২০৪০ সালের মধ্যে দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ লক্ষ্যে সরকার অষ্টম পঞ্চ-বার্ষিকী পরিকল্পনাতেও তামাক নিয়ন্ত্রণ অন্তর্ভুক্ত করেছে। তবে ১২ জুন বিকেলে ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন স্বাস্থ্য সেক্টর আয়োজিত ‘২০২২-২০২৩ অর্থ-বছরের বাজেটে তামাক কর : প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে জাতীয় সংসদে ঘোষিত প্রস্তাবিত বাজেট প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গঠনের অন্তরায় বলেই সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। উপরন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধিও হতাশাব্যঞ্জক। কারণ মুদ্রাস্ফীতি ও মাথা পিছু আয়ের হিসেবে তুলনা করলে করলে দেখা যাবে যে, সিগারেটের প্রকৃত মূল্য কমে গেছে।
ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন কাজী ফিরোজ রশীদ, সংসদ সদস্য, ঢাকা-৬ আসন ও সাবেক মন্ত্রী এবং সদস্য, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি; অধ্যাপক ড. রুমানা হক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও কনভেনর, বিএনটিটিপি; অধ্যাপক ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটি; মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লিড পলিসি এডভাইজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস-বাংলাদেশ; সৈয়দ মাহবুবুল আলম, কারিগরি পরামর্শক, দি ইউনিয়ন; শারমিন রিনভী, সভাপতি, ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) এবং সুশান্ত সিনহা, বিশেষ প্রতিনিধি, একাত্তর টেলিভিশন। ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য সেক্টরের উপ-পরিচালক মোঃ মোখলেছুর রহমান।
এসময় সুশান্ত সিনহা বলেন, এবারের বাজেটে নিম্নস্তরের প্রতি শলাকা সিগারেটের মূল্য বাড়ানো হয়েছে মাত্র ১০ পয়সা করে। এটি আসলে এক ধরণের শুভঙ্করের ফাঁকি। আমাদের দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তামাকজাত দ্রব্যের কর কাঠামো ঠিক করে। এটি আসলে করা উচিত ট্যারিফ কমিশনের। আর রাজস্ব বোর্ডের হাতে থাকা উচিত রাজস্ব আদায়। এটা করতে পারলে তামাকজাত দ্রব্যের কর কাঠামো ঠিক ভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
শারমিন রিনভী বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষদেরকে সিগারেট থেকে দূরে রাখতে দাম এমনভাবে বাড়াতে হবে যাতে সিগারেট তাদের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। অথচ তেমনটি আমরা বাজেটে দেখি না।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, আমাদের দেশের মানুষ নিম্নস্তরের সিগারেট বেশি গ্রহণ করে। অথচ বাজেটে নিম্নস্তরের সিগারেটের মূল্য সেভাবে বাড়েনি। এতে করে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়বে। সস্তা সিগারেটের ব্যবহারও বাড়বে। এছাড়া নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে জর্দা-গুলকেও ট্যাক্সের আওতায় আনতে হবে।
মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর এনবিআরকে অতিরিক্ত যে ৯ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে সেটি তারা তামাক কর বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্জন করতে পারতো। কিন্তু এনবিআর সে সুযোগ গ্রহণ করেনি। এজন্য আগামীতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমে অর্থমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয়কে তামাকজাত দ্রব্যের কর বৃদ্ধির ব্যাপারে উদ্যোগী করতে হবে।
অধ্যাপক ড. রুমানা হক বলেন, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সিগারেটের যে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে সেটি মুদ্রাস্ফীতি ও মাথা পিছু আয়ের হিসেবে তুলনা করলে করলে দেখা যাবে যে, সিগারেটের প্রকৃত মূল্য কমে গেছে। এটি আমাদের জন্য হতাশাব্যঞ্জক। এতে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে তামাক গ্রহণের মাত্রা কমবে না।
অধ্যাপক ডাঃ গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, জাতীয় সংসদের অধিবেশনে সংসদ সদস্যরা যদি তামাক কর নিয়ে জোরালো ভূমিকা রাখেন তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড চাইলেও তামাক কর বৃদ্ধি কমিয়ে রাখতে পারবে না। এজন্য আগামীতে তামাক কর বৃদ্ধির কৌশল নির্ধারণে আমাদেরকে আরো কৌশলী হতে হবে।
কাজী ফিরোজ রশীদ, এমপি বলেন, বর্তমানে সব কিছুরই দাম বেড়েছে। কেবল দাম বাড়েনি তামাকজাত দ্রব্যের। বাজেটে সিগারেটের নামমাত্র যে মূল্য বৃদ্ধি করা হয়, তাতে ধূমপায়ীর সংখ্যা কমে না। একারণে সিগারেটের মূল্য বাড়লে তাতে দেখা যায় কোম্পানীগুলোও লাভবান হয়।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন