দেশের জনস্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পরিবেশগত দূষণ ও খাদ্যে ভেজালের কারণে বাড়ছে নানা ধরণের অসুস্থতা। অন্যদিকে নকল ও ভেজাল ওষুধের শিকার হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি আরো বেড়ে যাচ্ছে। গত বুধবার ইনকিলাবে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দেশে অন্তত ৪০টি অসাধু চক্রের সক্রিয় তৎপরতায় ভেজাল ও নকল ওষুধ ছড়িয়ে পড়লেও ওষুধ প্রশাসন ও অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তেমন কোনো তৎপরতা নেই। ওষুধ গবেষণা ও উৎপাদন ও পেটেন্ট লাভ করতে বড় বড় নামি দামি কোম্পানি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ওষুধ শিল্পকে স্বয়ম্ভর ও আত্মনির্ভরশীল করে তুলতে সহায়ক ভ’মিকা পালন করলেও এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী অজ্ঞাত স্থানে নকল ওষুধের কারখানা গড়ে তুলে হুবুহু মোড়ক ও সিলমোহরে বাজারজাত করে দেশের ওষুধশিল্পকে চরম বিপাকে ঠেলে দিচ্ছে। এক শ্রেণীর অসাধু ফার্মাসী দোকানদার নামমাত্র মূল্যে এসব ওষুধ কিনে রোগীদের কাছে কোম্পানি মূল্যে বিক্রি করে মোটা অংকে লাভ করলেও নকল-ভেজাল ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এভাবে সাধারণ অসুস্থতা থেকে জটিল ও কঠিন রোগের সৃষ্টি হয়ে ভুল চিকিৎসায় মারা যাচ্ছে মানুষ।
সংবিধানে সংরক্ষিত মৌলিক মানবাধিকারের প্রশ্নে দেশের সব নাগরিকের বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে ওষুধ ও চিকিৎসা সেবা পাওয়ার অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। স্বাধীনতার একদশক পর ১৯৮২ সালে দেশে প্রথম জাতীয় ওষুধ নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। জাতীয় ওষুধ নীতিমালার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রথম দফায় বলা হয়, ‘সাধারণ মানুষ যাতে ক্রয়সাধ্য মূল্যে উপকারী, কার্যকর, নিরাপদ ও ভালো মানসম্পন্ন অত্যাবশ্যকীয় ও অন্যান্য ওষুধ সহজে পেতে পারে তা নিশ্চিত করা’। তবে সে নীতিমালার পূর্ণ বাস্তবায়ন কখনো দেখা যায়নি। সময়ের প্রেক্ষাপটে ২০০৫ সালে ১৯৮২ সালের ওষুধ নীতিমালা সংস্কার করা হলেও সেটাও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি। ইতিমধ্যে দেশ ওষুধশিল্পে স্বয়ংসম্পুর্ণ হয়েছে এবং দেশ থেকে বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশে ওষুধ রফতানিও হচ্ছে। তবে দেশের মানুষের জন্য স্বল্পমূল্যে মানসম্মত ওষুধ পাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত হয়নি। দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়, ওষুধ প্রশাসন , জনস্বাস্থ্য অধিদফতরের কার্যক্রম থাকলেও নকল, ভেজাল ও মানহীন ওষুধের রমরমা বিপণন ঠেকাতে তাদের কার্যক্রম তেমন কার্যকর ভ’মিকা রাখতে পারছে না। মাঝে মধ্যে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভেজাল ও নকল ওষুধের সাথে জড়িতদের আটক করা হলেও আইনের ফাঁক-ফোঁকড়ে জামিনে বেরিয়ে গিয়ে তারা আবারো একই অপকর্মে যোগ দেয় বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। ডিএমপি’র একজন অতিরিক্ত কমিশনারের মতে, নকল ও ভেজাল ওষুধের ঝুঁকি দেশে করোনার চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
গত কয়েক বছরে শুধুমাত্র ঢাকার মিটফোর্ড ওষুধের মার্কেট থেকেই শতাধিক কোটি টাকার নকল-ভেজাল ওষুধ জব্দ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সারাদেশেই এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। আটক হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে নকল ও ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপনণের সাথে জড়িত পুরো চক্রটিকে চিহ্নিত করে এদের তৎপরতা চিরতরে বন্ধ করা খুব কঠিন কিছু নয়। এ জন্য অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এন্টিবায়োটিক ও জীবনরক্ষাকারী মূল্যবান ওষুধগুলো বিশেষ ফর্মূলা ও গবেষণাগারে মাননিয়ন্ত্রণ ও পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের মধ্য দিয়ে বাজারজাত করা হয়ে থাকে। এসব মূল্যবান ওষুধ নকল ও ভেজাল কাচামালে নিজস্ব কারখানায় তৈরী করে নামিদামি ব্রান্ডের নামে বাজারজাত করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সেবাখাতে বড় ধরণের বিপর্যয়ের ফাঁদ তৈরী করা হয়েছে। মানহীন হাসপাতাল, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, ভুয়া সার্টিফিকেটধারী ডাক্তার-সার্জন এবং নকল ও ভেজাল ওষুধের কবলে অসহায় সাধারণ মানুষ। দেশের স্বাস্থ্য সেবাখাতের মত গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর এমন অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলতে পারে না। ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন ব্যবস্থাকে কঠোর নজরদারির আওতায় আনা জরুরি। ভেজাল ও নকল ওষুধ উৎপাদন ও বিপননের সাথে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সেই সাথে ওষুধ কোম্পানীগুলোর যথেচ্ছ ওষুধের মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ বন্ধ করতে হবে। অসাধু ডাক্তার ও ওষুধ ব্যবসায়ীর তৎপরতার উপর নজরদারি বাড়াতে হবে। ওষুধ প্রশাসনের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা, কর্মচারিদের জনবল ও তৎপরতা বৃদ্ধির কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন