শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সম্পাদকীয়

চারদেশীয় সড়কে ভূটানের আপত্তি

| প্রকাশের সময় : ২৪ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, ভূটানের আপত্তির কারণে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পরও চালু করা যাচ্ছে না চারদেশীয় আন্তঃসড়ক যোগাযোগ। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটা করে বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল ও ভূটানের মধ্যে আন্তঃসড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালুর অংশ হিসেবে বাংলাবন্ধা স্থলবন্দর উদ্বোধন করা হয়েছিল। এখন দেখা যাচ্ছে, শেষ মুহূর্তে ভূটানের আপত্তির কারণে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা চালু  করা যায়নি। দায়িত্বশীল সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত ২০ নভেম্বর ভূটান সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠের আপত্তির মুখে চুক্তির রেটিফিকেশন প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। বাংলাদেশ ও নেপালকে ভূটান তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে না করলেও ভারতকে ঝুঁকি হিসেবে দেখছে। মনে করছে, এ ধরনের আঞ্চলিক সীমান্তে কিছু বিপন্ন প্রাণীর বাস রয়েছে। এই সড়ক বাস্তবায়ন করলে তাদের সেই আবাসস্থল বিপন্ন হতে পারে। পরিবেশগত ঝুঁকির বাইরেও ভূটান মনে করে, দেশটিতে ভারতীয় যানবাহন চলাচল শুরু হলে যে চাপ বাড়বে তা তাদের বর্তমান সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এদিকে বাংলাদেশ অংশের অবকাঠামো উন্নয়নেরও কিছু কাজ শুরু বা শেষ করা যায়নি। ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী রামগড়ে ফেনী নদীর উপর সেতু নির্মাণের টাকা না পাওয়ায় সেতুনির্মাণ করা যায়নি। এছাড়া আখাউড়া থেকে আশুগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের ৫০ কিলোমিটার ভারতীয় অর্থায়নে হওয়ার কথা থাকলেও সেটিও অর্থের অভাবে শুরু করা যায়নি। এ প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহন ও সেতু  বিভাগের যুগ্ম সচিব দৈনিকটিকে জানিয়েছেন, বিষয়টি এখনো সরকারিভাবে তাদের কাছে আসেনি। তবে ঘটনা সত্যি। আনুষ্ঠানিকভাবে এটি হাতে পাওয়ার পর সরকারি উচ্চপর্যায়ের কূটনৈতিক চ্যানেলে আলাপ-আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
চারদেশীয় সড়ক যোগাযোগে ভূটানের আপত্তির বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। বিদ্যমান বাস্তবতায় বিষয়টি এড়িয়ে যাবার নয়। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ভূটান আস্থার যে সংকটের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছে, তা গভীর বিবেচনায় নেয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ভূটান আমাদের চেয়েও ভারতের সাথে বেশি ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশ হিসেবে পরিচিত। ভূটান উল্লেখ করেছে, তার পরিবেশ এবং সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বাংলাদেশেও ভারতীয় যানবাহনের ক্ষতিকর দিক এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ইতোমধ্যে ভারতীয় ভারী যানবাহন চলাচলের কারণে আমাদের রাস্তা-ঘাটের কী করুণ দশা হয়েছে তা কারো অজানা নেই। অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনজনিত সমস্যার কথা সম্প্রতি মন্ত্রীও উল্লেখ করেছেন। এধরনের সড়ক যোগাযোগের মধ্যে অর্থনৈতিক সুবিধা অর্থাৎ ট্রন্সশিপমেন্ট ফি পাওয়ার যে লাভজনক ব্যাপারটি রয়েছে বাংলাদেশ তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে, পরিবেশের যে প্রসঙ্গ ভূটান তুলেছে সেটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। কার্যত, ভারতের সাথে সম্পর্ক রক্ষার বিবেচনায় সম্পর্কের ভেতর-বাইরের বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে ভাববার রয়েছে বলেই হয়তো ভূটানের পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য এই সড়ক যোগাযোগের বিরোধিতা করেছে। বিষয়টি বোধকরি ভারতেরও অজানা নয়।
আধুনিক যুগকে বলাই হয় যোগাযোগের যুগ। এক দেশের সাথে অন্য দেশের যোগাযোগ বৃদ্ধিকে নেতিবাচকভাবে দেখার সুযোগ নেই। গোটা ইউরোপ এখন যোগাযোগে আবদ্ধ। সেখানে এ নিয়ে বোঝাপড়াতে কোন সমস্যা নেই। এসব ব্যাপারে প্রতিদিনই আগ্রহ প্রকাশ করছে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করছে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এ অঞ্চলের উঠতি পরাশক্তি ভারতের আচরণে সুপ্রতিবেশীসুলভ নয়। গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের সাথে তার স্বার্থ রক্ষার্থে সবরকম আয়োজন করলেও বাংলাদেশের স্বার্থ বিন্দুমাত্রও রক্ষা হয়নি। এমনকি বাংলাদেশের জীবনমরণ সমস্যা পানির ব্যাপারটিও ভারত বিবেচনাতে নেয়নি। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রতিবেশীর সাথে সুসম্পর্ক রাখা ঐতিহাসিকভাবে অপরিহার্য হলেও ভারত এ ব্যাপারে কেবল পাবার আশাই করে, দেবার নয়। এটা কোনোভাবেই সম ও সুষ্ঠু আচরণ হতে পারে না। ভূটানের পার্লামেন্ট যে ঝুঁকির আলোচনা করেছে তা তার স্বার্থে করেছে। আমাদেরও বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। সে বিবেচনাতে এই চারদেশীয় সড়কের ভবিষ্যত নির্ধারণে আমাদের সবদিক ভেবে-চিন্তে এগুনো অতীব জরুরী। 

 

Thank you for your decesion. Show Result
সর্বমোট মন্তব্য (0)

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন