করভেট, লার্জ পেট্রোল ক্রাফট তৈরির পর এবার সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ট্যাংক (এলসিটি) তৈরি শুরু করছে খুলনা শিপইয়ার্ড। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য তিনটি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ট্যাংক তৈরি করা হবে। দেশের সর্ব বৃহৎ দৈর্ঘ্যের (৭০ মিটার) ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ট্যাংকগুলোতে অত্যাধুনিক মেশিনারী এবং যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হবে। এলসিটি ৩টি আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমা এবং দেশের অভ্যন্তরের নদীসমুহে অপারেশন পরিচালনা করবে। প্রতিটি জাহাজে একই সাথে ৬টি মাঝারি মানের ট্যাংক পরিবহন করা যাবে। এছাড়াও ৬টি মাঝারি মানের ট্যাঙ্কের পরিবর্তে প্রতিটি জাহাজ ৫টি মিডিয়াম অ্যটিল্যারি গান ভেহিকেল অথবা ১২টি এপিসি অথবা ১৮টি মিলিটারি ট্রাক পরিবহন করা যাবে। এলসিটিমূহের প্রাথমিক কাজ হবে যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের উভচর অভিযান পরিচালনা এবং ট্যাংক, এপিসিসহ সার্পোট ইউনিট ও ল্যান্ডিং ফোর্স পরিবহন করা। তাছাড়া শান্তিকালীন সময় এলসিটি’র মিশন হবে লজিস্টিক শিপ এর ভূমিকা পালনের পাশাপাশি বঙ্গোপসাগর ও এর তৎসংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় মানবিক সহায়তা প্রদান এবং ত্রাণসামগ্রী ও কর্মী পরিবহন করা। দেশে নির্মিত প্রথম ল্যান্ডিং ক্র্যাফট হিসেবে এটা দেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে। জাহাজ ৩টি আন্তর্জাতিক ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি লয়েডস রেজিস্ট্রার (ইংল্যান্ড) এর নীতিমালা অনুসরণ করে নির্মিত হবে।
আজ বুধবার দুপুরে খুলনা শিপইয়ার্ড চত্বরে এলসিটি নির্মাণের কিল লেয়িং অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা নৌঅঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমডোর এম সামছুল আজীজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই কিল লেয়িং অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় রিয়ার এডমিরাল আনোয়ার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য খুলনা শিপইয়ার্ড কর্তৃক জাহাজ নির্মাণ এটাই প্রথম নয়। আগেও এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য ৫টি প্যাট্রোল ক্র্যাফট, ২টি লার্জ প্যাট্রোল ক্র্যাফট, ২টি টাগ বোট এবং ৬টি ল্যান্ডিং ক্র্যাফট ইউটিলিটি সফলভাবে নির্মাণ করে হস্তান্তর করেছে। আর এখন সর্ববৃহৎ দৈর্ঘ্যর এলসিটি নির্মাণ করছে। এগুলো খুলনা শিপইয়ার্ডের ক্রমবর্ধমান সক্ষমতার প্রমাণ। কেবল নৌবাহিনীর জন্য নয়, বরং কোস্টগার্ড, মোংলা বন্দর, পায়রা বন্দর, মৎস্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জন্য আন্তর্জাতিকমানের জাহাজ নির্মাণ করে শিপইয়ার্ড দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। খুলনা শিপইয়ার্ড জাহাজ নির্মাণ করে অচিরেই বিদেশে রপ্তানিতে সক্ষম হবে উল্লেখ করে প্রধান অতিথি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শী সিদ্ধান্তে ১৯৯৯ সালে খুলনা শিপইয়ার্ডকে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। মৃতপ্রায় এ প্রতিষ্ঠান বর্তমানে তার হৃত গৌরব পুনরুদ্ধার করেছে এবং লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। সঠিক নেতৃত্ব, কর্মনিষ্ঠা ও সততা যে একটি প্রতিষ্ঠানকে সফলতার অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে তার সফল উদাহরণ এই খুলনা শিপইয়ার্ড। কিল লেয়িং অনুষ্ঠানে খুলনা শিপইয়ার্ড এর উর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তা এবং গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৩ মে পায়রা সমুদ্র বন্দরের জন্য দুটি শক্তিশালী টাগবোট তৈরির কিল লেয়িং অনুষ্ঠিত হয়। টাগবোট দুটির ক্ষমতা হবে ৭০ টন বিপি (বোলার্ড পুল)। কাজ শেষ হলে এ দুটোই হবে বাংলাদেশে এ যাবৎকালে নির্মিত সবচেয়ে বেশি বোলার্ড পুল ক্ষমতাসম্পন্ন টাগবোট। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ টাগ বোট দুইটিতে অত্যাধুনিক মেশিনারী ও যন্ত্রপাতি সংযোজিত করা হবে। এটা আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় ও বন্দরসমূহে যাতায়াত করতে সক্ষম। টাগ বোটসমূহ বন্দরে আগত যে কোন জাহাজের বাথির্ং/আন বার্থিং, টোউ, পুশ/পুল অপারেশন ছাড়াও ফায়ার ফাইটিং, অন্য জাহাজের দুর্ঘটনাকালীন সহযোগিতার ইত্যাদি জরুরি কাজ সম্পাদনে ব্যবহৃত হবে। বোট দুইটি বন্দরের মাদার ভেসেল নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাসহ বিভিন্ন অফশোর সাপোর্ট কার্যাবলী সম্পাদনে সক্ষম হবে, যা বন্দরের সক্ষমতা বহুগুণ বৃদ্ধি করবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন