ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের অধীনে ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এবারের এই ভর্তি পরীক্ষাই ছিল ‘ঘ’ ইউনিটের শেষ ভর্তি পরীক্ষা। আগামী বছর থেকে এই ইউনিটটি বিলুপ্ত হবে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তপক্ষ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত এই ইউনিটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিভাগ পরিবর্তনের সুযোগ ছিল।
গতকাল শনিবার সকাল ১১টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকারসহ বিভাগীয় অন্যান্য সাত সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়েছে এই ভর্তি পরীক্ষা। ১ হাজার ৩৩৬ টি আসনের বিপরীতে এই ইউনিটে আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার ৪৫ জন। সেই হিসেবে প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তিযুদ্ধে লড়াই করেছে ৫৮ জনের অধিক শিক্ষার্থী।
এদিন বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান, প্রো-ভিসি (প্রশাসন) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-ভিসি (শিক্ষা) প্রফেসর ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, ট্রেজারার প্রফেসর মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, ‘ঘ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. জিয়া রহমান, রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, প্রক্টর প্রফেসর. এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ সংশ্লিষ্টরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনের পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
পরীক্ষার কেন্দ্র পরিদর্শন এসে ভিসি প্রফেসর ড. মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, সর্বোচ্চ নিরাপত্তার সঙ্গে পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ঢাকার বাইরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকেও আমরা খবর পেয়েছি তারা কোনো ধরনের সমস্যা ছাড়া যথাযথভাবে ভালো পরীক্ষা পরিচালনা করছেন। আমি শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলেছি। প্রশ্নপত্রের মান ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে তারা সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন।
এদিকে প্রশ্নপত্রের মান নিয়ে বিপরীতধর্মী মন্তব্য প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। কারো নিকট সহজ আবার কারো নিকট ছিল কঠিন। লিখিত অংশে খুব একটা ভালো করতে পারেননি বলে জানান হাতিয়া দ্বীপ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী তানজিদা নাহাত রিয়া। তিনি বলেন, ইংরেজিটা একটু খারাপ হইছে। লিখিত টেনেটুনে পাশ করতে পারি। তবে অভার অল (সব মিলিয়ে) প্রশ্ন ভালো হয়েছে। তবে বাংলা অংশ মোটামুটি কঠিন ছিল বলে মনে করেন নটরডেম কলেজ শিক্ষার্থী সাইফুল আহসান। তিনি বলেন, বাংলা প্রশ্ন দেখে আমার মাথা ঘুরায়া গেছে। খুব কঠিন লাগছিল। তবে অন্য বিষয়গুলো ভালো হয়েছে। তবে লিখিত অংশটা অনেকটা কঠিন ছিল। অপরদিকে সাধারণ জ্ঞান অংশের প্রশ্ন খুব কঠিন হয়েছে বলে মন্তব্য করেন নোয়াখালী সরকারী কলেজের শিক্ষার্থী মাহি। তিনি বলেন, সাধারণ জ্ঞান অনেক কঠিন হয়েছে। ওইটাতে পাশ করলে চান্স পাব বলে আশা করছি। সাম্প্রতিক সময়ের বিষয়গুলো না দিয়ে কী অদ্ভুত এক ধরনের প্রশ্ন আসছে। তাই বুঝে উঠতে পারিনি।
কারাগার থেকে ভর্তি পরীক্ষা দিলেন শিক্ষার্থী: গতকালের ভর্তি পরীক্ষায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কেরানীগঞ্জ থেকে পরীক্ষা দিয়েছেন এক শিক্ষার্থী। বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রফেসর ড. একেএম গোলাম রব্বানী। সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, শুক্রবার কারা কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে এক শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ব্যাপারে জানায়। আমরা সেটি আমলে নিয়ে শিক্ষার্থীর পরীক্ষার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেই। আমাদের একজন শিক্ষক এবং দায়িত্বরত কর্মকর্তা সকালে কারাগারে গিয়ে তার পরীক্ষা নিয়েছেন। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।
৫৫ বছর বয়সে ভর্তি পরীক্ষা: এদিকে ৫৫ বছর বয়সে এই ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন হার না মানা এক বাবা। তার নাম বেলায়েত শেখ। বাসা শ্রীপুরে। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, অভাবের কারণে ছাত্র জীবনে ঠিকমতো পড়াশোনা করতে পারেননি তিনি। স্বপ্ন ছিল ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার কিন্তু সেই স্বপ্ন তার পূরণ হয়ে উঠেনি। পরে সন্তানদের নিয়ে একই স্বপ্ন দেখেন বেলায়েত। কিন্তু সেই স্বপ্নেও ফাঁটল ধরে বেলাযেতের। হার না মানা এই বাবা শেষমেশ নিজেই আবার পড়াশোনা শুরু করেন। ভর্তি হন কলেজে। কলেজ চুকিয়ে কোচিং সেন্টার আর সেখান থেকে এসে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায়।
গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মুজিবুর রহমান গণিত ভবনে ভর্তি পরীক্ষায় বসেন বেলায়েত। পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে সাংবাদিকতার উপর পড়াশোনা করার ইচ্ছে পোষণ করেন তিনি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন