নিত্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান মূল্য বৃদ্ধিতে নি¤œবিত্ত ও নি¤œÑমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর কষ্ট আর দূর্ভোগের সীমা অতিক্রমের মধ্যেও দক্ষিণাঞ্চলে গত প্রায় দেড়মাস টিসিবি’র পণ্য বিক্রী কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে চলতি মাসে ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে এ অঞ্চলের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ পরিবারের মাঝে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের সিমিত সরবারহ শুরু হতে পাড়ে বলে জানা গেছে। কিন্তু ট্রাকের মাধ্যমে খোলা বাজারে পণ্য বিক্রীর কোন সরকারী সিদ্ধান্তের বিষয়ে বরিশালের জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সহ টিসিবি’র দায়িত্বশীল সূত্রও কিছু বলতে পারেনি।
ফলে বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যের ক্রমবর্ধমান প্রবনতা নিয়ন্ত্রনে এখন সরকারী নুন্যতম কোন উদ্যোগও অবশিষ্ট না থাকায় সাধারন মানুষের দূর্ভোগ সব সীমা ছাড়াচ্ছে। এমনকি বাজেট ঘোষনার পরদিন থেকেই সব ধরনের ভোজ্য তেলের দাম আরেক দফা বেড়েছে। বরিশালের বাজারে এখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ২০৫ টাকা থেকে ২১০ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। মুসুর ডাল সহ অন্যান্য ডালের দামও ক্রমশ বাড়ছে। চিনির কেজি ৮৫ টাকার ওপরে। চালের বাজারের অস্থিরতা এখনো স্তিমিত হয়নি। মোটা চালের কেজি এখনো ৪০ টাকার ওপরে। মধ্যম মানের ‘বিআর ২৮Ñবালাম’ চালের কেজি ৪৮-৫০ টাকা এবং ‘মিনিকেট’ নামের ভালÑমধ্যম মানের চালের কেজি এখনো ৬৫ টাকার ওপরে। অথচ এবার সদ্যসমাপ্ত রবি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে বোরো ধানের দাম ছিল সর্বোচ্চ ৭শ টাকা মন। এমনকি ঘূর্ণিঝড় ‘অশিনি’তে ভর করে বর্ষনের পর পর ধানের দর সাড়ে ৬শ টাকায়ও নেমেছিল। আর কৃষকের ১মন বোরো ধান উৎপাদন ব্যায় এবার ৮শ টাকায় পৌছে ডিজেল সহ কৃষি শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধির কারণে।
অপরদিকে বাজারে এখন ৪০ টাকার নিচে কোন সবজি মিলছে না। কোন কোন সবজি ৫০ থেকে ৬০ টাকায়ও বিক্রী হচ্ছে। এমনকি মৌসুমের শুরুতে গোল আলুর কেজি ১৫ টাকা থেকে ইতোমধ্যে তা প্রায় ২৫ টাকায় উঠেছে। কারণ উৎপাদকের ঘরের আলু এখর ব্যাবসায়ীদের হীম ঘরে। তবে সবজির মধ্যে এখনো গোল আলুর দামই সর্বনি¤েœ এবং নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোতে কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে। তবে এবারো দক্ষিণাঞ্চলে শীতকালীন সবজি আর বোরো ধান সহ প্রায় সব কৃষি পণ্যের উৎপাদনই ছিল স্বাভাবিক এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী।
চাল-ডাল সহ সব নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্যে দক্ষিণাঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ পরিবারগুলোর দূর্ভোগের মাত্রা সীমার শেষপ্রান্তে পৌছায় হতাশা আর ক্ষোভও বাড়ছে। আর নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির দূর্ভোগ থেকে নি¤œ ও নি¤œ-মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে কিছুটা স্বস্তি দিতে রাষ্ট্রীয় বানিজ্য সংস্থাÑ টিসিবি দীর্ঘদিন ধরে কিছু নিত্যপণ্য বিক্রী করে আসলেও বিগত ঈদ উল ফিতরের আগে তা বন্ধ হয়ে গেছে। কথা ছিল জুনের প্রথম থেকেই পুনরায় টিসিবি’র মাঠ পর্যায়ের কার্যক্রম আবার শুরু হবে। কিন্তু সাধারন মানুষকে হতাশ করেই সে কার্যক্রম এখনো বন্ধ। এমনকি ট্রাক যোগে টিসিবি’র পণ্য বিক্রী কার্যক্রম আর শুরু হবে কিনা, সে বিষয়েও এখন দায়িত্বশীল মহল কিছুই বলতে পারছেন না।
তবে চলতি সপ্তাহের শেষে বা আগামী সপ্তাহেই ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে সিমিত কিছু পণ্য বিক্রী আবার বিক্রী শুরু হতে পাড়ে বলে জানিয়েছে একাধীক সূত্র। গত মার্চ ও এপ্রিল মাসে দু দফায় দক্ষিণাঞ্চলের ৩ লাখ ৪০ হাজার পরিবারের মাঝে ২ কেজি করে ডাল, চিনি ও মুসুর ডাল ছাড়াও দুই লিটার করে সয়াবিন তেল বিক্রী করা হয়েছিল টিসিবি’র মাধ্যমে। যদিও ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার ও চেয়ারম্যানদের দেয়া তালিকা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসন হয়ে জেলা প্রশাসন এসব ফ্যামিলি কার্ড ইস্যু করেছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়েই সুবিধাভোগীদের তালিকা নিয়ে পক্ষপাত্বিত্বেরও অভিযোগ ছিল।
এদিকে আগামী দিন কয়েকের মধ্যে ফ্যামিলি কার্ডের মধ্যে ভতর্’কি মূল্যে টিসিবি’র পণ্য বিক্রী কার্যক্রম শুরু হলেও এবার চিনির সরবারহ আগের ২ কেজির স্থলে এক কেজি হ্রাস করা হচ্ছে বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের মাত্র ৩.৪০ লাখ পরিবার টিসিবি পণ্য পেলেও খোলা বাজারে বিক্রী কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বৃহত জনগোষ্ঠী এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবাহল মহল। ফলে নিত্যপণ্যের বাজারে অপতত তেমন কোন ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে না বলেই মনে করছেন বাজার পর্যবেক্ষকগন।
এসব বিষয়ে বরিশালের জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন সহ টিসিবি’র স্থানীয় দায়িত্বশীল মহলেরও কোন ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন