মানব দেহের জন্য অতি প্রয়োজনীয় আমিষ এবং ভিটামিন-এ সহ শর্করা যোগানদানকারী সর্ববৃহৎ প্রাচীনতম ফল ‘কাঁঠাল’-এর উৎপাদন প্রায় ১২ লাখ টন হলেও ‘বারি’ উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাত-এর আবাদ হলে তা ২০ লখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। কিন্তু ‘বারী’ উদ্বাবিত উচ্চ ফলনশীল কাঠাল বীজ ও চাড়া আবাদকারীদের কাছে পৌছাতে ‘কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’ খুব বেশী তৎপর নয়। বরিশালের রহমতপুর ও পটুয়াখালীর লোহালিয়া এবং মাদারীপুরের মোস্তফাপুরে ডিএই’র হর্টিকালচার নার্সারি থেকে সীমিত কিছু কাঠাল চাড়া বিক্রী হলেও মাঠ পর্যায়ের কৃষক সহ বাগানকারীদের কাছে সে খবর খুব জানা নেই।
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, এত বেশী পুষ্টি উপাদান-এর যোগান আর কোন ফল-এ পাওয়া যায়না। কাঁঠাল শুধু পাকা ফল হিসেবেই নয়, কাঁচা অবস্থায় তরকারী হিসেবেও খাওয়া যায়। এমনকি আমাদের জাতীয় ফল কাঠাল-এর বীজ থেকে ময়দাও তৈরী সম্ভব। দামের দিক বিবেচনা করলে এটি এখনো অত্যন্ত সুলভ একটি ফল। তবে উৎপাদকের কাছ থেকে তিন হাত ঘুরে ভোক্তার কাছে পৌছতে এফলের দামও কয়কগুন বাড়ে।
বাংলাদেশে উৎপাদিত কাঁঠালকে শাঁসের বুনট অনুযায়ী কৃষি বিজ্ঞানীগন তিনভাগে ভাগ করেছেন। যেমনÑ খাজা, আদরসা বা দুরসা এবং গালা। অনাদিকাল থেকে বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্র এবং পার্শ্ববর্তী ভারতের বেশ কিছু স্থানে কাঁঠাল-এর আবাদ ও উৎপাদন হয়ে আসছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে কাঁঠাল অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল। প্রচুর ভিটামিন, শর্করা ও আমিষ সমৃদ্ধ এ ফল স্বাস্থ্যের জন্য যথেষ্ঠ উপকারী।
‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’র বিজ্ঞানীগন ইতোমধ্যে উচ্চ ফলণশীল ও সুমিষ্ট দুটি কাঁঠালের জাত উদ্ভাবন করেছে। ‘বারি কাঁঠালÑ১’ ও ‘বারি কাঁঠাল-২’ নামের এসব কাঁঠালে মিষ্টি বা ব্রিক্সমান ২১-২২%। ফলের ওজন ৭ কেজি থেকে সাড়ে ৯ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এসব সুস্থ গাছে ৪শ কেজি থেকে ১২শ কেজি পর্যন্ত কাঁঠাল ধরে। বারি কাঁঠালÑ১ ও বারি কাঁঠালÑ২ দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের সর্বত্রই আবাদযোগ্য বলে বারি’র বিজ্ঞানীগন জানিয়েছেন। তবে অপেক্ষাকৃত উচু স্থানে কাঁঠালের নিরাপদ উৎপাদন ভাল বলে মনে করছেন কৃষিবিদগন। এসব উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত জাতের কাঁঠালের ফলন হেক্টরপ্রতি ৩৫Ñ৫৮টন বলে জানা গেছে। হলুদ বর্ণের সুগন্ধযুক্ত রসালো, নরম ও দুরসা প্রকৃতির এসব ফলের গাছ প্রতি ফলন ৫৫টি থেকে ১২৫টি পর্যন্ত। ১০ থেকে বার মাসের চারা বীজতলা থেকে সতর্কতার সাথে উত্তোলন করে এবং ফাটল কলম, চারা কলম ও টিস্যু কালচার পদ্ধতিতেও গাছ বপন করে নিয়মিত পরিচর্যার মাধ্যমে ৫Ñ৭ বছরের মধ্যেই কাঠালের ভাল ফল লাভ সম্ভব।
চলতি মৌশুমেও দক্ষিনাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্নস্থানে প্রচুর কাঁঠাল উৎপন্ন হয়েছে। অপেক্ষাকৃত উচুস্থানে নিয়মিত সার ও সেচ প্রদান সহ পরিচর্যা করতে পারলে কাঁঠালের অত্যন্ত ভাল ফলন সম্ভব। বারি’র বিজ্ঞানীদের মতে ১ মিটার গভীর এবং এক মিটার করে দৈর্ঘ ও প্রস্থের গর্ত করে ২৫Ñ৩০কেজি কম্পোষ্ট সার, ৪শ থেকে ৫শ গ্রাম টিএসপি এবং ২৪০Ñ২৬০ গ্রাম এমওপি সার মিসিয়ে গর্ত বুজিয়ে ১৫ দিন পরে মাঝখানে চারা রোপন করে চারদিকের মাটি ভালভাবে বসিয়ে চেপে দিয়ে খুটি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে। প্রতিবছর নির্ধারিত ও পরিমিত সার প্রয়োগ ছাড়াও ডিসেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত পনের দিন অন্তর গাছের গোড়ায় তৈরি বেসিনে সেচ প্রদান করলে কাঁঠাল গাছের সুস্বাস্থ্য সহ ভাল ফলন মেলে বলে বিজ্ঞানীগন জানিয়েছেন।
অনাদীকাল থেকে দক্ষিণাঞ্চল সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার গ্রামেগঞ্জের মানুষের কাছে কাঁঠাল একটি আদর্শ ফল ছাড়াও তাদের উপার্জনের অন্যতম উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। এবছরো দক্ষিণাঞ্চল যুড়ে কঁঠালের ভাল ফলন হয়েছে। গৃহস্থরা ভাল দাম পাবার ব্যাপারে আশায় বুক বেঁধে আছেন। তবে ইতোমধ্যে বাজারে যে কিছু কাঠাল উঠেছে তা আকার ভেদে ১শ থেকে ৪শ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে।
বরিশালÑফরিদপুর মহাসড়কের পুকুরিয়া থেকে বিশ্ব জাকের মঞ্জিল হয়ে সদরপুর এবং মালিগ্রাম ও তালমা মোড় পর্যন্ত রাস্তার দুধারে শত শত গাছে হাজার হাজার কাঁঠাল দেখে প্রতিদিন কৌতূহলী মানুষের চোখ জুড়াচ্ছে।
ঢাকার সাভার, টাংগাইল, গাজীপুর এবং যশোর ছাড়াও উত্তরবঙ্গের নাটোর সহ কয়েকটি এলাকা থেকেও কাঁঠাল আসতে শুরু করেছে দক্ষিণাঞ্চলের ফলের মোকামগুলোতে। দক্ষিণাঞ্চলে এখনো পরিপূর্ণ বানিজ্যিক ভিত্তিতে কাঁঠালের আবাদ হচ্ছে না। এমনকি এ অঞ্চলে ‘কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’ ‘বারি’ উদ্ভাবিত উন্নতজাতের কাঁঠাল চাড়া মাঠ পর্যায়ে সরবরাহে খুব বেশী তৎপরতাও লক্ষ্যণীয় নয়। তবে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, ‘আমরা চেষ্টা করছি যতটা সম্ভব আবাদকারীদের কাছে উন্নমানের চাড়া পৌছে দিতে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন