যশোরের কেশবপুরে ইটভাটার মালিকের প্রতারণায় আর্থিকভাবে নিঃস্ব হয়েছেন দেড় শতাধিক দিনমজুর-প্রবাসী পরিবার। উপজেলার সাতবাড়িয়া ইউনিয়নের রিপন ব্রিকস্ স্বল্পমূল্যে ইট বিক্রির নামে ফাঁদ ফেলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে করেছেন। গতকাল রবিবার দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগিরা। সংবাদ সম্মেলনে প্রতারণার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তৌহিদুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগিরা জানান, ২০১৮ সাল থেকে রিপন ব্রিকস্ প্রতি বছর স্বল্পমূল্যে ইট বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন ধাপে নামে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে ৪ কোটি টাকা সংগ্রহ করেন। মূলত স্বল্পমূল্যে ইট বিক্রির নামে তারা প্রতারণার ফাঁদ পাতেন। এই প্রতারণার মূল হোতা রিপন ব্রিকস্রে স্বত্বাধিকারী আবু বক্কর ছিদ্দিক। তার কাছে ভোক্তভোগীরা ইট বা টাকা ফেরত চাইতে গেলে তার স্থানীয় ক্যাডার দ্বারা হুমকি ও থানায় নিয়ে যেয়ে মামলা দেওয়ার ভয়ভীতি প্রদান করছেন। বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পুলিশ ফাঁড়ি বা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়াতে ভুক্তভোগিরা কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করা হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে।
ভুক্তভোগী তৌহিদুর রহমান জানান, চক্রের সদস্য পারভেজ, কামরুজ্জামান শিশু, মোশারফ গাজীসহ ৫-৬ জনকে এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে তাদের দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে জোরপূর্বক ভয়ভৃতি দেখিয়ে ইট কিনতে রাজি করায়। তাদের কথা মতো ভাটার ম্যানেজারের কাছে দু’দফায় সাড়ে চার লক্ষ টাকা আমি জমা দেই। এ শর্তে আমাদের রশিদও দেওয়া হয়। কিন্তু মৌসুমে আমরা ইট সংগ্রহ করতে গেলে বলে, ‘ইট পোড়ানো হয়নি, ইট প্রস্তত হলে দেওয়া হবে।’ অথচ মৌসুমে বাইরে বিভিন্ন ক্রেতার কাছে তারা ঠিকই ইট বিক্রি করেছেন। বিষয়টি আমরা জেনে ভাটার মালিক আবু বক্কর ছিদ্দিকের কাছে গেলে তিনি টালবাহানা শুরু করেন। বিদেশ থেকে দেশে এসে নিজের সঞ্চয় করা এতগুলো টাকা আত্মসাৎ করে নেওয়ায় আমি অসহায়ভাবে জীবনযাপন করছি। আমার মতো অনেকই এই ইট ভাটার প্রতারণার শিকার। স্থানীয় এক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, মাষ্টারি করে অল্প অল্প করে টাকা সঞ্চয় করে বাড়ি নির্মাণের জন্য টাকা জমিয়ে ছিলাম। স্থানীয় রিপন ব্রিকস্ কাছে ৫ লক্ষাধিক টাকা জমা দেই। কিন্তু ইটও দেয়নি; টাকাও দেয়নি। টাকা চাইতে গেলে বলে সামনের বছরে দিব। এমন করে তিন বছর ঘুরালেও তারা আমার টাকা বা ইট কোনটাই দিচ্ছে না। সাতবাড়িয়ার পাঁচানি এলাকার ভুক্তভোগী আব্দুস সোবহান জানান, ইট দেওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে তার এজেন্টরা তিন লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে। এখন ইট দিচ্ছে না; টাকাও দিচ্ছে না। টাকা তাইলে গেলে তার ছেলের সন্ত্রাসীবাহিনী ও পুলিশ দিয়ে মামলা দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করছি, আমাদের টাকাগুলো ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিক।
তবে ইট ভাটাটির স্বত্বাধিকারী আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমরা কোন কারোও সাথে প্রতারণা করছি না। ভুক্তভোগিদের হুমকি ধামকিও দিচ্ছি না। বর্তমানে ইটভাটা বন্ধ রয়েছে। সবার ইট দেওয়া হবে। এই বিষয়ে কেশবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন বলেন, রিপন ব্রিকস্রে বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েছি। আমরা ইটাভাটা মালিককে নোটিশ করেছি। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের পেক্ষিতে আমাদের তদন্ত চলমান রয়েছে। সত্যতা মিললে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিবো।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন