অব্যাহত ভারি বৃষ্টিপাত আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারনে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। দু’দিনে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ইতিমধ্যে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তার সবকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। তিস্তার পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে ৩০টি চরের গ্রায় দেড় সহ¯্রাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ফসলি জমিসহ ঘর-বাড়ির চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন দুই নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা।
তিস্তা ছাড়াও ধরলা, দুধকুমর ও ঘাঘটসহ ছোট ছোট নদীগুলোর পানি হুহু করে বেড়ে চলেছে। বিশেষ করে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় চরাঞ্চলসহ নি¤œাঞ্চল সমূহ প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
শুক্রবার (১৭ জুন) সকাল ৬টায় তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি ৫২.৭৪ সেন্টিমিটারে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.৬০)। যা বিপৎসীমার ১৪ সেন্টিমিটার উপরে।
বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিস্তার পানি বৃদ্ধির ফলে লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, তাঁতিপাড়া, হাতীবান্ধার গড্ডিমারী, দোয়ানী, বাঘের চর, ফকিরপাড়া ইউনিয়নের রানীগঞ্জের ২টি ওয়ার্ড, সিংঙ্গিমারি ইউনিয়নের ধুবনী, চর সিন্দুর্না ইউনিয়নের পাটিকাপাড়া, হলদিবাড়ী, ডাউয়াবাড়ী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, শৈইলমারী, নোহালী, চর বৈরাতি, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ও সদর উপজেলার ফলিমারীর চর খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুণ্ডা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এসব এলাকার লোকজন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন।
সিংঙ্গিমারী ইউনিয়নের পানিবন্দি আফজাল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে তিস্তার পানি হুহু করে বাড়ছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় বানের পানি ঢুকে পড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় এলাকার মানুষের চোখে ঘুম নেই। বসত ভিটে ও ফসলের ক্ষেত নিয়ে দুশ্চিন্তায় নির্ঘুম রাত কাটাতে হচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জাকির হোসেন জানিয়েছেন, তিস্তার পানি বাড়তে থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ২ শতাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার পূর্ব ছাতনাই, টেপা খড়িবাড়ী, চাপানি, ঝুনাগাছা ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ১৫টি চরের বসতবাড়িতে পানি উঠেছে।
টেপা খড়িবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ময়নুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন থেকে অব্যাহত বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তার পানি বাড়তে থাকে। পানি বাড়ায় তিস্তার চরাঞ্চল ও নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোতে ইতিমধ্যে বানের পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক’শ পরিবার।
তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, কচুয়া ও আলমবিদিতর ইউনিয়নসহ আরও কয়েকটি ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়েছে। অনেক স্থানে ঘর-বাড়িতে পানি উঠেছে। রবিশস্যসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। অনেক পুকুর পানিতে ডুবে যাওয়ায় মাছ ভেসে গেছে।
এছাড়া, জেলার কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার চরাঞ্চলসহ নি¤œাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পড়েছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আসফা উদ দৌলা জানিয়েছেন, উজানের ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যারেজের সবকটি গেট খুলে দেয়া হয়েছে।
তিস্তা ছাড়াও ধরলা, দুধকুমর, ঘাঘট ও যমুনেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে চলেছে। ধরলা নদীর পানিও বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। অনেক স্থানে ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গেছে।
ভোগডাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সাইদুর রহমান জানিয়েছেন, ধরলার পানি বৃদ্ধির ফলে ২০টি গ্রামে বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। এতে করে এসব গ্রামের প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রশাসনকে পানিবন্দি লোকদের তালিকা দেয়া হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্ল্যাহ আল মামুন জানিয়েছেন, ধরলার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে ধরলার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত ছিল এবং ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৭ সেঃ মিঃ ও কাউনিয়া পয়েন্টে ৫ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। রাতে আর পানি বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন পাউবো এবং এলাকাবাসী।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন