দেশ এখন বিদ্যুতে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সরকার শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিয়েছে। চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। তবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে যে ধরনের উন্নত সঞ্চালন লাইনের প্রয়োজন, তা পর্যাপ্ত না থাকায় সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে। এতে বিদ্যুতের অপচয় হওয়ারও কথা বলা হচ্ছে। সঞ্চালন ব্যবস্থা যদি দুর্বল ও অপর্যাপ্ত হয়, তাহলে বিদ্যুৎ সেবা ও ঘরে ঘরে পৌঁছানোর লক্ষ্য ব্যহত হতে বাধ্য। এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে, সঞ্চালন লাইন আধুনিক ও সম্প্রসারিত করার প্রক্রিয়া চলছে। অন্যদিকে, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুতের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উস্মা প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লে দাম বৃদ্ধির কারণ থাকতে পারে না। বিদ্যুতের অপচয় নিয়ে নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা রয়েছে। অবৈধ লাইন থেকে শুরু করে সিস্টেম লসের কারণে বিদ্যুৎ খাত বরাবরই অপচয়ের শিকার হচ্ছে। এই অপচয়, সিস্টেম লস ও চোরাই লাইন না বন্ধ করে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট কাটা হচ্ছে। আবার যেসব বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্র কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে না, সেগুলোকে বসিয়ে বসিয়ে অর্থ দেয়া হচ্ছে। এ নিয়ে পর্যবেক্ষকরা বারবার বলেছেন যে, এগুলো বন্ধ করে দেয়া হোক। সরকার এ দিকে কোনো কর্ণপাত করছে না।
বিদুৎ খাতের সমস্যার অন্ত নেই। তবে গৃহস্থলি থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য যে ক্যাবল ব্যবহার করা হয়, সেগুলোর মানও যথাযথ নয় বলে গতকাল দৈনিক ইনকিলাবের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত ভয়ংকর। প্রায়ই বিদ্যুতের শর্ট সার্কিটের কারণে যে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে, তা এই নিম্নমানের ক্যাবলের কারণেই ঘটে থাকে। নিম্নমানের ক্যাবল ব্যবহারের কারণে বিদ্যুৎ লাইন এখন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। বিদ্যুৎ প্রবাহের জন্য বিভিন্ন ধরনের ট্রান্সমিটার, এসি-ডিসি ক্যাবলস, ওভারহেড কন্টাক্টর, সুইস, সুইসবোর্ড ও অন্যান্য উপকরণের প্রয়োজন। এগুলোর প্রায় শতভাগ উৎপাদন ও যোগান দিয়ে থাকে বেসরকারি বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এসব প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের লাইন দেয়ার সরঞ্জামাদির বেশির ভাগই নিম্নমানের। এগুলোই সর্বত্র ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে প্রায়ই ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটছে এবং মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ক্যাবল জাতীয় পণ্যের সঠিক মান যাচাই, বাছাই ও পর্যালোচনার ঘাটতি থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ইচ্ছামতো উৎপাদন করে চলেছে। অভিযোগ রয়েছে, পুরনো ক্যাবল গলিয়ে কিংবা ভাঙ্গারি দোকান থেকে সংগ্রহ করে নতুন করে বৈদ্যুতিক ক্যাবল ও অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, বড় অংকের ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিতেই অনেক প্রতিষ্ঠান এ ধরনের অনিরাপদ ও ভয়াবহ পন্থা অবলম্বন করে চলেছে। বৈদ্যুতিক ক্যাবল বিভিন্ন মাপ ও গ্রেডের হয়ে থাকে। এর মূল উপাদান তামা, অ্যালুমিনিয়াম ও প্লাস্টিক। তামা ও অ্যালুমিনিয়ামের তারের উপর প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে ক্যাবল তৈরি করা হয়। তবে বেশি লাভের আশায় অনেক প্রতিষ্ঠান বাজারের পরিত্যক্ত ক্যাবল সংগ্রহ করে তা রিসাইকেলের মাধ্যমে নতুন ক্যাবল তৈরি করছে। এ ধরনের ক্যাবলই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। টেম্পার কম থাকায় এসব ক্যাবল অল্পদিনেই পুড়ে কিংবা নষ্ট হয়ে যায়। এতে দুর্ঘটনা ঘটে। অসংখ্য কারখানায় নিম্নমানের ক্যাবল, সুইস ও অন্যান্য উপকরণ উৎপাদন করায় যারা উন্নতমানের ক্যাবল উৎপাদন করছে, তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছে না। লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছে।
বিদ্যুতের সরবরাহ লাইন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন হওয়ার বিকল্প নেই। উন্নত মানের ক্যাবল ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি উৎপাদন এবং বাজারজাত করার ক্ষেত্রে তদারকি করা বিএসটিআই-এর দায়িত্ব। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটির চরম গাফিলতি রয়েছে। তা নাহলে, নিম্নমানের ক্যাবল ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদিতে বাজার সয়লাব হয়ে যেত না। যারা বাসা-বাড়িতে এসব সরঞ্জামাদি ব্যবহার করে, তাদের পক্ষে সঠিক মান যাচাই করা সম্ভব নয়। তাদের নির্ভর করতে হয় ইলেকট্রিসিয়ান ও দোকানিদের ওপর। তাদের পরামর্শেই বৈদ্যুতিক লাইন বাসা-বাড়ি ও সব ধরনের প্রতিষ্ঠানে স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে নিরাপদ বিদ্যুৎ লাইন নিশ্চিত করা হচ্ছে কিনা, তা যাচাই করা সম্ভব হয় না। বলা যায়, নিম্নমানের ক্যাবল ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদির বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যেই মানুষ বসবাস করছে। এ পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে হবে। বিএসটিআইকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান নিম্নমানের ক্যাবল ও অন্যান্য বৈদ্যুতিক উপকরণ উৎপাদন করছে, তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেকোনো মূল্যে বৈদ্যুতিক ক্যাবল ও সরঞ্জামাদির যথাযথ মান নিশ্চিত করতে হবে।
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
মন্তব্য করুন