বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

জাতীয় সংবাদ

করোনা নিয়ন্ত্রণে থাকায় বাজেটে বরাদ্দ কমেছে

আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৫ জুন, ২০২২, ১১:৫৫ পিএম

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, গত অর্থবছরের তুলনায় ঘোষিত বেজেটে স্বাস্থ্যখাতে কম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এ খাতে থোক বরাদ্দ এবার কমেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, করোনা প্রতিরোধে হেলথের ব্লক ফান্ড গত বছর দশ হাজার কোটি টাকা ছিল। সেটা এবার পাঁচ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়েছে।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম ‘কেমন হলো স্বাস্থ্যবাজেট ২০২২-২৩’ শীর্ষক এই আােচনা সভার আয়োজন করে।

অন্যান্য মন্ত্রণালযের চেয়ে বাজেট বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পিছিয়ে বলে স্বীকার করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক সময় অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজের সমন্বয় করতে সময় বেশি লাগে। এর ফলে বাজেটের কিছুটা অংশ অব্যবহৃত থেকে যায়। প্রতিটি ক্রয় কার্যক্রমে আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ ছাড় করাতে হয়। সেখানে অনৈক সময়ের প্রয়োজন হয়। আমাদের প্রক্রিয়াগুলো দীর্ঘ, ঠিকাদার নিয়োগসহ নানা কারণে সময় বেশি লাগে। অনেক সময় ঠিকাদাররা কাঁচামালের দাম বাড়া ও কমার সাথে কাজের সময় নির্ভর করে।

জাহিদ মালেক জানান, অসংক্রামক রোগ নিযন্ত্রণ ও দেশে টিকা উৎপাদনের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। যাতে টিকা প্রয়োজন হলে দেশেই পাওয়া যায়। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিততে স্বাস্থ্য বাজেটের আকার বাড়ানোর প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের প্রফেসর সৈয়দ আবদুল হামিদ। তিনি বলেন, কিছু প্রকল্প সম্প্রসারণ ছাড়া স্বাস্থ্য বাজেটে নতুনত্ব নেই। বরাদ্দের বৃদ্ধি মূলত ক্রমবর্ধমান ব্যয়, ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট এবং মুদ্রাস্ফীতির ব্যবস্থা মেটাবে। করোনার মতো মহামারি মোকাবিলায় প্রস্তুতি ও সক্ষমতা বাড়াতেও বাজেটে বরাদ্দ রাখা হয়নি। তিনি বলেন, আগের বছরের বাজেটের তুলনায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ বাড়িয়ে পরের বছরের বাজেট তৈরি করতে হবে। অনেক খাতে বরাদ্দ বাড়লেও ব্যয়ের সক্ষমতা ও দক্ষতা নেই। এ কারণে বাজেট অব্যবহৃত থেকে যায়। এসব বিষয় সরকারকে বিবেচনায় নিতে হবে।

হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের বিশ্লেষণ বলা হয়, দেশের নাগরিকরা স্বাস্থ্য সেবা পেতে পকেট থেকে যে ৬৮ শতাংশ ব্যয় করেন, তারমধ্যে ওষুধ ও পচনশীল (এমএসআর) চিকিৎসা সামগ্রী কিনতে ব্যয় হয় ৬৭ শতাংশ। ৫ শতাংশ ব্যয় হয় ইমেজিং সেবা পেতে, ৭ শতাংশ ব্যয় হয় ল্যাবরেটরি সেবা পেতে, ইনপেশেন্ট কিউরেটিভ সেবা পেতে ব্যয় হয় ৮ শতাংশ এবং আউটপেশেন্ট কিউরেটিভ সেবা পেতে ব্যয় হয় ১৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস (বিএনএইচএ) এর ১৯৯৭ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তথ্যে দেখা যায়, বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ২ দশমিক ৩ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই বরাদ্দ মাথাপিছু পড়ে মাত্র ৪৫ ডলার। অন্যদিকে প্রতিবেশি দেশ নেপাল, ভারত, ভুটান এবং শ্রীলঙ্কায় যথাক্রমে বরাদ্দ ৫৮, ৭৩, ১০৩, এবং ১৫৭ ডলার। অর্থাৎ প্রতিবেশি দেশের মধ্যে সবচেয়ে কম বরাদ্দ নেপালের তুলনায় আমাদের বরাদ্দ ১৩ শতাংশ কম। তাই জাতীয় বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানো প্রয়োজন। যাতে রোগীদের পকেট থেকে ব্যয় ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ-স্বাচিপ মহাসচিব প্রফেসর ডা. এম এ আজিজ বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করেই এবারের বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য বাজেট যেহারে বাড়া প্রয়োজন ছিল তার তুলনায় কম বেড়েছে। তিনি বলেন, বরাদ্দকৃত বাজেট যথা সময়ে যাতে সঠিকভাবে ব্যয় করা যায় সেইদিকে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি বেসরকারি পর্যায়ের হাসপাতাল ক্লিনিক নিয়ন্ত্রনে আরও গুরুত্বরোপ করতে হবে। প্রয়োজনে পৃথক দপ্তর বা অধিদপ্তর করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টর্স ফারামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বগত বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রফেসর ডা. আহমেদুল কবির, পরিচালক (প্রশাসন) প্রফেসর ডা. মো. শামিউল ইসলাম, মেরি স্টোপস এর লিড এডভোকেসি মঞ্জুন নাহার প্রমুখ।##

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

এ সংক্রান্ত আরও খবর

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন