ঝিনাইদহ জেলা সংবাদদাতা ঃ মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করে দুই পা হারানো ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার নলভাঙ্গা গ্রামের কৃষক শাহানূর বিশ্বাসের ওপর হামলাকারী বখাটেদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কারাবন্দী করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। মঙ্গলবার সকালে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাাহ’র হাইকোর্ট বেঞ্চ একটি পত্রিকা উঁচু করে ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাসকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘দেখেছেন খবরটা। আমরা স্বপ্রণোদিত আদেশ দেবো’। তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল দাঁড়িয়ে আদালতে বলেন, ‘এফআইআর হয়েছে’। এ সময় আদালত বলেন, ‘ক্রিমিনাল মামলা তো হবেই। অ্যারেস্ট করবেন না। ঘুরে বেড়াবে যুবলীগ নেতা-নো’। পরে আদেশে আদালত বলেন, একটি জাতীয় পত্রিকায় ‘মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করাই অপরাধ? দুই পা গেছে, এখন ভিটেছাড়া হওয়ার ভয়’ সংবাদটি আদালতের দৃষ্টি গোচরীভূত হয়েছে। সংবাদটিতে প্রাথমিক তথ্য বিবরণী রুজু হওয়ার কথা রয়েছে। সে অনুসারে ৭২ ঘণ্টার ভেতর সকল আসামিকে কারাবন্দি (গ্রেফতার) করে আদালতকে ২৭ নভেম্বরের মধ্যে জানানোর জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। আদালত বিবাদী হিসেবে স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, কালীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নাম উল্লেখ করেন। একটি পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মেয়েকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দুই পা হারিয়েছেন শাহানূর বিশ্বাস। এখন ভিটে ছাড়তে হয় কি না, সেই ভয়ও পেয়ে বসেছে তাকে। ওই ঘটনায় প্রথমে মামলা নিতে চায়নি পুলিশ। পরে চেষ্টা-তদবির করে মামলা হলেও এখন আর আসামি ধরছে না পুলিশ। উল্টো শাহানূরের স্বজনদের হুমকি দিচ্ছে আসামিরা’। ঘটনাটি গত ১৬ অক্টোবরের ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানার নলভাঙ্গা গ্রামের। বখাটেরা শাহানূরকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে। শাহানূরের আত্মীয় মো. ইয়াকুব আলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলায় অভিযোগ করেন, আসামিরা প্রথমে লোহার শাবল দিয়ে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে দেয় শাহানূরকে। পরে হাতুড়ি ও ছেনি দিয়ে হাঁটুতে আঘাত করে। দলের অন্যরা লোহার রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পেটায়। এতে শাহানূরের মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়। ইয়াকুব সাতজনকে আসামি করে মামলা করেন। ১৬ জনকে আসামি করে দ্বিতীয় মামলাটি করেন ভাই মহিনূর। দুই আসামিকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও বাকিরা পলাতক’। ‘শাহানূর এখন জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (পঙ্গ হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন। পেশায় বর্গাচাষি শাহানূরের দুটি পা হাঁটুর ওপর থেকে কেটে ফেলতে হয়েছে। তার পায়ে এ পর্যন্ত মোট চারবার অস্ত্রোপচার হয়েছে, ২০ ব্যাগ রক্ত দিতে হয়েছে’। শাহানূরের স্ত্রী আরজিনা খাতুন বলেন, ‘আমার মেয়ে স্কুলে যায়। গ্রামের বখাটেরা ঝামেলা করে। আমি একটু সমাজের নেতাদের কাছে বিচার চেয়েছিলাম। তাইতে আমার স্বামীর এই অবস্থা করেছে। তিনি বলেন, মামলার এক নম্বর আসামি মো. কামাল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য। অন্য আসামিরা হলেন একই গ্রামের বিল্লাল হোসেন, জাহিদুল ইসলাম, ইমদাদুল ইসলাম, হাসান আলী, মোতালেব হোসেন ও টুকু মিয়া। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান আসামি কামাল নলভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা ও কাষ্টভাঙ্গা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। বাকি আসামিরাও আওয়ামী যুবলীগের ছত্রছায়ায় এলাকায় সন্ত্রাসী কাজের সাথে যুক্ত। শাহানূর বলেন, এক আসামির ভাই কালীগঞ্জের নলভাঙ্গায় গিয়ে তার বড় ভাই সামাউল বিশ্বাসকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন। এখন মেয়ের স্কুলে যাওয়া পুরোপুরি বন্ধ’। তিনি গ্রমে ফিরতে ব্যাকুল হয়ে পড়েছেন। কিন্তু তার ভয় এবার হয়তো তার গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন