সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

ভারতের বৈরী আচরণ

| প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০২২, ১২:০৪ এএম

হঠাৎ করেই তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি গেট ভারত খুলে দেয়ায় তিস্তা নদীর বিস্তীর্ণ ৩৫২ কিলোমিটার এলাকার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। গেট খুলে দেয়ায় ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা এখন দিশেহারা অবস্থায় রয়েছে। নদীভাঙনের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। গতকাল দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কয়েক দিন ভারতে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় গজলডোবা স্লুইস গেট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশে তিস্তার আশপাশের এলাকা তলিয়ে গেছে। তলিয়ে গেছে নীলফামারি, লালমনির হাট, রংপুর ও কুড়িগ্রামের কয়েকশ’ গ্রাম। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে আগামী কয়েক দিনে পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে এবং কোনো কোনো স্থানে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে। কোনো ধরনের আগাম নোটিশ বা তথ্য সরবরাহ না করেই ভারত বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দিয়েছে, যা দুঃখজনক এবং প্রতিবেশীর সাথে বৈরী আচরণের প্রকাশ।

বাংলাদেশকে বর্ষায় পানিতে ডুবিয়ে মারা এবং শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে মারা ভারতের নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বছরের পর বছর ধরে এ কাজটি সে করে আসছে। অথচ তার নেতারা মুখে মুখে বলে আসছেন বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্ক ইতিহাসের অন্যন্য উচ্চতায় রয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও বলা হয়, ভারতের সাথে রক্তের বন্ধন কিংবা স্বামী-স্ত্রীর মতো অত্যন্ত ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ ভারত যা চেয়েছে, বাংলাদেশ তা বিনাবাক্যে দিয়ে দিয়েছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ কিছুই পায়নি। এক তিস্তা চুক্তি আজ পর্যন্ত করেনি। নানা অজুহাত ও উছিলা দিয়ে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রেখেছে। অন্যদিকে, বাংলদেশ নিজে এ সমস্যা থেকে বের হতে বিভিন্ন প্রকল্পের যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতেও ভারত বাধ সেধেছে। ফারাক্কার বিরূপ প্রভাব থেকে উত্তর, পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলকে বাঁচাতে বাংলাদেশ যে বিকল্প গঙ্গাব্যারেজ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল, তাতে ভারত আপত্তি জানানোয় প্রকল্পটি স্থগিত হয়ে গেছে। প্রায় ৪২ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে পানি সমস্যার সমাধানসহ বাংলাদেশ প্রভূত উন্নতি সাধন করতে পারত। শুধু তাই নয়, চীনের সহযোগিতায় প্রায় ১০০ কোটি ডলার ব্যয় সাপেক্ষ তিস্তা এলাকার প্রকল্পটিও ভারতের আপত্তিতে স্থবির হয়ে রয়েছে। বিষয়টি এমন, ভারত পানিও দেবে না, আবার আমাদেরও নিজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতেও দেবে না। সে তার ইচ্ছামতো পানি নিয়ন্ত্রণ করে বাংলাদেশকে ঠেকিয়ে রাখবে। একে কি বন্ধুসুলভ বলা যায়? ভারত ৫৪টি অভিন্ন নদীর অধিকাংশে বাঁধ, ব্যারেজ ও সংযোগ খাল দিয়ে পানি সরিয়ে ও ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করে রেখেছে। এক তিস্তাতে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার সেবক থেকে সিকিমের সিমথন পর্যন্ত ৫টি বাঁধ দিয়েছে। এসব বাঁধ দিয়ে তিস্তা অঞ্চলকে পানিশূন্য ও ভাসিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। ফারাক্কা দিয়েও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একই কাজ করছে। সুসম্পর্কের কথা বললেও তার আচরণে অত্যন্ত নিষ্ঠুরতাই প্রকাশিত হচ্ছে। পানি ছাড়ার আগে তার অন্তত এটুকু ভাবা উচিৎ, পানি ছেড়ে দিলে পদ্মা ও তিস্তা অঞ্চলের মানুষ এবং সংশ্লিষ্ট অঞ্চলে কি ধরনের অমানবিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। এ মানবিকতা বাংলাদেশ তাকে প্রতিনিয়ত দেখিয়েছে এবং দেখাচ্ছে। বাংলাদেশ মানবিকতা দেখিয়ে নিজের ক্ষতি করে হলেও ফেনী নদী থেকে তাকে পানি তুলে নেয়ার অনুমতি দিয়েছে। এ মানবিকতার কোনো মূল্যই ভারত দিচ্ছে না।

ভারতে বন্যা বা ঢল সৃষ্টি হলে তা বাংলাদেশে আসবে। এক্ষেত্রে ভারত বিভিন্ন নদ-নদীতে বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণ করে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে রেখেছে। তার ইচ্ছার ওপর বাংলাদেশের ভাসা-ডুবা নির্ভর করছে। আন্তর্জাতিক পানিনীতির এমন লঙ্ঘন অত্যন্ত দুঃখজনক। ভারতের সাথে বাংলাদেশের পানি বৃদ্ধি এবং তা ছাড়া নিয়ে তথ্য বিনিময়ের সমঝোতা রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, ভারত তা মানছে না। বর্ষা বা ঢলের পানি ছাড়ার ক্ষেত্রে আগাম কোনো তথ্য বাংলাদেশকে দিচ্ছে না। বাংলাদেশ তথ্য চেয়েও পায় না। তথ্য দিলে হয়তো সংশ্লিষ্ট এলাকার ফসলাদি ও সহায়সম্পদ রক্ষায় আগাম সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হতো। বাংলাদেশ সরকারও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। ভারতের সাথে আগাম তথ্য বিনিময়ের বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিকল্প পদক্ষেপ গ্রহণেও সরকারের শৈথিল্য বা গড়িমসি প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। দুঃখজনক, বর্ণিত দুটি প্রকল্প ও ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে সদ্য ঘোষিত বাজেটে কোনো দিকনির্দেশনা বা ব্যবস্থা নেই। আমরা মনে করি, এসব নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের উচিৎ ভারত সরকারের সাথে কথা বলা। বছরের পর বছর ধরে ভারত তার ইচ্ছামতো বাংলাদেশকে পানি ছেড়ে ডুবিয়ে কিংবা পানি ধরে রেখে শুকিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তা মেনে নেয়া যায় না।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (11)
Bashir Uddin ১১ জুন, ২০২২, ১০:১৬ এএম says : 0
It has become India's policy to drown Bangladesh in the rainy season and dry in the dry season. He has been doing this job for years. But its leaders have been saying orally that good relations with Bangladesh are at another height in history. Bangladesh also said that it has very close ties with India like blood ties or husband and wife. Based on this relationship, Bangladesh has given whatever India wants, including transit, transshipment, trade and commerce. In contrast, Bangladesh got nothing. One Teesta treaty has not been done till date. He has been hanging on year after year with various excuses and excuses. On the other hand, India has also obstructed the initiative of Bangladesh in various projects to get out of this problem. The project has been stalled due to India's objection to Bangladesh's initiative to build an alternative Ganga barrage to protect the north, west and central regions from the adverse effects of Farakka. If the project worth around Tk 42,000 crore was implemented, Bangladesh could have made tremendous progress including solving the water problem. Not only that, but the Teesta project, which cost about কোটি 1 billion in cooperation with China, has also stalled due to India's objections. The point is, India will not provide water, nor will it allow us to build our own system. He will control Bangladesh as much as he wants and keep Bangladesh at bay. Can it be called friendly? India has made arrangements to divert and release water through dams, barrages and connecting canals in most of the 54 common rivers. In one Teesta, 5 dams have been constructed from Sebak in Darjeeling district of West Bengal to Simthon in Sikkim. With these dams, the Teesta region has been made waterless and flooded. The same thing is happening in the north-west with Farakka. Speaking of good relations, his behavior is very cruel. Before releasing the water, he should at least think about what kind of inhuman situation will be created in the people of Padma and Teesta region and in the respective areas. This humanity Bangladesh has always shown and is showing him. Bangladesh has shown its humanity by allowing itself to draw water from the Feni river. India is not paying any price for this humanity.
Total Reply(0)
Mohammed Ismail ১১ জুন, ২০২২, ১০:২০ এএম says : 0
দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের হিসাব না করে দেশের ভিতর দিয়ে নামমাত্র শুল্ক দিয়ে ভারতের এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে পন্য পরিবহণের জন্য রাস্তা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে, বন্দর ব্যবহারের জন্য অনুমতি , আম ইলিশের কথা না হয় বাদই দিলাম তবুও তারা শুধু তাদের স্বার্থ রক্ষায় আছে! আমি মনে করি তারা তাদের দেশের স্বার্থে এক চুল ছাড় দেয় নাই দিবে না কিন্তু আমরা এত মার খাওয়ার পরও বুঝবো কবে?
Total Reply(0)
Sikder Asaduzzaman Asad ১১ জুন, ২০২২, ১০:২৩ এএম says : 0
মারবেই তো। ওরা নিজেদের ভালটা বুঝবে আর এটাই ঠিক । আমাদের দেশের মন্ত্রিদের মত তারা নিজের দেশ রসাতলে দিয়ে বলবেনা যে সব দিব তার বিমিময়ে কিছু চাইতে পারব না । তাদের নাকি লজ্জা বেরে যায়??
Total Reply(0)
Nadim Mahmud Patwary ১১ জুন, ২০২২, ১০:২৩ এএম says : 0
বাংলাদেশে অবস্থানরত ভারতীয় দালালদের প্রতিক্রিয়া জানতে চাই,দয়া করে গর্ত থেকে বের হয়ে আসুন
Total Reply(0)
Nasim Arafat ১১ জুন, ২০২২, ১০:২৩ এএম says : 0
কিচ্ছু করার নাই।ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু ।তারা প্রতি বছর পানিতে মারবে,স্থলে মারবে ।আমরা তাকিয়ে দেখব ।ধিক্কার জানাই দেশের এমন পররাষ্ট্র মন্ত্রনালায় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালায় এর প্রতি।
Total Reply(0)
Md. Abdullah ১১ জুন, ২০২২, ১০:১৭ এএম says : 0
ভারত কখনো বাংলাদেশ কে বন্ধু মনে করেনা ভারত সবসময় বাংলাদেশের মানুষকে কিভাবে ধ্বংস করা যায় সে চেষ্টাই আছে তারপরও নাকি ভারত আমাদের বন্ধু হাস্যকর খুব হাস্যকর
Total Reply(0)
Arif Billah ১১ জুন, ২০২২, ১০:১৮ এএম says : 0
ভারতের মত বন্ধু থাকলে শত্রুর দরকার নেই,,, তারপরও কিছু মানুষ পা চাটে।
Total Reply(0)
Jahid Hossain ১১ জুন, ২০২২, ১০:১৮ এএম says : 0
ইলিশ মাছের চাষ বাড়ানোর জন্য ভারত পানি ছেড়ে দিয়েছে। আগামী বছর ইলিশ মাছ বেশি করে পাওয়ার আশায় পানি দিতেছে। কিছু মানুষের সাময়িক কষ্ট হতে পারে ইলিশ মাছ খাওয়ার পরে আর কষ্ট থাকবে না।
Total Reply(0)
Shalman Sharif ১১ জুন, ২০২২, ১০:১৮ এএম says : 0
বর্ষাকালে গ্রামে যখন অনেক বৃষ্টি হয় তখন পুকুর থেকে উজান ঠেলে মাছ উপরে উঠে আসে ভারত ইলিশ খেয়ে স্বাধ পেয়ে এখন তিস্তার পানি বাংলাদেশের দিকে দিতাছে কারন তারাও জানে বাংলাদেশের দিকে পানি দিলে ইলিশ ভারতে উজান ঠেলবে তাই বন্ধু রাষ্ট হিবেসে বাংলাদেশের দিকেই পানি দিতাছে
Total Reply(0)
Abu Musa ১১ জুন, ২০২২, ১০:১৯ এএম says : 0
বাংলাদেশের উচিত হবে আরেকটি বাঁধ নির্মাণ করা, আর আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে ন্যায্য পানির মূল্য আমরা বঞ্চিত হচ্ছি।
Total Reply(0)
jack ali ১১ জুন, ২০২২, ১১:৪২ এএম says : 0
আমাদের নিরাপত্তা সার্বভৌমত্ব সবকিছু আমাদের দেশের তথাকথিত সরকার ইন্ডিয়ার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে বিনা পয়সায় ইন্ডিয়া এখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারে 50 বছর ধরে তাই করে যাচ্ছে আবার আমাদের দেশটাকে স্বাধীন করতে হবে এ ছাড়া আর কোন উপায় নাই বর্বর পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা আমাদের দেশ চালাচ্ছে
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন