শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

গ্রহণযোগ্য নির্বাচন

| প্রকাশের সময় : ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

জাতীয় নির্বাচন কবে কখন অনুষ্ঠিত হবে এ নিয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলা না গেলেও প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কার্যকলাপ সুনির্দিষ্ট একটি বার্তা দিচ্ছে। গত কয়েক মাস থেকে সবার মুখে রয়েছে নির্বাচনের প্রসঙ্গ বা আলোচনা। ভোটারদের কাছে যেতে বলা হচ্ছে নেতা-কর্মীদের। সংসদে বিরোধী দল বলে পরিচিত দলটি প্রায় দু’মাস আগে সিলেট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অপেক্ষায় থাকা বিএনপি স্বাধীন ও শক্তিশালী নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন বিষয়ে প্রস্তাব দিয়েছে। এদিকে গত রোববার অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর সিলেট সফর দিয়েই আগামী নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করবে আওয়ামী লীগ। অনেকেই মনে করছেন, দেশে জাতীয় নির্বাচনের আলোচনার একটা আবহ তৈরি হচ্ছে। তারা মনে করছে সময় এবং সুযোগ পক্ষে থাকলে নাটকীয়ভাবে আওয়ামী লীগ আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিতে পারে। অবস্থা যাইহোক সাধারণ মানুষ সব দলের অংশগ্রহণভিত্তিক গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনে  ভোট দিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কারণ, অনেকদিন তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছেনা। অন্যদিকে আগামী জাতীয় সংসদের নির্বাচনের উপরই নির্ভর করছে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিশ্ব দরবারে অবস্থান, ইইউ’র জিএসপি প্লাস, সর্বোপরি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের ইমেজ। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিতকরণে সবদলের অংশগ্রহণে যাতে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো। বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে কথা-বার্তা শুরু  হয়েছে। জাতিসংঘসহ দাতাদেশ ও সংস্থাগুলো বাংলাদেশে ইনক্লুসিভ নির্বাচনের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছে।
আগামী নির্বাচনকে যেমনি প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নবিদ্ধ দেখতে চাননা, তেমনি দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু ও সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে সেজন্য নতুন প্রস্তাবনা দিয়েছেন। সংবিধানের আলোকে নতুন নির্বাচন কমিশন আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে দলের চেয়ারপারসনের দেয়া প্রস্তাব প্রেসিডেন্টকে দেবে বিএনপি। সব রাজনৈতিক দলের কাছেও এ প্রস্তাব পাঠানো হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন গঠন করার দায়িত্ব প্রেসিডেন্টের। এ জন্যই প্রস্তাবটি আমরা তার কাছে দেব। বেগম খালেদা জিয়ার প্রস্তাবের পরপরই সরকারি দলের কোন কোন নেতা বিরূপ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করলেও দেশের সুধিসমাজ এবং বোদ্ধামহল মনে করছে এই প্রস্তাব নিয়ে ভাববার রয়েছে অনেক কিছু। এই প্রথমবার দেশের আমলা ও বিচারপতিদের বাইরে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের মধ্য থেকে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের নিয়ত বাস্তবায়নেই সকল নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সমঝোতার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হলেও ঐরায়ে অন্তত আরো দু’টার্ম তত্ত্বাবধায়কের অধীনে নির্বাচন করার কথা বলা হয়েছে। সরকারের দিক থেকে বারবার বলা হচ্ছে, সংবিধানের বাইরে তারা কোন কিছু করতে পারেন না। এ বিবেচনা থেকেই মূলত আগামী নির্বাচনকে নিরপেক্ষ করার দিকটি ভাবা হচ্ছে। সে বিবেচনায় একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। ব্যাপারটি কেবল রাজনৈতিক দিক থেকেই দেখার সুযোগ নেই। দেশের অর্থনীতির বিবেচনাতেও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ব্যবসায়িক পরিবেশ ভাল না থাকায় দেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আগ্রহ বাড়ছে না। অন্তর্জাতিক অংগনেও সরকারের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যারোমিটারেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ২০১৪ সালের অগ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পর থেকেই দেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। নীতিগতভাবে এর সাথে সরকারও যে একমত তা পরিষ্কার হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন তিনি স্পষ্টতই বলেছেন, প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন তিনি চান না। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে অবশ্যই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য প্রয়োজন। বিষয়টি সংসদের হাতে ছেড়ে দেবার মত বাস্তবতা নেই। সেখানে শক্তিশালী বিরোধীদল থাকলে হয়ত ভিন্ন কথা ছিল। সেসব দিক বিবেচনাতেই বিএনপির পক্ষ থেকে যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তা নিঃসন্দেহে সকল মহলের আন্তরিকতা প্রকাশের একটি শুভ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
আলামত বিবেচনায় নিকটে অথবা সময়মত যখনই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক তার গ্রহণযোগ্যতা অবশ্যই থাকতে হবে। বর্তমানে যে বাস্তবতা তাতে বিষয়টি হুট করে হবার নয়। এটি এক বৈঠকেরও বিষয় নয়। ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে, সংবিধানের আলোকে নির্বাচন কমিশন আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করা না হলে বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়াবে। মূল বিষয় হচ্ছে, রাজনৈতিক সমঝোতার। তত্ত্বাবধায়ক সরকারও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে। বর্তমান পরিস্থিতি তখনকার চেয়ে আরো খারাপ। যেহেতু সকল মহলই সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পক্ষে রয়েছে, অন্যদিকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর কথাও বলা হচ্ছে। সেকারণে নির্বাচন কমিশনের বিষয়টি দ্রুতই ফয়সালা হওয়া উচিত। এব্যাপারে সরকারি মহল কার্যকর উদ্যোগ নেবে এটাই-জনগণ আশা করে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (1)
mohammamin ruhul amin ২৩ নভেম্বর, ২০১৬, ৫:০১ পিএম says : 0
we went to free and fair election. this is the main thing this moment.
Total Reply(0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন