প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রাজস্ব ঘাটতি ও অর্থায়ন প্রভৃতি বিষয়গুলো অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। গতকাল বৃহস্পতিবার বাজেট পরবর্তী তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংগঠনটি একথা জানিয়েছে। ঢাকা চেম্বার জানায়, প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে করজাল পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করা, কর কাঠমোর অটোমেশন, যৌক্তিক রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ ও সরকারী ব্যয়ে সামঞ্জ্যসতা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও বাজেটে আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিক্রিয়ায় জানানো হয়, প্রস্তাবিত বাজেটে আয়-ব্যয়ের ঘাটতি স্থানীয় ব্যাংকিং ও অন্যান্য বৈদেশিক খাত হতে অর্থ সংস্থানের নির্ভরতা তৈরি করতে পারে। ঢাকা চেম্বার মনে করে, বাজেটের আকার বাড়ানোর চাইতে পরিকল্পিত, সময়োপযোগী, ব্যয় কার্যক্রমে দক্ষাতা অর্জন এবং বাস্তবায়ন যোগ্য বাজেট প্রণয়ন একান্ত অপরিহার্য।
প্রতিক্রিয়ায় আরও জানানো হয়, কর্পোরেট কর হ্রাসের ক্ষেত্রে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ শতাংশের বেশি আইপিওর মাধ্যমে বাজারে ছাড়া এবং লিস্টেড ও নন-লিস্টেড কোম্পানির ক্ষেত্রে বার্ষিক সর্বমোট ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত নগদ ব্যয় ও বিনিয়োগ ছাড়া সব ধরনের লেনদেন ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে সম্পন্ন না করলে লিস্টেড কোম্পানীর ২৫ শতাংশ হারে কর আরোপের প্রস্তাব পুনঃবিবেচনা করা প্রয়োজন। স্থানীয় বিনিয়োগ বৃদ্ধির পাশাপাশি আরো বেশি হারে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষনের জন্য পর্যায়ক্রমে বিদ্যমান কর্পোরেট কর হ্রাস করা প্রয়োজন বলে মনে করে ঢাকা চেম্বার।
এছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগের ধারা অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান করদাতাদের উপর নতুন করে করের বোঝা আরোও না বাড়িয়ে, করজাল বৃদ্ধির জন্য ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে অন্যান্য জেলাসমূহে আয়করদাতার সংখ্যা বৃদ্ধির উপর জোরারোপ করা প্রয়োজন। ব্যক্তি শ্রেণীর আয়করে নূন্যতম সীমা অপরিবর্তিত না রেখে তা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করে সংগঠনটি।
ঢাকা চেম্বার জানায়, পণ্য জব্দ করার ক্ষমতা ধারা ৮৩, ৮৪ এবং ১০০ ধারাগুলো সংষ্কার করা প্রয়োজন, যাতে করে হয়রানিমুক্ত ভ্যাট ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যায়। প্রস্তাবিত বাজেটে পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল সাপ্লাইয়ে উৎসে কর ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার উদ্যোগ অত্যন্ত প্রশংসনীয়, তবে উৎসে করের হার সকল রফতানিকারদের জন্য সমানভাবে নির্ধারন করা একান্ত আবশ্যক, এর ফলে তৈরি পোষাক খাতের সাথে সম্ভাবনাময় অন্যান্য খাতের বৈষম্য হ্রাস পাবে। এছাড়া প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ও পরিচালন ব্যয় দুটোই বৃদ্ধি পেয়েছে, এ পরিস্থিতিতে রাজস্ব সংগ্রহ কাঙ্খিত হারে বৃদ্ধি না পেলে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা আর্থিক খাতকে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করবে। এমন বাস্তবতায় আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা বজায়ে রাখার জন্য ব্যাংক ঋণ ও অন্যান্য খাতে যেমন: সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ গ্রহণের পরিমাণ এবং সুদের হারের মধ্যে ভারসাম্য রাখার আহ্বান জানায় ঢাকা চেম্বার।
ঢাকা চেম্বার জানায়, চলতি অর্থবছরে ৪৭ দশমিক ১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রফতানির বিপরীতে আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬৮ দশমিক ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এতে মোট বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ২১ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার। পাশাপাশি রফতানি বহুমুখীকরণ, বৈচিত্র্যকরণ ও রেমিট্যান্স আহরণের প্রতি গুরুত্বারোপ করে, বাজেটে বিশেষ নির্দেশনা থাকা প্রয়োজন।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন