শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সারা বাংলার খবর

দেশের প্রথমবারের মত ‘ল্যান্ডিং ক্রাফট ট্যাংক’ নির্মান কাজের সূচনা করল খুলনা শিপইয়ার্ড

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২২, ৫:১৬ পিএম

দেশে প্রথমবারের মত সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ ৩টি ‘ল্যান্ডিং ক্রাফট টাংক’এর নির্মান কাজের সূচনা হল খুলনা শিপইয়ার্ডে। বুধবার দুপুরে খুলনা শিপইয়ার্ডের সবুজ চত্তরে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর জন্য এ ধরনের ৩টি ল্যান্ডিং ক্রাফট ট্যাংক তৈরীর আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন খুলনা এরিয়া কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মোহম্মদ আনোয়ার হোসেন-এনজিপি, পিসিজিএম, এনডিসি, পিএসসি-বিএন। খুলনা শিপইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর এম শামসুল আজিজ-এনজিপি, পিএসসি-বিএন,এর সভাপতিত্বে এ ‘কিল লেয়িং’ অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানটির জিএমবৃন্দ ছাড়াও উর্ধতন সামরিক ও বেসমরিক কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতে মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনার পরে প্রধান অতিথি ও সভাপতি এসব এলসিটি’র মূল হালে হাতুড়ী পিটিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিল-লে’র মাধ্যমে নির্মান কাজের সূচনা করেন। দেয়া মোনাজাতের মাধ্যমে এসব নৌযান নির্মানে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমীনে রহমত কামনা করা হয়।

এসব ‘ল্যান্ডিং ক্রাফট টাংক’এর নির্মান কাজের গৌরব অর্জনের মাধ্যমে খুলনা শিপইয়ার্ড দেশের নৌ নির্মান শিল্পে নতুন মাইল ফলকে পৌছতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন নৌ বিশেষজ্ঞগন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইংল্যান্ডের ক্লাসিফিকেশন সোসাইটি ‘লয়েডস রেজিস্ট্রার’এর নীতিমালা অনুসরন করে এসব সমর নৌযান তৈরী হচ্ছে বলে খুলনা শিপইয়ার্ডের দায়িত্বশীল মহল জানিয়েছেন।
প্রায় ৩২০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিতব্য এসব সমর নৌযান বিদেশ থেকে আমদানী করলে কয়েকগুন বেশী অর্থ ব্যায় হত। আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমা ছাড়াও দেশের উপক’লীয় ও অভ্যন্তরীণ নদ-নদীসমুহে যেকোন পরিস্থিতিতে সমর সরঞ্জাম সহ দূর্যোগকালীন সময়ে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে ত্রান ও উদ্ধার কাজেও অংশ নেবে এসব এলসিটি ট্যাংক। ২৩০ ফুট দৈর্ঘের এসব সমর নৌযান একই সাথে ৬টি করে মাঝারী মানের ‘ট্যাংক’ বা ৫টি মাঝারী মানের ‘আর্টিল্যারী গান ভেহিকেল’ অথবা ১২টি করে ‘এপিসি’/ ৮টি সামরিক ট্রাক পরিবহনে সক্ষম হবে। শান্তিকলীন সময়ে এসব নৌযান ‘লজিস্টিক শিপ’এর ভ’মিকা পালনের পাশাপাশি উপক’লীয় এলাকায় মানবিক সহায়তা সহ ত্রান সামগ্রী ও উদ্ধার কর্মী পরিবহন করতে পারবে।
প্রায় ৩০ ফুট প্রস্থ নৌযানগুলেতে আমেরিকার ‘ক্যাটারপিলার’ ব্রান্ডের ২ হাজার ২৫০ অশ^শক্তির ২টি করে মূল ইঞ্জিন ছাড়াও জার্মেনীর ‘জেডএফ’ ব্রান্ডের গিয়ার বক্স সংযোজন কর হচ্ছে। প্রতিটি নৌযানে ৩৪০ কেভিএ দুটি করে মূল জেনারেটর ছাড়াও ১৬৫ কেভিএ আরো ১টি করে স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর থাকছে।
এসব ল্যান্ডিং ক্রাফটের প্রাথমিক কাজ হবে যে কোন যুদ্ধকালীন সময়ে দেশের উপক’লীয় উভচর অভিযান পরিচালনায় যুদ্ধ ট্যাংক, এপিসি সহ সাপোর্ট ইউনিট ও ল্যান্ডিং ফোর্স পরিবহন করা। এসব নৌযানে ইতালীর তৈরী ২.৫ টন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি করে ডেক ক্রেন, সুয়েজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট,ওয়েলি ওয়াটার সেপারেটর ছাড়াও জাইরো কম্পাস, ম্যাগনটিক কম্পাস, র‌্যাডার, ইকোÑসাউন্ডার, এআইএস, জিপিএস এবং সার্বক্ষনিক যোগাযোগের জন্য ভিএইচএফ সেট ছাড়াও ‘লইফ সেভিং’ ও ‘ফায়ার ফাইটিং ইকুইপমেন্ট’ সংযোজন করা হবে। ঘন্টায় ১৫ নটিক্যাল মইল বেগে ছুটে চলতে সক্ষম এসব সমর নৌযানে ৬০ জন নৌসেনা নিযুক্ত থাকবে বলে জানা গেছে।
আন্তর্জাতিক মান নির্ণয় প্রতিষ্ঠান ‘আইএসও’র সনদপ্রাপ্ত খুলনা শিপইয়ার্ড ইতোপূর্বে বাংলাদেশে নৌ বাহিনীর জন্য দুটি বড় মাপের এবং একাধীক মাঝারী মাপের যুদ্ধ জাহাজ সহ প্রায় ৮শ বিভিন্ন ধরনের বানিজ্যক নৌযান নির্মান ছাড়াও প্রায় আড়াই হাজার নৌযানের মেরামত ও পূণর্বাশন সাফল্যজনক ভাবে সম্পন্ন করেছে।
রুগ্ন ও বিক্রী তালিকাভ’ক্ত খুলনা শিপইয়ার্ডকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তরের পরে তার হ্রত গৌরব পুনরুদ্ধার করে এখন দেশের উন্নয়নের এক অনন্য অংশিদার। করোনা মহামারীর বিগত দুটি অর্থ বছরের সংকটকালীন সময়েও প্রতিষ্ঠানটি প্রায় ১৮৩ কোটি টাকা আয়কর ও ভ্যাট প্রদানের পরেও ১২৫ কোটি টাকা নীট মুনফা অর্জনে সক্ষম হয়েছে বলে জানা গেছে। এমনকি খুলনা শিপইয়ার্ডের ঘুরে দাড়ান দেখে একইভাবে রুগ্ন ও লোকশানী নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ড ও চট্টগ্রাম ড্রাইডক নৌ বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সবগুলো প্রতিষ্ঠানই ইতোমধ্যে লোকশান ও অব্যবস্থাপনাকে পেছনে ফেলে তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে।

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন