইন অমান্য করে যারা নন-রিসাইক্লিং প্লাস্টিক ও নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যবহার করবে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। মানুষকে বুঝাতে হবে যে, এসব পণ্য নিজের ও অন্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। তথা সাময়িক লাভের চেয়ে দীর্ঘকালীন ক্ষতির পরিমাণ বেশি। তাই নিজেকে ও অন্যকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করার জন্য ঐসব পণ্য ব্যবহার বন্ধ করে পরিবেশবান্ধব পণ্য ব্যবহার করতে হবে। এ ব্যাপারে সামাজিক আন্দোলনও গড়ে তোলা দরকার। অন্যদিকে, যেসব প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য, সেসব ব্যবহারের পর যত্রতত্র ফেলে না দিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে সংরক্ষণ করতে হবে এবং তা সংগ্রহ করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্য তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে নতুনত্ব এনেছেন কেনিয়ার প্রকৌশলী নেজামবি মাটে। তিনি ব্যবহৃত প্লাস্টিক থেকে ইট তৈরি করেছেন। প্রতিদিন তাঁর নিজের প্রতিষ্ঠান ‘জেঙ্গে মেকারস’ দেড় হাজার ইট তৈরি করছে, যা আপাতত সড়কের পাশে, ড্রাইভওয়েতে ও ফুটপাতে ব্যবহার করা হচ্ছে। শিগগিরই বাড়ি তৈরিতেও এই ইট ব্যবহার হতে দেখা যাবে। মাটের প্রক্রিয়ায় প্রথমে পুরনো প্লাস্টিককে টুকরা করে বালির সঙ্গে মেশানো হয়। এরপর উচ্চতাপে গলিয়ে বিভিন্ন আকারের ছাঁচে ফেলা হয়। প্লাস্টিক থেকে তৈরি ওই ইট কংক্রিটের তুলনায় দুই থেকে সাত গুণ বেশি শক্ত, ওজনে অর্ধেক ও দামে প্রায় ১৫% সস্তা। অন্যদিকে, নন-রিসাইক্লিং প্লাস্টিককে কীভাবে রিসাইক্লিং করে পুনর্ব্যবহার করা যায়, অথবা ধ্বংস করা যায়, তা উদ্ভাবন করে ব্যবহার করতে হবে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই কিছু পন্থা আবিষ্কার হয়েছে। যেমন: ওশান ওয়ার্কস সমুদ্র থেকে প্লাস্টিকপণ্যকে চিপোলো অ্যাপসের মাধ্যমে খুঁজে বের করে সংগ্রহ করছে এবং সেগুলোকে প্লাস্টিকের পাথর তৈরি মেশিনের সাহায্যে পুনর্ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছে। জুতা প্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাডিডাস সমুদ্রের বর্জ্য প্লাস্টিক দিয়ে জুতা তৈরি করছে। ফিশার অটোমোটিভ কোম্পানি সমুদ্রের বর্জ্য প্লাস্টিক ও পরিত্যক্ত মাছ ধরার জালের দড়ি থেকে উৎপাদিত কার্পেট এখন তাদের নতুন গাড়ি ওশান এসইউভিতে ব্যবহার করবে। বায়োহম বায়ো-ম্যানুফ্যাকচারিং ফার্মের প্রধান বায়োটেক প্রকৌশলী সামান্থা জেংকিন্স আবিষ্কার করেছেন প্লাস্টিক খেকো ফাঙ্গাস, যা প্লাস্টিকে দেওয়ার সাথে সাথে খেয়ে ফেলবে। তার পর ফাঙ্গাস জন্ম দেবে আরো ফাঙ্গাসের, যা দিয়ে নানা রকমের বায়ো-মেটেরিয়াল তৈরি হবে। দেশে এসব ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে অচিরেই। তাহলে নন-রিসাইক্লিং প্লাস্টিক কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। পরিত্যক্ত হওয়ার সাথে সাথে উক্ত ফাঙ্গাস দিয়ে ধ্বংস করা যাবে। একই ব্যবস্থা করতে হবে সারা বিশ্বেই। নতুবা আন্তর্জাতিক নদী এবং সাগর-মহাসাগর রক্ষা পাবে না প্লাস্টিক দূষণ থেকে। যার প্রভাব পড়বে প্লাস্টিকমুক্ত দেশেও। তাই বিশ্বব্যাপী একযোগে প্লাস্টিক রোধ করতে হবে। নতুবা শতভাগ সুফল পাওয়া যাবে না। ২৭ মে অনুষ্ঠিত জি-৭ এর বৈঠকে প্লাস্টিকদূষণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অঙ্গীকার করা হয়েছে। এভাবে বিশ্বের বাকী সব দেশকেই উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই বিশ্ব প্লাস্টিকদূষণমুক্ত হবে এবং পরিবেশের উন্নতি হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
sardarsiraj1955@gmail.com
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন