২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে সারা দেশে কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ৩ হাজার ৮১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে শুধু অগ্নিকাÐে নিহত হয়েছে ৩৭৩ জন শ্রমিক। গত সোমবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করা হয়।
তাজরিন অগ্নিকাÐের ৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‘ধগ্নিকাÐসহ কর্মক্ষেত্র দুর্ঘটনায় নিহতদের সম্পর্কে সংবাদপত্রভিত্তিক জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। সেফটি অ্যান্ড রাইটস সোসাইটি এবং বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (বøাস্ট) যৌথভাবে এ সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩ হাজার ৮১ জন শ্রমিকের মধ্যে এ বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ২২৬টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ৩৪১ জন শ্রমিক। এর মধ্যে শুধু অগ্নিকাÐে নিহত হয়েছে ৬২ জন। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদুল ইসলাম খান বলেন, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রমিকরা তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শ্রম আইনে শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের কথা বলা হলেও খুব কম মালিকই এ ব্যবস্থা করে থাকেন। তাজরিন ও রানা প্লাজাসহ বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার অপরাধীদের শাস্তির ব্যাপারে তিনি বলেন, ক্ষতিপূরণ আইন সংশোধন করতে হবে; প্রয়োজনে ক্ষতিপূরণের জন্য ভিন্ন আইন প্রণয়ন করতে হবে।
২০১৩ সালের সংশোধিত শ্রম আইনের দুর্বলতা প্রসঙ্গে বøাস্টের উপ-পরিচালক অ্যাড. মো. বরকত আলী বলেন, শ্রম আইনে ক্ষতি পূরণের বিষয়ে যথাযথ গুরুত্ব দেয়া হয়নি। এতে সুনির্দিষ্ট কোনো মাপকাঠিও নির্ধারণ করা হয়নি। তিনি বলেন, অবসর গ্রহণ করা পর্যন্ত আয়, অবসর গ্রহণকালে আইনানুগ পাওনাদি, তাদের পোষ্যদের জীবন-জীবিকার জন্য অনুমিত খরচসহ বিভন্ন বিষয়ের বিবেচনা করে ক্ষতিপূরণ নির্ধারণ করতে হবে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলোÑ গার্মেন্টসের মতো প্রতিটি সেক্টরে নিরাপত্তা কার্যক্রম বর্ধিত করতে হবে; রাজউক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরসহ আইন বাস্তবায়নকারী অন্যান্য সব সংস্থার দক্ষতা ও যোগ্যতা বৃদ্ধি এবং যথাযথ জবাবদিহিতা নিশ্চত করা; শ্রম ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত আইন ও নীতিমালার প্রতি অবহেলা ও লঙ্ঘনকারীর জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা; আইন বাস্তবায়ন সংস্থার স্বেচ্ছাচারিতা ও অবহেলাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা; চলমান শ্রম আইনে ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিধান সংশোধন করে কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় আহত-নিহতের ক্ষেত্রে সর্বজন গৃহীত একটি মানদÐ নির্ধারণ করা; আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ চিকিৎসা খরচ, পুনর্বাসন এবং পুনঃএকত্রীকরণ অন্তর্ভুক্ত করা এবং নিহতদের ক্ষেতে তার পরিবারের অন্তত একজনের পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা; দুর্ঘটনা রোধে কলকারখানার ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড মানা।
এসআরএসের নির্বাহী পরিচালক সেকেন্দার আলী মিনা বলেন, রানা প্লাজার পর গার্মেন্টস সেক্টরের নিরাপত্তা বিষয়ে মালিক, ক্রেতাসহ সরকার সজাগ হলেও অন্য সেক্টরের ক্ষেত্রে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মৃত্যুর বিষয়টিকে বড় ধরনের অপরাধ হিসেবে বিবেচনা না করায় এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য হওয়ায় নিরাপত্তার বিষয়টিও তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্য আরও উপস্থিত ছিলেন এসআরএসের আইন কর্মকর্তা হাসিনা খানম, বøাস্টের সদস্য মাহবুবা আক্তার প্রমুখ।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন